নারী পাচারকারী চক্রের ৩ নারী সদস্যসহ ৫ জন আটক
2015.07.07

সরকারীভাবে সৌদি আরবে নারী শ্রমিক পাঠানোর সুযোগ নিয়ে সক্রিয় হয়ে উঠেছে বিভিন্ন মানব পাচারকারী চক্র। বিভিন্ন গ্রাম থেকে নারীদের বিদেশে মোটা অঙ্কের চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে পাচার করছে তারা। এসব চক্রে নারী সদস্যও রয়েছে।
সোমবার তেমনই এক আন্তর্জাতিক নারী পাচারকারী চক্রের ৩ নারী সদস্যসহ ৫ জনকে আটক করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়। এ সময় পাচার হতে যাওয়া ৯ নারীকে উদ্ধার করা হয়। আটককৃত পাচারকারী দলের ৩ নারী সদস্যরা হলেন- শিল্পী আক্তার (২২), সীমা আক্তার মৌসুমী (১৯), রিনা বেগম (৩০)।
তুরাগ থানাধীন কামার পাড়ার ৬ নম্বর রোডের একটি বাড়ির তৃতীয় তলা থেকে এ তিন নারীকে আটক ও ৯ নারীকে উদ্ধার করা হয় বলে জানায় র্যাব।
তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে উত্তরা ১০ নম্বর সেক্টরের আল আতিফ বিডি ফার্ম থেকে ওই অফিসের ম্যানেজার আবদুল লতিফ (৪৫), অফিস সহকারী মো. শহিদুলও (৪৪) আটক হয়। তবে এ চক্রের মূল হোতা শাহিন খন্দকার পলাতক আছেন।
মঙ্গলবার দুপুরে আটক মানব পাচারকারীদের সংবাদ সম্মেলনে হাজির করা হয়। সেখানে র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান বলেন, “চক্রটি সরকার ঘোষিত সৌদি আরবে নারী পাঠানোর সুযোগকে কাজে লাগিয়ে প্রতারণা করে আসছিলো। তারা দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে দালালদের মাধ্যমে নারীদের বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে বিদেশে পাচার করে থাকে। এজন্য তারা প্রত্যেক নারীর কাছ থেকে ২০ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা নিয়ে থাকেন। ইতোমধ্যে তারা ৪ শতাধিক নারীকে সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশে পাচার করেছেন।
র্যাব জানায়, আটককৃতদের কাছ থেকে ১৯৫টি পাসপোর্ট, নগদ দুই লাখ ৫০ হাজার ১২৭ টাকা, ১৭ লাখ ৭৯ হাজার টাকার লেনদেনের ডকুমেন্ট, দুইটি মনিটর, দুইটি সিপিইউ, তিনটা প্রিন্টার, একটি ফ্যাক্স মেশিন, একটি ল্যাপটপ, একটি স্ক্যানার মেশিন, দুইটি ক্যাকুলেটর ও একটি ডিভিডি প্লেয়ার উদ্ধার করা হয়।
চক্রটি নারী সংগ্রহ ও পাচার কাজে খুলনায় নুরুল ইসলাম, ঢাকায় আবুল হোসেন, চট্টগ্রামে এনামুল এবং বগুড়ায় কামরুল নামে ব্যক্তিদের দায়িত্ব দিয়েছে। তাদের সঙ্গে আরও বেশ কয়েকটি চক্রের যোগাযোগ রয়েছে। তাদের খুঁজে বের করার জন্য অভিযান অব্যাহত আছে। আটককৃতদের আরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলে জানান মুফতি মাহমুদ।
এ বিষয়ে জনশক্তি রপ্তানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিজের (বায়রা) সভাপতি আবুল বাশার বেনারকে বলেন, “এসব পাচারকারী চক্র দীর্ঘদিন ধরে রিক্রুটিং এজেন্সি সেজে চাকরি দেওয়ার নামে নারী পাচার করে আসছে। তারা এসব নারীকে বিদেশে বিক্রি করে দেয়। অথচ আমরা যারা বৈধভাবে ব্যবসা করি তাদেরই দুর্নাম হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সজাগ থাকতে হবে এসব চক্রের বিরুদ্ধে। একটি দলকে ধরেই থেমে গেলে চলবে না। এসব পাচারকারী চক্রকে নির্মূল করতে হবে। তবেই বৈধ ব্যবসায়ীরা বৈধ পথে জনশক্তি রপ্তানি করতে পারবে।”
এই জনশক্তি রপ্তানিকারক আরো বলেন, “এসব চক্রের মাধ্যমে নারী পাচার হওয়ায় এখন বৈধ পথে যেতেও ভয় পাচ্ছে নারীরা। ফলে সৌদি আরবে গৃহ শ্রমিকদের বিরাট বাজার থাকা স্বত্বেও কর্মী সংকট চলছে। পাচারের সঙ্গে সম্পৃক্তদের দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির মাধ্যমে জনগণের মাঝে বৈধপথে বিদেশ যাওয়া সম্পর্কে আত্ম বিশবাস ফিরিয়ে আনা সম্ভব।”
কক্সবাজারে ২ ভারতীয় নারী পাচারকারী আটক
এর আগে রোববার কক্সবাজার শহর থেকে নারী পাচারের চেষ্টাকালে দুইজন ভারতীয় নারীকে আটক করেছে র্যাব। এ সময় তাদের কবল থেকে দুই নারীকে উদ্ধার করা হয়।
র্যাবের কক্সবাজার ক্যাম্পের অধিনায়ক মেজর আহমদ হোসেন মহিউদ্দিন জানান, ‘রোববার বিকেল সাড়ে ৪টায় কক্সবাজার শহরের লিংক রোড এলাকা থেকে উখিয়ার কুতুপালং এলাকার দুই নারীকে উদ্ধার করা হয়।’
তিনি জানান, পাচারের চেষ্টাকালে ভারতের দিল্লির হরিরামপুরের মৃত অনিল মোহন্তের স্ত্রী লক্ষ্মী মোহন্ত (৬০) ও পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার শক্করপুরের অতুল হালদারের মেয়ে পূজা হালদারকে (১৮) আটক করা হয়।
উদ্ধার হওয়া কুতুপালং এলাকার রাশেদা (২৮) ও জেসমিন (২০) জানান, “ভারতের দিল্লিতে মাছের ফ্যাক্টরিতে মাসে ৪০ হাজার টাকা বেতনে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে তাদের নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল এবং কুতুপালং এলাকার রাজ্জাক নামের এক যুবক তাদের তুলে দেয়”।
আটক ভারতের দুই নারী জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, দিল্লির লক্ষীনগরের একটি পতিতালয়ে এসব নারীদের বিক্রির জন্য তারা নিয়ে যাচ্ছিল। এর আগেও একই ভাবে আরো অনেক নারীকে তারা নিয়ে গেছে।
মেজর মহিউদ্দিন জানান, “এ ব্যাপারে বাংলাদেশে অবৈধভাবে অনুপ্রবেশ ও মানব পাচারের অভিযোগে মামলা করে ভারতের দুই নারীকে কক্সবাজার সদর থানায় সোপর্দ করা হয়”।