রায় ফাঁসের অভিযোগে ফেঁসে গেলেন সাকা চৌধুরীর আইনজীবী
2016.09.15

মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়া সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেওয়া রায়ের খসড়া ফাঁসের ঘটনায় ফেঁসে গেলেন তার আইনজীবী এ কে এম ফখরুল ইসলাম। এই অভিযোগে তাকে ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
একই সঙ্গে ১০ লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ছয় মাসের কারাদণ্ডের রায় দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল। বাংলাদেশ সাইবার ক্রাইম ট্রাইব্যুনালের বিচারক কে এম শামসুল আলম গতকাল বৃহস্পতিবার এ রায় ঘোষণা করেন।
রায়ে সাকা চৌধুরীর স্ত্রী ফারহাত কাদের চৌধুরী ও ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরীকে খালাস দেওয়া হয়েছে। তবে আইনজীবীসহ পাঁচজনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়া হয়েছে।
এদের মধ্যে সাকা চৌধুরীর ব্যবস্থাপক মাহবুবুল হাসান, ফখরুল ইসলামের সহকারী জুনিয়র আইনজীবী মেহেদী হাসান, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কর্মচারী ফারুক আহমেদ ও নয়ন আলীকে সাত বছর করে কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল।
একই সঙ্গে তাদের প্রত্যেককে ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। জরিমানা অনাদায়ে তাদের আরও ছয় মাস করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর যুদ্ধাপরাধের রায় ফাঁসের ঘটনায় তার স্ত্রী ও ছেলের খালাসের রায় ‘খারাপ দৃষ্টান্ত’ হয়ে থাকবে বলে মন্তব্য করেছেন গণজাগরণ মঞ্চের মুখাপত্র ইমরান এইচ সরকার। “এটা অসম্পূর্ণ রায়। যারা প্রধান আসামি তাদের খালাস দেওয়া হয়েছে,” বেনারকে জানান ইমরান।
তিনি বলেন, “যে আইনজীবীদের মাধ্যমে রায় ফাঁস করানো হয়েছে, তাদের ব্যক্তিগত স্বার্থ ছিল না। তারা অর্থের বিনিময়ে রায় ফাঁস করেছেন। কিন্তু রায় ফাঁসের মূল হোতারা পার পেয়ে গেলেন।”
“সাকা চৌধুরীর স্ত্রী ও ছেলের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয় প্রমাণিত না হওয়ায় তাদের খালাস দিয়েছেন আদালত,” বেনারকে জানান সাইবার ক্রাইম ট্রাইব্যুনালের বিশেষ সরকারি কৌঁসুলি মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম।
তিনি বলেন, “এই রায়ের খসড়া ফাঁসে তার স্ত্রী ও ছেলে সুবিধাভোগী নন। তা ছাড়া এই দুজন ইলেকট্রনিক ডিভাইসের মাধ্যমে তা প্রকাশ করেছেন এমন কোনো সাক্ষ্যপ্রমাণ আসেনি বলে তাদের খালাস দিয়েছেন আদালত”।
২০১৩ সালের ১ অক্টোবর বিএনপির নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। তবে রায়ের আগেই তার স্ত্রী ও পরিবারের সদস্য এবং আইনজীবীরা রায় ফাঁসের অভিযোগ তোলেন।
তারা ‘রায়ের খসড়া কপি’ সাংবাদিকদের দেখান এবং স্পাইরাল বাইন্ডিং করা কপি নিয়ে ট্রাইব্যুনালের এজলাস কক্ষে যান। এ ঘটনায় পরদিন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার এ কে এম নাসির উদ্দিন মাহমুদ তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইনে শাহবাগ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।
৪ অক্টোবর ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) পরিদর্শক ফজলুর রহমান শাহবাগ থানায় এ মামলা করেন। মামলায় ট্রাইব্যুনালের কর্মচারী ফারুক ও নয়ন এবং জুনিয়র আইনজীবী মেহেদীকে আসামি করা হয়।
গোয়েন্দা পুলিশ তদন্ত শেষে ২০১৪ সালের ২৮ আগস্ট সাকা চৌধুরীর স্ত্রী-ছেলে ও আইনজীবীসহ সাতজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয়। চলতি বছর ১৫ ফেব্রুয়ারি মামলায় অভিযোগ গঠন করা হয়। দুই দফা পেছানোর পর বৃহস্পতিবার রায় ঘোষণা হলো।
“এ মামলায় যে অভিযোগ, তার সঙ্গে ফারহাত বা হুম্মাম জড়িত ছিলেন না। রাষ্ট্রপক্ষ অভিযোগ প্রমাণ করতে পারেনি বলে তারা খালাস পেয়েছে,” বেনারকে জানান ফারহাত ও হুম্মাম কাদের চৌধুরীর আইনজীবী আমিনুল গণী টিটো।
ফারহাত ও হুম্মামের আইনজীবী এ রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করলেও বাকি আসামিদের আইনজীবীরা আপিল করার কথা বলেছেন। অন্যদিকে পূর্ণাঙ্গ রায় দেখে তারপর আপিলের সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা বলেছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী।
এদিকে হুম্মাম কোথায় আছে, তা এখন পর্যন্ত স্পষ্ট নয়। পরিবারের অভিযোগ তাকে গোয়েন্দা পুলিশের পরিচয়ে তুলে নেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে পুলিশ বলছে, এমন তথ্য তাদের জানা নেই।
তবে আটকের খবর অস্বীকার করে ঢাকা মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার মাসুদুর রহমান এর আগে সাংবাদিকদের বলেন, হুম্মাম তাদের হেফাজতে নেই।
উল্লেখ্য, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ও সাবেক মন্ত্রী সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ফাঁসি ২০১৫ সালের ২২ নভেম্বর কার্যকর করা হয়।