লক্ষাধিক মামলা বিএনপির নেতা–কর্মীদের বিরুদ্ধে,সরকার বলছে এরা সন্ত্রাসী

ঢাকা থেকে জেসমিন পাপড়ি
2016.08.04
20160804-BNP-Case1000.jpg রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আগস্ট ৩, ২০১৬।
স্টার মেইল

মামলার বোঝা দিয়ে বিএনপিকে অকার্যকর করার অভিযোগ উঠেছে সরকারের বিরুদ্ধে। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের দাবি এ পর্যন্ত বিএনপি নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলার সংখ্যা লাখ ছাড়িয়েছে।

বিএনপির দাবি, এসব মামলায় দোষী সাব্যস্ত করে বিএনপি নেতাদের নির্বাচনে অযোগ্য করার পরিকল্পনা করছে সরকার। তাঁদের আশঙ্কা, এটি করে আগাম নির্বাচন দিয়ে আবারও ক্ষমতায় আসতে চায় শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ।

তবে বিএনপির এমন আশঙ্কাকে উড়িয়ে দিয়ে সরকার বলছে, বিএনপি নয়, দেশকে যারা অস্থিতিশীল করে তোলার চেষ্টা করেছিল, শুধু তাদের বিরুদ্ধেই নিয়ম অনুযায়ী মামলা হয়েছে।

পুলিশের পক্ষ থেকে মামলার বিষয়ে আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দেওয়া হয়নি। তবে পুলিশের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেনারকে বলেন, সব সরকারের সময়ে দমন–পীড়নের জন্য বিরোধী নেতা–কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা হয়।

কার বিরুদ্ধে কত মামলা

বিএনপি ও আদালত সূত্রে জানা যায়, দলের চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ২৯টি মামলা রয়েছে। যেগুলোর মধ্যে দুর্নীতির অভিযোগে পাঁচটি মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন।

এগুলোর মধ্যে ১৫টি মামলা করা হয়েছে হত্যা, বিস্ফোরক ও নাশকতার অভিযোগে। এ ছাড়া বাকি মামলাগুলো দায়ের করা হয় মানহানি, রাষ্ট্রদ্রোহ, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি, সাম্প্রদায়িক উসকানির অভিযোগে।

সেনা–সমর্থিত সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে দুদকের মামলাগুলো করা হয়। এগুলো হলো; জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট ও জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি, গ্যাটকো দুর্নীতি, নাইকো দুর্নীতি ও বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি দুর্নীতির মামলা। এসব মামলার মধ্যে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার কার্যক্রম শেষ পর্যায়ে রয়েছে।

বিএনপি সূত্র জানিয়েছে, ২০১৫ সালের অক্টোবর পর্যন্ত বিএনপি প্রধান খালেদা জিয়াসহ দলটির ১৫৮ জন কেন্দ্রীয় নেতার বিরুদ্ধে মামলা ছিল ৪ হাজার ৩৩১টি। আর ২১ হাজার ৬৮০টি মামলা ছিল সারা দেশে নেতা-কর্মীদের নামে।

জানা যায়, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে ৮৬টি। এর মধ্যে ২৫টিতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যদের মধ্যে রফিকুল ইসলাম মিয়ার বিরুদ্ধে ৮৩টি, মওদুদ আহমদের বিরুদ্ধে ২৩টি, মির্জা আব্বাসের বিরুদ্ধে ৫৩টি মামলা রয়েছে।

এ ছাড়া ২০১৫ সালের ২ অক্টোবর পর্যন্ত স্থায়ী কমিটির সদস্য এম কে আনোয়ারের বিরুদ্ধে ৩০টি, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের বিরুদ্ধে ২১টি, তরিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে ১২টি, আ স ম হান্নান শাহের নামে ১০টি ও খন্দকার মোশাররফ হোসেনের বিরুদ্ধে ৬টি মামলার রয়েছে।

প্রতিটি মামলা মিথ্যা ও সাজানো: বিএনপি

বৃহস্পতিবার বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল অভিযোগ করেন, দলের প্রায় প্রত্যেক শীর্ষ নেতার বিরুদ্ধে কমপক্ষে ২৫টি মামলা আছে। আর এসব মামলার প্রত্যেকটি মিথ্যা ও সাজানো বলে দাবি করেন তিনি।

মির্জা ফখরুল বলেন, “সরকার মিথ্যা মামলাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে বিরোধী দলকে অকার্যকর করার চেষ্টা করছে।”

তিনি বলেন, “গণতন্ত্র ধ্বংসের লক্ষ্য স্থির করেছে সরকার। বিরোধী দলকে পুরোপুরি নিস্তব্ধ করে দিতে তারা মামলাকে বড় অস্ত্র হিসেবে বেছে নিয়েছে।”

সরকার জনবিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে দাবি করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “জনগণের ওপর তাদের কোনো আস্থা নেই। আর তাই ক্ষমতায় টিকে থাকতে তারা বিএনপির ওপর দমন-পীড়ন চালাচ্ছে।”

বিএনপি নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা পরিচালনার ক্ষেত্রেও তাড়াহুড়ার অভিযোগ এনেছে দলটি। এতে বিচারহীনতার শিকার হওয়ার আশঙ্কা করেছে দলটির নেতারা।

এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির জ্যেষ্ঠ সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বেনারকে বলেন, “সাধারণত: মামলায় এক-দেড় মাস পর পর তারিখ দেওয়া হয়। তবে আমরা সপ্তাহখানেকের বেশি সময় পাচ্ছি না।”

তাঁর অভিযোগ হচ্ছে,  “তাড়াহুড়ার মাধ্যমে মামলা পরিচালনা করে সরকার দ্রুত আমাদের জেলে ভরতে চাইছে। এই সুযোগে নির্বাচন করে আবারও ক্ষমতায় থাকতে চায় তারা।”
বিএনপির নেতা-কর্মী নয়, সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা

তবে বিএনপি নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক প্রতিহিংসামূলক কোনো মামলা হয়নি বলে দাবি করেছে সরকারী দল আওয়ামী লীগ। দলের শীর্ষ নেতারা বলছেন, কোনো বিশেষ রাজনৈতিক দল নয়, সুনির্দিষ্ট অভিযোগের প্রেক্ষিতেই দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বেনারকে বলেন, “বিএনপি নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক প্রতিহিংসামূলক কোনো মামলা দেওয়া হয়নি। বিভিন্ন সময়ে তারা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করেছে।”

তিনি বলেন, ৯৩ দিন খালেদা জিয়া অবরোধ কর্মসূচির নাম করে সারা দেশে পেট্রোল বোমা সন্ত্রাস চালিয়েছেন। ওই কর্মসূচি চলাকালে হাজার হাজার গাড়ি পুড়েছে, শত শত মানুষ মারা গেছে। এসব ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।

সরকারি দলের ওই নেতা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “বিএনপি যদি মনে করে দেশের সকল সন্ত্রাসী তাদের নিজেদের লোক, তাহলে বলার কিছু নেই।তাহলে বিএনপি নিজেদের ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ হিসেবে ঘোষণা করুক।”

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।