ইয়েমেনে আটকে পড়া বাংলাদেশিদের উদ্ধার চলছে

ঢাকা থেকে জেসমিন পাপড়ি
2015.04.08
BD-yemen ইয়েমেনে বাংলাদেশিরা ছাড়াও ভারতীয় ও পাকিস্তানিরা আটকা পড়েছে। চলছে তাদের উদ্ধার কাজ। ছবিতে কয়েকজন ভারতীয় পাকিস্তান হয়ে নয়াদিল্লিতে ইন্দিরা গান্ধী বিমান বন্দরে পৌছেছেন। ৮ এপ্রিল,২০১৫
এএফপি

ইয়েমেনে আটকে পড়া বাংলাদেশিদের উদ্ধার কাজ শুরু করেছে সরকার। ভারতের সহায়তায় ইতিমধ্যে ৪২ জন বাংলাদেশি নাগরিককে আফ্রিকার দেশ জিবুতিতে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এছাড়া বাকিদের ইয়েমেন থেকে নিরাপদে সরিয়ে আনতে বাংলাদেশের উড়োজাহাজ পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

ইয়েমেনের নিকটবর্তী জিবুতিতে অবস্থানরত ও কুয়েতে বাংলাদেশে দূতাবাসের কাউন্সেলর (রাজনৈতিক) এস এম মাহবুব আলম টেলিফোনে বেনার নিউজকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, ভারত সরকারের সহায়তায় বাংলাদেশের নাগরিকদের জিবুতিতে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। ভারতীয় বিমান এবং জাহাজে করে কয়েক দফায় এ পর‌্যন্ত ৪২ জন বাংলাদেশিকে জিবুতিতে নেওয়া হয়েছে। তবে এদের মধ্যে পাঁচজন পাকিস্তান নৌবাহিনীর জাহাজে করে এসেছেন। উদ্ধার হওয়া সকলকে জিবুতিতে দুটি পৃথক হোটেলে রাখা হয়েছে। দ্রুত বাংলাদেশে পাঠানোর প্রক্রিয়াও চলছে। ছয় জন শিশু ও সাতজন নারীসহ তারা সকলেই নিরাপদ এবং সুস্থ্য আছেন।

ইয়েমেনের বন্দর নগরী এডেন থেকেও ভারতীয় আরেকটি জাহাজে আরো কয়েকজন বাংলাদেশি জিবুতি আসছেন বলে জানান মাহবুব।

শিয়া-সুন্নী লড়াইয়ের মধ্যে এডেনে কর্মরত প্রায় ৬০-৭০ জন বাংলাদেশি আটকা পড়েছে বলে জানা যায়।

শিয়াপন্থী হাউথি বিদ্রোহীদের দমনের জন্য সৌদি আরবের নেতৃত্বে সুন্নী প্রধান কয়েকটি দেশ ইয়েমেনে সামরিক অভিযান চালাচ্ছে।  এর মধ্যই আটকা পড়েছে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের প্রবাসীরা।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, মধ্যপ্রাচ্যের এ দেশটিতে প্রায় তিন হাজার বাংলাদেশি রয়েছেন। তবে ইয়েমেনে অবস্থান করা বাংলাদেশিরা বলছেন এ সংখ্যা অন্তত: ১০ হাজার।

এ পর‌্যন্ত ৫৫৩জন বাংলাদেশি দেশে ফেরার জন্য নিবন্ধন করিয়েছেন বলে জানান মাহবুব আলম।

এদেরকে নিরাপদে ফিরিয়ে আনতে সানাতে তিন দিনের জন্য জরুরি বিমান অবতরনের অনুমতি পেয়েছে বাংলাদেশ।  জিবুতিতেও বিমান পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে। ইয়েমেনের আকাশ পথের নিয়ন্ত্রণ এখন সৌদি আরবের হাতে থাকায় সৌদি সরকারের কাছে সানাতে  বিমার অবতরনের অনুমতি চায় ঢাকা।

এ বিষয়ে সৌদি আরবে বাংলাদেশ দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স মোহাম্মদ আইয়ুব বেনার নিউজকে জানান, সৌদি সরকার সানাতে বাংলাদেশের বিমান অবতরনের অনুমতি দিয়েছে।

সৌদি দূতাবাসের কর্মকর্তা, কাউন্সিলর (রাজনৈতিক) মোশাররফ হোসেন জানান, আগামী ১২, ১৩ ও ১৪ এপ্রিল সানাতে বাংলাদেশের বিমান নেওয়ার অনুমতি দিয়েছে সৌদি সরকার। এখন ফ্লাইটের সময়সূচি নির্ধারণ করবে বাংলাদেশ। সরকার।

এদিকে বুধবারেই ভারত সানা থেকে উড়োজাহাজের মাধ্যমে নাগরিকদের উদ্ধার কাজ শেষ করবে বলে মঙ্গলবার এক টুইট বার্তায় জানায় ভারতীয় পররাষ্ট্র দপ্তর। এ কারণে যারা ছাড়তে চান তাদেরকে বুধবারেই ছাড়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। বাংলাদেশসহ মোট ২৬টি দেশের নাগরিকদের ইয়েমেন থেকে উদ্ধারের আবেদন পায় ভারত। অপর এক টুইটে ভারতসহ এসব দেশের নাগরিকদেরকে ইয়েমেনের ভারতীয় দূতাবাসে যোগাযোগের পরামর্শ দিয়েছেন ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সৈয়দ আকবরউদ্দিন।

জিবুতিতে অবস্থানরত কুয়েতের কাউন্সিরলর মাহবুব আলম আরো বলেন, ভারতের উড়োজাহাজ সানাতে উড়োজাহাজ পাঠানো বন্ধ করবে কিনা সেটি আমি এখনো নিশ্চিত নই। তবে এমনটি হলেও বাংলাদেশিদের উদ্ধার কাজ ব্যহত হবে না। কারণ, বাংলাদেশ নিজস্ব উড়োজাহাজ পাঠানোর প্রক্রিয়া চালাচ্ছে।

এদিকে যুদ্ধবিধ্বস্ত ইয়েমেন থেকে উদ্ধার হয়ে যেন নতুন করে জীবন ফিরে পেয়েছেন জিবুতিতে পৌঁছানো বাংলাদেশিরা। মঙ্গলবার সানা থেকে এয়ার ইন্ডিয়ার একটি ফ্লাইটে জিবুতিতে পৌঁছানো বাংলাদেশি নাগরিক প্রকৌশলী গোলাম মোস্তফা টেলিফোনে বেনার নিউজকে বলেন, প্রতিটি মুহুর্ত জীবন হারানোর শঙ্কায় কেটেছে। এই কয়েকটা দিন আমি এবং দেশে থাকা আমার পরিবারএক চরম উদ্বিগ্নতার মধ্য দিয়ে কাটিয়েছি।

তিনি বলেন, চারিদিকে বোমা, বিমান হামলার শব্দ। মনে হত এই বুঝি জীবনটা হারালাম। আর কখনো হয় ফেরা হবে না পরবিারের কাছে।

সানাতে একটি হোটেলে অবস্থান করতেন গোলাম মোস্তফা।  সেখানকার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে তিনি বলেন, এক সময়ে হোটেলটিও প্রায় লোক শূণ্য হয়ে যায়।  সার্ভিস দেওয়ার জন্যও কাউকে পাওয়া যেত না। আমার সঙ্গে থাকা চীনা, ভারতীয় এবং পাকিস্তানের নাগরিকরাও এক সময় তাদের দূতাবাসের সাহায্যে দেশে চলে যায়।

তখন আরো ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। কারণ, বাংলাদেশের কোন দূতাবাস নেই। একজন অনারারি কনসাল জেনারেল থাকলেও তিনি হঠাৎ অসুস্থ্য হয়ে মারা যেন। এ ঘটনায় আমিসহ অন্যান্য বাংলাদেশিরা আরো অসহায় হয়ে পড়ি। তখন নিজেরা নিজেরোই সংগঠিত হওয়ার  চেষ্টা করেছি।

সেখানে খাদ্য সংকটেও পড়তে হয়েছে উল্লেখ করে মোস্তফা আরো বলেন, যুদ্ধের কারণে কোন দোকানি-পাট খুলত না।  এক কথায় যেন এক মৃত্যুপূরী থেকে ফিরেছি।

আর এর জন্য তিনি বাংলাদেশ ও ভারত সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

দেশে গোলাম মোস্তফার স্বজন এনায়েত কবীর বেনার নিউজকে বলেন, দুলাভাই (গোলাম মোস্তফা) নিরাপদে জিবুতিতে পৌঁছেছেন শুনে যেন আমরাও জীবন ফিরে পেয়েছি। তা চিন্তায় প্রায় প্রতিটি রাত আমরা নির্ঘুম কাটিয়েছি।  মনে হত তার মত আমরাও একটা যুদ্ধাবস্থায় আছি।

ইয়েমেনে মোট কতজন বাংলাদেশি আছেন তার কোন সঠিক পরিসংখ্যান নেই। তবে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী ২০০৪ সাল থেকে এ পর‌্যন্ত উয়েমেনে তিন হাজার ছয়শ বাংলাদেশি গেছেন। অনেক বাংলাদেশি ওমান বা সৌদি আরবে যাওয়ার জন্য ইয়েমেনকে রুট হিসেবে ব্যবহার করেন। ইয়েমেনে বাংলাদেশের কোন দূতাবাস নেই। কুয়েতের বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমে দেশটির সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক রক্ষা করা হয়। তবে বাংলাদেশিদেরকে উদ্ধারের কাজ সমন্বয় করতে মাহবুব আলমসহ দুজন কর্মকর্তাকে জিবুতি পাঠানো হয়। তুরস্ক দূতাবাস থেকে সেখানে যোগ দের আরো দুইজন কর্মকর্তা।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।