তিন বছরে ১৫ লাখ শ্রমিক নেবে মালয়েশিয়া, জানিয়েছে মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
2015.06.25
আগামী তিন বছরের মধ্যে মালয়েশিয়া বাংলাদেশ থেকে বিভিন্নখাতে পর্যায়ক্রমে ১৫ লাখ শ্রমিক নেবে, দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দাতুক সেরি আহমাদ জাহিদ হামিদী বৃহস্প্রতিবার এই তথ্য জানান।খবর বার্নামা ডটকমের।
তিনি বলেন, “আমরা আশা করছি শাওয়াল মাসে (১৭ জুনের পর) দুই দেশের মধ্যে এই নিয়ে একটি সমঝোতা স্মারক চুক্তি হবে। এই শ্রমিকরা বিভিন্নখাতে বিশেষ করে প্লান্টেশন কাজে শ্রম চাহিদা পূরন করবে।বাংলাদেশ থেকে আনা নতুন শ্রমিকরাই এই কাজ পাবে, তবে এখানে অবস্থানকারী অবৈধ শ্রমিকরা এই সুযোগ পাবে না। তাদেরকে ডিপোর্ট করা অব্যাহত থাকবে”।
আহমাদ জাহিদ আরো বলেন, “তবে অদক্ষ শ্রমিক নয়, বাংলাদেশি শ্রমিকদের আসবার আগে আধা-দক্ষ করে আনা হবে যাতে তারা মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে বিশেষ খাতগুলির চাহিদা মেটাতে পারে”।
তিনি আরো ধারনা দেন, মালোয়েশিয়ার নিয়োগকর্তাদের ৪টি শর্ত পূরণ করতে হবে।বাংলাদেশি শ্রমিকদের ইনসুরেন্স কাভারেজ দিতে হবে, কেন্দ্রীয়ভাবে হাউজিং-এর ব্যবস্থা করতে হবে, ব্যাংকের মাধ্যমে তাদের বেতন দিতে হবে এবং তাদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দিতে হবে।
এদিকে বাংলাদেশের প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রনালয় জানিয়েছে, আগামী এক বছরের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে কয়েক লাখ কর্মী নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে মালয়েশিয়া। মন্ত্রণালয়ের দাবি এই সংখ্যা পাঁচ লাখ। তবে এবার কেবল সরকারিভাবে নয় বেসরকারিভাবে শ্রমিক নিতে আগ্রহী দেশটি।
বুধবার কুয়ালালামপুরে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেনের সঙ্গে মালয়েশীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আহমাদ জাহিদ হামিদীর বৈঠক হয়। সেখানেই মালয়েশিয়ার পক্ষ থেকে এই আশ্বাস মিলেছে বলে বাংলাদেশের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব কাজী আবুল কালামের সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
এ বিষয়ে প্রবাসী কল্যাণ সচিব খন্দকার ইফতেখার হায়দার বেনারকে বলেন, “আগামী এক বছরে বাংলাদেশ থেকে পাঁচ লাখ কর্মী নিতে আগ্রহী মালয়েশিয়া। এ বিষয়ে ঈদের পর পরই ভিন্ন একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হবে।”
বাংলাদেশের জনশক্তি রপ্তানির অন্যতম বাজার মালয়েশিয়া। তবে ২০০৯ সালে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেওয়া বন্ধ করে দেয় দেশটি। দীর্ঘ কূটনৈতিক যোগাযোগের পর ২০১২ সালের ২৬ নভেম্বর দুই দেশের মধ্যে সরকারিভাবে কর্মী নেওয়ার (জিটুজি) চুক্তি হয়। এরপর মালয়েশিয়া যাওয়ার জন্য সারাদেশ থেকে ১৪ লাখ ৫০ হাজার লোক নিবন্ধন করে। কিন্তু গত তিন বছরে মাত্র সাড়ে সাত হাজার কর্মী নিয়েছে দেশটি।
সংশ্লিষ্টদের দাবি, এই সময়ে সরকারিভাবে শ্রমিক পাঠানো না গেলেও ছাত্র ও পর্যটক সেজে অন্তত এক লাখের মত লোক দেশটিতে গিয়েছে। বঙ্গোপসাগর দিয়ে সাগরপথে মালয়েশিয়ার উদ্দেশে যাত্রা করেছে দেড় লাখ।
সম্প্রতি থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ায় গণকবর আবিষ্কার এবং এ নিয়ে আন্তর্জাতিক বিশ্বে তোলপাড় হওয়ার পর আবারও বেসরকারিভাবে কর্মী নেওয়ার প্রস্তাব দেয় মালয়েশিয়া। সে বিষয়ে আলোচনা করতেই প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেনের নেতৃত্বে সাত সদস্যের একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল মঙ্গলবার মালয়েশিয়া যান।
এদিকে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় জানায়, সরকারিভাবে বিদেশ যেতে আগ্রহীদের নিবন্ধিত তথ্যভান্ডার থেকেই বাছাই করে নতুন পাঁচ লাখ কর্মী নেবে মালয়েশিয়া। এছাড়া বেসরকারিভাবে মালয়েশিয়ায় যেতে আগ্রহী ব্যক্তিদের অনলাইনে আবেদন করতে হবে। প্রত্যেক শ্রমিককে প্রাথমিকভাবে তিন বছরের জন্য নিয়োগ দেওয়া হবে। পরে তা আরো এক বছর বৃদ্ধির সুযোগ থাকবে। সরকারের সংস্থা এ নিয়োগ-প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করবে।
বেসরকারি পর্যায়ে এভাবে শ্রমিক নিয়োগের প্রক্রিয়াকে বিজনেস টু বিজনেস (বিটুবি) হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এ চুক্তি করতে শীঘ্রই মালয়েশিয়ার একটি প্রতিনিধি দল প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রীর আমন্ত্রণে ঢাকা সফর করবে। তাদের সফরের পরই কর্মী পাঠানোর বিষয়ে মালয়েশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের একটি চুক্তি হবে।
প্রবাসী কল্যান সচিব বলেন, সম্প্রতি থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ায় গণকবর আবিষ্কার এবং সমুদ্র পথে বিদেশ যাওয়ার বিষয়টি মালয়েশিয়াকে নাড়া দিয়েছে। এ কারণে তারা বাংলাদেশ থেকে আরো শ্রমিক নিতে সম্মত হয়েছে”।
মালয়েশিয়ার এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে জনশক্তি রপ্তানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিজ (বায়রা)। দীর্ঘদিন পরে আবারও অন্যতম বৃহত এ শ্রম বাজারে শ্রমিক পাঠানোর অনুমতি পেয়ে নতুন করে ব্যবসার সুযোগ বাড়ল বলে মনে করেন তারা।
এ বিষয়ে সংগঠনটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এএইচএম গোলাম কবীর বেনারকে বলেন, “জনশক্তি রপ্তানিকারকদের জন্য এটা বিরাট সুসংবাদ। দীর্ঘ সময় ধরে মালয়েশিয়া শ্রমিক নেওয়া বন্ধ রাখে। এরপর বাজারটি খুললেও ‘জিটুজি’র অজুহাতে রিক্রুটিং এজেন্সি গুলোকে বঞ্চিত রাখা হয়”।
জিটুজি’র আওতায় স্বল্প সংখ্যক শ্রমিক পাঠানোর বিষয়ে তিনি বলেন, “সরকার বারবার বলে এসেছে মালয়েশিয়ায় শ্রমিকের চাহিদা নেই। কিন্তু অবৈধ পথে যারা গেছে তারা কোন না কোন কাজ জুটিয়েছে। তাছাড়া চাহিদা না থাকলে দেশটি আবার বেসরকারিভাবে শ্রমিক নেওয়ার চুক্তি কেন করবে”।
তবে রপ্তানির ক্ষেত্রে নিবন্ধিত তথ্য ভান্ডার থেকে শ্রমিক নেওয়ার বিষয়ে কিছুটা সমস্যার কথা জানান এই বায়রা সদস্য।
এদিকে অভিবাসী কর্মী উন্নয়ন প্রোগ্রামের (ওকাপ) নির্বাহী পরিচালক ওমর ফারুক বেনারকে বলেন, “দীর্ঘদিন পরে মালয়েশিয়ার বাজার নিয়ে সরকারের এ উদ্যোগ প্রসংশনীয়। বৈধভাবে যাওয়ার পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অবৈধ পথে বিদেশগামীদের সংখ্যা বেড়ে যায়। যার ফলশ্রুতিতে মানব পাচার আজ মহামারি আকার ধারণ করেছে। অবৈধ পথে বিদেশ যাওয়া রোধ করতে বৈধ পথে শ্রমিক রপ্তানি বাড়াতে হবে। একইসঙ্গে রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোও যাতে প্রতারণা করার সুযোগ না পায় সে বিষয়টি অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে সরকারকে মনিটরিং করতে হবে।”