সীমান্তে হতাহতের ঘটনাগুলো যৌথভাবে তদন্ত করবে বিজিবি এবং বিএসএফ

ঢাকা থেকে জেসমিন পাপড়ি
2016.05.16
BGB-BSF-Meeting620.jpg বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এবং ভারতের বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্সের (বিএসএফ) মহাপরিচালক পর্যায়ের সম্মেলনের শেষ দিনে রাজধানীর পিলখানার বিজিবি সদর দপ্তরে যৌথ আলোচনার দলিলে স্বাক্ষর করেন দুই বাহিনীর প্রধান। মে ১৬, ২০১৬।
ফোকাস বাংলা

বাংলাদেশ ও ভারতের সীমান্তে হতাহতের ঘটনায় যৌথভাবে তদন্ত করবে দুই দেশের সীমান্ত রক্ষা বাহিনী বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। এ ছাড়া মাদক চোরাচালান ও নারী পাচার রোধেও যৌথ অভিযান পরিচালনা করবে উভয় দেশ।

প্রতিবেশী দেশ দুটির সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মহাপরিচালক পর্যায়ের ৪২তম সম্মেলনে এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সোমবার ঢাকায় বিজিবি সদর দপ্তরে ছয়দিন ব্যাপী এ বৈঠক শেষ হয়।

সম্মেলন শেষে যৌথ ঘোষণায় স্বাক্ষরের পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন বিজিবি ও বিএসএফ মহাপরিচালক। প্রায় আধঘণ্টাব্যাপী সংবাদ সম্মেলনের পুরোটা সময়জুড়েই ছিল সীমান্ত হত্যা প্রসঙ্গ।

মহাপরিচালক পর্যায়ের এই বৈঠক চলার মধ্যে গত শনিবার চুয়াডাঙ্গার জীবননগরের গোয়ালপাড়া সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে এক বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন। ওই ঘটনায় সাত বিএসএফ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

যৌথ তদন্ত করবে বিজিবি-বিএসএফ

বৈঠকে বিজিবির পক্ষে মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদ বাংলাদেশের ২৩ সদস্যের ও বিএসএফের পক্ষে কেকে শর্মা ভারতের ২১ সদস্যের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, মহাপরিচালক পর্যায়ের এবারের সম্মেলনটি ছিল সৌহার্দ্যপূর্ণ। তবে অন্যবারের মতো এবারও গুরুত্ব পায় সীমান্ত হত্যা।

বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদ বলেন, “সীমান্ত হত্যা শূন্যের কোটায় আনার চেষ্টা চলছে। এ বিষয়ে কাজও শুরু হয়েছে। এখন থেকে সীমান্তে যেকোনো হত্যা বা সহিংসতার ঘটনা ঘটলে, দুই দেশ যৌথভাবে তার তদন্ত করবে।”

কীভাবে এই তদন্ত অনুষ্ঠিত হবে জানতে চাইলে বিজিবি মহাপরিচালক বেনারকে বলেন, “যেকোনো ঘটনা ঘটলে বিজিবি ও বিএসএফ পক্ষের প্রতিনিধি দল ঘটনাস্থলে যাবে। বাস্তবে কী ঘটেছে উভয় পক্ষ তা জানবে।”

সংবাদ সম্মেলনে সংবাদকর্মীরা বিএসএফ মহাপরিচালকের কাছে ফেলানী হত্যার বিচারের সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে “বিষয়টি ভারতের উচ্চ আদালতে বিচারাধীন” মন্তব্য করে এ সম্পর্কে মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।

জানা যায়, এবারের যৌথ ঘোষণায় সীমান্তে চোরাচালান ও মাদক পাচার বন্ধ, দুই দেশের সন্ত্রাসীদের আশ্রয় না দেওয়াসহ বেশ কিছু বিষয়ে স্থান পেয়েছে।

সাত বিএসএফ সদস্য বরখাস্ত

গত শনিবার চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার নতুনপাড়া সীমান্তে বিএসএফ’র গুলিতে নিহত হয় বাংলাদেশি কিশোর শিহাব উদ্দিন।

ওই দিন বেলা ১১টার দিকে কয়েকজন মিলে গোয়ালপাড়া এলাকার একটি বাগানে আম পাড়তে গেলে তাদের চারজনকে ধরে মারধর করে বিএসএফ। সেখান থেকে পালিয়ে আসার সময় তাদেরকে লক্ষ্য করে গুলি করে বিএসএফ। শিহাবের পেটে গুলি লাগলে সে মারা যায়।

ওই ঘটনায় সাত বিএসএফ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে বলে বেনারকে জানান বিজিবি মহাপরিচালক আজিজ আহমেদ। বিএসএফ মহাপরিচালকই বিষয়টি তাঁকে নিশ্চিত করেন।

ব্রিফিংয়ে বিএসএফ মহাপরিচালক কেকে শর্মাও এ প্রসঙ্গে কথা বলেন। তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, “চুয়াডাঙ্গা সীমান্তে কিশোর হত্যার ঘটনাটি জানার পরপরই আমরা এ বিষয়ে তদন্ত শুরু করি। ওই হত্যার ঘটনায় প্রাথমিকভাবে বিএসএফের সাত সদস্য জড়িত থাকার প্রমাণ মিলেছে। এরই মধ্যে বিএসএফ থেকে তাঁদেরকে বরখাস্ত করা হয়েছে। আইন অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

সীমান্তে নিহতের সংখ্যা শূন্যে নামিয়ে আনতে নয়াদিল্লির অঙ্গীকারের পুনর্ব্যক্ত করে রোববার ঢাকার ভারতীয় দূতাবাস এক বিবৃতিতে জানায়, “ওই বাংলাদেশির মৃত্যু ঘটনা তদন্তে একটি আদালত গঠন করা হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে এমন সাতজন বিএসএফ জওয়ানকে তদন্তের স্বার্থে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।”

অন্তঃরাষ্ট্রিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রে মাইলফলক

সীমান্ত হত্যা বন্ধে দুদেশের যৌথ তদন্তের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন বিশ্লেষকেরা।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক মুহা. রুহুল আমিন বেনারকে বলেন, “এ সিদ্ধান্ত দুই দেশের আন্তরাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার ক্ষেত্রে মাইলফলক। তবে দুই দেশের নেতারা কতটুকু এটাকে সামনের দিকে এগিয়ে যাবে-সেটা দেখার বিষয়।”

তিনি বলেন, “নিকটতম প্রতিবেশী হিসেবে ভারত বাংলাদেশের মধ্যে স্বাভাবিকভাবে সুন্দর সম্পর্ক হওয়া উচিত। দুর্ভাগ্যজনকভাবে নানা কারণে সবসময় একটা তিক্ত অবস্থায় থাকে। তবে সাম্প্রতিককালে দুদশের সম্পর্কে  একটি ইতিবাচক গতিতে অগ্রসর হচ্ছে। এটা তারই প্রমাণ।”

সাতজন বিএসএফ বরখাস্তের বিষয়ে এই বিশ্লেষক বলেন, “কিছুদিন আগেও বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কে এমন বিষয় ‘কল্পনারও অতীত’ ছিল। এর মানে ভারতে যারা নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত আছে, তারা নিশ্চিতভাবেই দেশটির রাজনীতিবিদদের কাছ থেকে এ ধরনের সংকেত পেয়েছেন।”

তাঁর মতে, অতীতের মান্ধাতা আমলের চিন্তাভাবনা থেকে হয়তো ভারতের রাজনীতিবিদ, নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য এবং সংশ্লিষ্টরা বেরিয়ে এসেছেন।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।