সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশি শ্রমিকদের উপর কড়া নজরদারি

ঢাকা থেকে শাহরিয়ার শরীফ
2016.05.04
2016-05-04যযযযযযযযয620.jpg সিঙ্গাপুরে কর্মরত বাংলাদেশি শ্রমিক।
অনলাইন

অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা আইনে সিঙ্গাপুরে থাকা আটজনের বিরুদ্ধে দেশটির সরকার দুই বছরের আটকাদেশ দিয়েছে। এ ছাড়া সিঙ্গাপুরের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আটক বাংলাদেশিদের সম্পর্কে নতুন তথ্য প্রকাশ করেছে।

এদিকে দেশে ফিরে আসা পাঁচ শ্রমিকের বিরুদ্ধে সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন ঢাকার অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম আলী মাসুদ শেখ। রামপুরা থানায় করা সন্ত্রাসবিরোধী আইনে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের পরিদর্শক মুনছুর আলী দশ দিনের রিমান্ড আবেদন করলে বুধবার আদালত সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

চার মাসের ব্যবধানে দু দফা জ​ঙ্গি সম্পৃক্ততার অভিযোগ ওঠায় সিঙ্গাপুরের স্বরাষ্ট্র ও জনশক্তি মন্ত্রণালয় এবং দেশটির বাংলাদেশ দূতাবাস শ্রমিকদের ওপর নজরদারি বাড়িয়েছে।

উল্লেখ্য, সিঙ্গাপুরে জঙ্গি সম্পৃক্ততার অভিযোগে ১৩ জনকে চিহ্নিত করা হয়েছে। এদের পাঁচজনকে ২৯ এপ্রিল দেশে ফেরত পাঠানো হয়। বাকি আটজন দেশটিতে আটক রয়েছেন।

সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মাহবুব-উজ-জামান বুধবার টেলিফোনে বেনারকে বলেন, “শ্রমিকেরা যেসব ভাড়া বাড়িতে একসঙ্গে থাকেন সেখানে আগে থেকেই পরিদর্শন করা হতো। এখন নজরদারি বাড়ানোর পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে।”

তিনি আরও বলেন, “আমরা প্রবাসী শ্রমিকদের উদ্দেশে বলতে চাই, আপনারা যে উদ্দেশে এসেছেন, সেই কাজটি করুন। অন্যদিকে মনোযোগ দেওয়ার দরকার নেই। কেউ এমন আচরণ করলে বিষয়টি দূতাবাসকে জানাতে সংশ্লিষ্টদের বলা হয়েছে।”

সিঙ্গাপুর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতি

সিঙ্গাপুরের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বুধবার প্রকাশিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, জঙ্গি সম্পৃক্ততার অভিযোগে মার্চের শেষ ভাগ ও এপ্রিলের শুরুর দিকে ১৩ জনকে আটক করা হয়েছিল। এ বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারকে আগেই তথ্য দেওয়া হয়।

মন্ত্রণালয় জানাচ্ছে, প্রবাসী এই শ্রমিকদের জঙ্গিবাদে যুক্ত থাকার অতীত ইতিহাস নেই। সিঙ্গাপুরে আসার পর তাঁরা ইন্টারনেট থেকে বিভিন্ন ভিডিও ফুটেজ দেখে ও প্রচারপত্র দেখে জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হন। এই শ্রমিকেরা তিন থেকে ১০ বছর আগে সিঙ্গাপুরে আসেন। পরে সেখানে ইসলামিক স্টেট অব বাংলাদেশ (আইএসবি) গঠন করেন। এই গোষ্ঠীর সদস্যরা প্রায়ই খোলা মাঠে বা পার্কে দেখা করতেন।

সিঙ্গাপুরের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এদের সম্পর্কে বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষকে জানায় এবং বাংলাদেশ সরকার প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে সিঙ্গাপুর সরকারকে সহযোগিতা করে বলে বিবৃতিতে জানানো হয়।

অভিযুক্ত ১৩ জনের সঙ্গে গত বছরের নভেম্বর-ডিসেম্বরে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো ২৭ জনের যোগসূত্র থাকার কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।

আটকাদেশ পাওয়া আটজন হলেন; শরিফুল ইসলাম(২৭), লিয়াকত আলী মামুন(২৯), মো. জাবেদ কায়সার হাজি নুরুল ইসলাম সওদাগর(৩০), রুবেল মিয়া (২৬), জামান দৌলত(৩০), ইসমাইল হাওলাদার সোহেল(২৯), সোহাগ ইব্রাহিম(২৭) ও রহমান মিনহাজুর(৩১)।

এই আটজনের মধ্যে আইএসবি প্রধান হিসেবে মিজানুর রহমানকে চিহ্নিত করা হয়। তাঁর সম্পর্কে দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তিনি ২০০৭ সাল থেকে বাংলাদেশ ও সিঙ্গাপুরে ​যাতায়াত করেছেন শ্রমিক হিসেবে। গ্রেপ্তারের সময় তিনি স্থানীয় একটি নির্মাণ প্রতিষ্ঠানে ড্রাফটসম্যানের কাজ করতেন। মিজানুরের মধ্যে পরিবর্তন আসতে শুরু করে ২০১৩ সালে। বাংলাদেশে থাকার সময় মিজানুরকে বাংলাদেশি এক নাগরিক আইসিস এর কর্মকাণ্ড সম্পর্কে জানায় ও উদ্বুদ্ধ করে।

ফেরত পাঁচ শ্রমিক রিমান্ডে

আদালত মিজানুর রহমান ওরফে গালিব হাসান (৩৮), রানা মিয়া পাইলট (২৯), আলমগীর হোসেন (৩১), তানজিমুল ইসলাম (২৪) ও মাসুদ রানা ওরফে সন্টু খানকে (৩১) সাতদিনের রিমান্ড দিয়েছেন।

ঢাকা মহানগর পুলিশের মুখপাত্র মনিরুল ইসলাম বেনারকে বলেন, “বাংলাদেশে যেসব শ্রমিককে ফেরত পাঠানো হয়েছে, তাদের সঙ্গে জ​ঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হওয়ার মতো কাগজপত্র উদ্ধার করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, আনসার আল ইসলামের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ  থাকতে পারে। জিজ্ঞাসাবাদের পর এ বিষয়ে জানা যাবে।”

শ্রমিকদের ওপর নজরদারি বাড়ল

সিঙ্গাপুরের নির্মাণ, জাহাজশিল্প ও প্রক্রিয়াজাতকরণ খাতে বাংলাদেশি শ্রমিকদের চাহিদা রয়েছে। শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে কাজ করছে এমন সংগঠনগুলো বলছে, একজন বাংলাদেশি শ্রমিক প্রতি ঘন্টায় দুই ডলারেরও কম উপার্জন করেন। কখনও কখনও তাঁরা সাপ্তাহিক ছুটিও কাটান না। পরিশ্রমী ও ভালো কর্মী হিসেবে তাদের সুনাম আছে। তবে পরপর দুটি ঘটনায় বাংলাদেশের শ্রমিকেরা উদ্বেগ-উৎ​কণ্ঠায় ভুগছেন।

পিপল ওয়ার্ল্ডওয়াইড কনসাল্টিংয়ের মালিক ডেভিড লিয়ং শীর্ষ সংবাদপত্র স্ট্রেইটস টাইমকে বলছেন, সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশি শ্রমিকদের চাহিদা কমেছে। জনশক্তি আমদানিকারক বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান বলেছে, তারা বাংলাদেশি শ্রমিক নিয়োগের ক্ষেত্রে বাড়তি যাচাই-বাছাই করবে।

জাহাজ শিল্পে যুক্ত একজন প্রকৌশলী মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, “আমরা সবসময় উৎ​কণ্ঠায় আছি। হয় তো আমাদের কাজের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে অনুমতিপত্র আর নবায়ন করা হবে না। হয় তো দেশে ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হবে।”

এ দিকে সিঙ্গাপুরের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও জনশক্তি মন্ত্রণালয় এখন বাংলাদেশি শ্রমিক নেওয়ার ক্ষেত্রে অনেক বেশি যাচাই-বাছাই করছেন বলে দেশটির শীর্ষ সংবাদপত্র স্ট্রেইটস টাইম প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। যেসব ভাড়া বাড়িতে বাংলাদেশি শ্রমিকেরা থাকছেন তাঁদের কাছে বিভিন্ন নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।