বাংলাদেশ ও মার্কিন কর্মকর্তা: আল কায়েদার ভিডিওর সত্যতা যাচাই করা সম্ভব হয়নি

আশীফ এন্তাজ রবি, ওয়াশিংটন ও প্রাপ্তি রহমান, ঢাকা
2018.08.31
     সমকামীদের অধিকার নিয়ে কাজ করা জুলহাস মান্নানের কফিন হাতে বাংলাদেশি মুসলিমরা। ওই হত্যার দায় স্বীকার করে পরে আল কায়েদা ইন দ্য ইন্ডিয়ান সাবকন্টিনেন্ট (একিউআইএস) এর বাংলাদেশ শাখা আনসার-আল ইসলাম বিবৃতি দেয়। ঢাকা, এপ্রিল ২৬, ২০১৬
(এপি)

সম্প্রতি আল কায়েদা সমর্থিত জঙ্গিগোষ্ঠী বাংলায় যে ভিডিওটি প্রকাশ করেছে, সেটির সত্যতা সম্পর্কে বাংলাদেশ বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিশ্চিত হতে পারেনি। ভিডিওটি বাংলাদেশের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত হয়।

বাংলাদেশের একজন বিশ্লেষক বলেছেন, এ ধরনের ভিডিও জঙ্গিগোষ্ঠীগুলোর প্রচারণার মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার হয়ে থাকে।

বাংলা ভাষায় প্রচারিত ওই ভিডিওতে দাবি করা হয়েছে, আফগানিস্তানে সাত থেকে ১০ জনের একটি দল পর্বতের ওপর থেকে একটি স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে। তাদের দাবি, হামলার সময় ঘাঁটিতে আফগান ও মার্কিন বাহিনী উপস্থিত ছিল। ওই বাহিনীতে কমপক্ষে দুজনকে বাংলাদেশি বলে মনে হয়েছে।

ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে একজন ব্যক্তি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেছে তাদেরকে যারা এ জন্য অর্থের যোগান দিয়েছে এবং যারা তাদের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার চেষ্টা করছে।

তদন্তকারীরা বলেছেন, তাঁরা ১২ মিনিটের ওই ভিডিওটি দেখেছেন। বেনার নিউজকে এই তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের মুখপাত্র মাসুদুর রহমান।

“কিন্তু কোনো বাংলাদেশি আফগানিস্তানে গেছে এবং ভিডিও চিত্রে অংশ নিয়েছে এমন কোনো তথ্য আমাদের কাছে নেই,” তিনি বলেন।

“তারপরও আমরা ভিডিওটির সত্যাসত্য খতিয়ে দেখছি,” মাসুদুর রহমান বলেন।

মার্কিন সেনাবাহিনী বেনারনিউজের পাঠানো প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন।

“ভিডিওটি প্রসঙ্গে...এর সত্যাসত্য যাচাই করা যায়নি, যে ভিডিওতে দাবি করা হয়েছে এটি আফগানিস্তানে ধারণ করা হয়েছে বা হামলা হয়েছে মার্কিন বা কোয়ালিশন ফোর্সের দিকে,” ইউএস সেন্ট্রাল কমান্ডের কর্মকর্তা মেজর জশ টি জ্যাক ইমেইলে এই জবাব পাঠিয়েছেন।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গ্রুপ সাইট ইনটেলিজেন্স মুসলিম জঙ্গিগোষ্ঠীর অনলাইন প্রচারণায় নজর রাখে। গ্রুপটি বলছে, ভিডিওটি তৈরি করেছে আল-জিবাল মিডিয়া এবং এটি প্রচারের দায়িত্বে ছিল আন-নসর। আন-নসর দক্ষিণ এশিয়ায় আল-কায়েদার অঙ্গ সংগঠন আনসার আল-ইসলামের একটি শাখা।

আন–নসর প্রাথমিকভাবে আল-কায়েদা নেতৃবৃন্দের বক্তব্যের অনুবাদ বাংলায় প্রচার করে, এরপর ভিডিও লিঙ্কগুলো ২৪ আগস্ট প্রকাশ করে। এই লিঙ্কগুলো অনুসরণ করে ভিডিও দেখা যায়, সাইট ইনটেলিজেন্সের জ্যেষ্ঠ বিশ্লেষক অ্যাডাম রেইজম্যান জানান।

“যেহেতু ভিডিওটি প্রচারের সূত্র আন–নসর এবং আন–নসরের যে ধরনের যোগাযোগের ইতিহাস আছে, তাতে ভিডিওটি সঠিক বলে বিবেচনা করা যায়,” তিনি ইমেইলে বেনারনিউজকে বলেন।

“বাংলাদেশি জিহাদীদের কেন্দ্রে রাখা ও আফগানিস্তানে অপারেশনের এমন ভিডিও এর আগে কখনও প্রকাশ পায়নি। দেশের ভেতর জিহাদি কর্মকান্ড নিয়ে ডজন ডজন ভিডিও থাকলেও, তাদের যোদ্ধা হিসেবে দেখানো এবং এতো সরাসরি চেহারা দেখানোর ঘটনা নেই বললেই চলে,” অ্যাডাম বলেন।

তিনি আরও বলেন, আন-নসর বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের সমর্থক বহু মিডিয়া গোষ্ঠীর একটি।

তাঁর মতে, জিহাদি সম্প্রদায়ে বাঙালি ধারাভাষ্যকারদের উল্লেখযোগ্য উপস্থিতি আছে। শুধুমাত্র আল কায়েদা সমর্থিত জঙ্গি সংগঠন নয়, ইসলামিক স্টেট সমর্থিত জঙ্গি গোষ্ঠীর ক্ষেত্রেও এ কথা প্রযোজ্য।

ঢাকায় একজন বাংলাদেশি বিশ্লেষক বলেছেন, জঙ্গিগোষ্ঠীগুলো দলে জঙ্গিদের ভেড়াতে এ ধরনের ভিডিও ব্যবহার করে থাকে।

“যারা জঙ্গিবাদের সমর্থক তারা এই ভিডিওর মাধ্যমে অনুপ্রাণিত হতে পারে,” ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক এ এস এম আলি আশরাফ বেনার নিউজকে বলেন।

“তা ছাড়া আমরা ভিডিওতে এক ব্যক্তিকে দেখেছি অর্থের যোগানদাতাদের ধন্যবাদ জানাতে। এর মানে তারা অর্থকড়ি পাচ্ছে এবং একই সঙ্গে তারা অর্থদাতাদের আশ্বস্ত করতে চাচ্ছে যে, তাদের দেওয়া টাকা জিহাদে খরচ হচ্ছে,” তিনি বলেন।

সাম্প্রতিক বছরগুলোয় বাংলাদেশে ধর্মনিরপেক্ষ ব্লগার এবং সমকামীদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় যারা কাজ করছে তাদের চাপাতি দিয়ে কুপিয়ের হত্যার দায় স্বীকার করেছে আনসার আল ইসলাম। যদিও বাংলাদেশ সরকার ধারাবাহিকভাবে দেশটিতে আল-কায়েদা অথবা আইএসের উপস্থিতির কথা অস্বীকার করে আসছে।

ঢাকা থেকে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন কামরান রেজা চৌধুরী।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।