বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নেওয়ার ক্ষেত্রে বিশেষ শর্ত দিয়েছে কুয়েত
2016.09.07
বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নেওয়ার ওপর আবারও নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের তেলসমৃদ্ধ দেশ কুয়েত। দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিটিজেনশিপ অ্যান্ড পাসপোর্ট বিভাগের আন্ডার সেক্রেটারি অ্যাসিসট্যান্ট শেখ মাজেন আল-জারা আল-সাবাহ গত সোমবার এই ঘোষণা দেন বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে কুয়েত টাইমস।
তবে বাংলাদেশ সরকার বলছে, কোনো ধরনের নিষেধাজ্ঞার কথা আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো তাঁরা জানে না। তবে তাঁদের মতে, সব ধরনের শ্রমিক নেওয়ার ওপর নয়, শুধু মাত্র পুরুষ গৃহকর্মী নিয়োগের বিষয়ে এক ধরনের বিশেষ অনুমতির শর্ত দিয়েছে কুয়েত।
দীর্ঘ বিরতির পর কয়েকমাস আগে বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ শ্রম বাজার কুয়েত শ্রমিক নেওয়ার শর্ত শিথিল করলে কিছুটা আশার আলো দেখেছিলেন জনশক্তি রপ্তানিকারকেরা। এর ফলে শ্রম বাজারেও কিছুটা গতি ফিরে আসে। এরই মধ্যে নতুন করে আবার অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে।
তবে সৌদি আরব ও মালয়েশিয়া বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নেওয়া শুরু করলে কুয়েতের এ নিষেধাজ্ঞা বাংলাদেশের শ্রম বাজারে খুব বেশি প্রভাব ফেলবে না বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
তবে এটা দেশের ভাবমূর্তির জন্য ভাল সংবাদ নয় বলেও মনে করেন তাঁরা। কুয়েত হঠাৎ করে আগের নিষেধাজ্ঞা কেন বহাল করলো, তা খতিয়ে দেখার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা।
এদিকে শেখ মাজেনকে উদ্ধৃত করে কুয়েত টাইমস জানিয়েছে, গত সপ্তাহে কুয়েতে অবস্থানরত বাংলাদেশির সংখ্যা দু্ই লাখ ছাড়িয়েছে। এ কারণে দেশটিতে নতুন করে বাংলাদেশি প্রবেশের ক্ষেত্রে নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।
গত সাত মাস আগে চাকরিদাতার নিজের বাড়ি থাকা বাধ্যবাধকতাসহ বেশ কিছু শর্তে বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য বাজার উন্মুক্ত করে কুয়েত।
তবে নতুন করে আরোপিত নিষেধাজ্ঞা শিগগিরই তুলে নেওয়া হবে কি না, অথবা নতুন কোনো শর্ত দেওয়া হবে কি না সেসব বিষয়ে কিছু বলেননি শেখ মাজেন।
কুয়েতের এ নিষেধাজ্ঞা বিষয়ে জানতে চাইলে প্রবাসী ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানের অতিরিক্ত সচিব জাবেদ আহমেদ বেনারকে বলেন, “এ বিষয়ে আমরা এখনো কিছু জানিনা। কুয়েতের পক্ষ থেকে কিছু জানানো হয়নি। সেখানকার বাংলাদেশ দূতাবাসও এ বিষয়ে কিছু জানায়নি।”
বেনারের পক্ষ থেকে কুয়েতের বাংলাদেশ দূতাবাসে যোগাযোগ করা হলে খবরটি সঠিক নয় বলে জানানো হয়েছে। এ বিষয়ে দূতাবাসের কাউন্সিলর (শ্রম) আবদুল লতিফ খান বেনারকে বলেন, “আমরা যতটুকু শুনেছি এ খবরটা পুরোপুরি সঠিক নয়।”
এ বিষয়ে তিনি বলেন, “মূলত এখানে কোন কোম্পানীতে শ্রমিক নিয়োগ হলে কুয়েতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিতে হয়। সেটি বহাল আছে। শুধু পুরুষ গৃহকর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে এ অনুমতি নেওয়ার বিষয়টি বাতিল করা হয়েছিল। এখন সেটি আবারও বহাল করা হয়েছে। অর্থাৎ বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক আনতে হলে কুয়েতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিশেষ অনুমতি লাগবে।”
তিনি বলেন, “গৃহকর্মী আনার ক্ষেত্রে অনুমতি নেওয়ার বিষয়টি তুলে নেওয়ায় বাংলাদেশ থেকে ইচ্ছেমত গৃহকর্মী কুয়েতে আনা হয়েছে। এরপর তাদের রাস্তায় ছেড়ে দিয়েছে। এ কারণে কুয়েত ইমিগ্রেশন আবারও নিয়মটি কঠিন করেছে।”
দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতি সাপেক্ষে কুয়েতের বিভিন্ন কোম্পানিতে বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগের বিষয়টি বহাল রয়েছে বলে তিনি জানান।
জনশক্তি রপ্তানি প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭৬ সালে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশি শ্রমিকরা কুয়েত যাওয়ার সুযোগ পান। ২০০৭ সাল পর্যন্ত দেশটিতে মোট চার লাখ ৮০ হাজার বাংলাদেশি শ্রমিক চাকরি নিয়ে যান। ওই বছর বাংলাদেশি শ্রমিকদের বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগ তুলে শ্রমিক নেওয়া বন্ধ করে দেয় কুয়েত।
দীর্ঘদিনের চেষ্টার পর ২০১৪ সালে বাংলাদেশ থেকে আবারও শ্রমিক নিতে রাজি হয় কুয়েত। এ বছরে ২১ হাজারেরও বেশি বাংলাদেশি শ্রমিক চাকরি নিয়ে কুয়েতে গেছেন।
কুয়েত বাংলাদেশের অন্যতম শ্রম বাজার হলেও এ নিষেধাজ্ঞা শ্রমিক রপ্তানিতে খুব বেশি প্রভাব ফেলবে না বলে মনে করছেন জনশক্তি রপ্তানিকারকরা।
এ প্রসঙ্গে জনশক্তি রফতানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সির (বায়রা) সাবেক মহাসচিব আলী হায়দার চৌধুরী বেনারকে বলেন, “দীর্ঘদিন পরে বাজার উন্মুক্ত হলেও কুয়েতে খুব বেশি শ্রমিক পাঠানো হচ্ছিল—এমনটি নয়। দেশটিতে বড় কোন প্রকল্পও নেই। এ কারণে ওই সিদ্ধান্তে শ্রমবাজারে খুব বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না।”
তবে অল্প সংখ্যক হলেও বাংলাদেশ থেকে যেসব শ্রমিক যাচ্ছিল, সেটা বন্ধ হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেন তিনি। আলী হায়দার বলেন, সৌদি আরব ও মালয়েশিয়ার বাজার উন্মুক্ত হলে বাংলাদেশ থেকে জনশক্তি রপ্তানি অনেকটাই বেড়ে যাবে।