পদত্যাগপত্র দিলেন এসপি বাবুল আক্তার,ধূম্রজালের অবসান

ঢাকা থেকে শাহরিয়ার শরীফ
2016.08.15
20160722-Babul-Akhter1000.jpg স্ত্রী খুন হওয়ার পর স্বজন ও সহকর্মীরা পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারকে (বাঁ থেকে দ্বিতীয়) সমবেদনা জানান। জুন ১০, ২০১৬।
ফোকাস বাংলা

অবশেষে পুলিশ সুপার (এসপি) বাবুল আক্তারের পদত্যাগপত্র জমা হওয়ার কথা স্বীকার করেছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। তাঁর এই স্বীকারোক্তির মাধ্যমে বাবুল চাকরিতে আছেন না পদত্যাগ করেছেন সেই ধূম্রজালের অবসান হল।

তবে বাবুলের জীবন নিয়ে শঙ্কিত তাঁর শ্বশুর মোশাররফ হোসেন। পুলিশের চাকরি না থাকলে যেকোনও সময় সন্ত্রাসীদের হাতে তাঁর মৃত্যু হতে পারে বলে আশঙ্কা করেন তিনি।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য প্রসঙ্গে যোগাযোগ করা হলে পুলিশের সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোশাররফ বেনারকে বলেন, “মিতু হত্যার ঘটনা বাদ দিয়ে অন্য বিষয় নিয়ে মাতামাতি হচ্ছে। এতে মূল বিষয়টি আড়াল হয়ে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, “আমি মেয়ে হত্যার সুষ্ঠু বিচার আশা করি। মেয়েকে প্রকাশ্য দিবালোকে শিশু সন্তানের সামনে যারা খুন করছে তাদের বিচার চাই।”

গত ৫ জুন ভোরে চট্টগ্রামের আর নিজাম রোডে খুন হন ওই পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রী মাহমুদা আক্তার মিতু। শুরুতে জঙ্গিদের সন্দেহ করেছিল পুলিশ। বলা হয়েছিল, জঙ্গিবিরোধী বেশ কয়েকটি অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়ায় বাবুলের স্ত্রী মিতুকে হত্যা করা হয়। তবে হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে কয়েকজনকে গ্রেপ্তারের পর পুলিশ বলছে, এটা ছিল দুর্বৃত্তদের হামলা।

ওই হামলার নেপথ্যে বাবুলের হাত ছিল বলে গুঞ্জন ওঠে। গত ২৪ জুন মধ্যরাতে ঢাকার বনশ্রীতে শ্বশুরবাড়ি থেকে বাবুলকে নিয়ে যায় পুলিশ। প্রায় ১৪ ঘণ্টা গোয়েন্দা কার্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদের পর তাঁকে বাসায় পৌঁছে দেওয়া হয়। এরপর প্রায় দেড় মাস অফিসে যাননি ওই পুলিশ কর্মকর্তা। গত ৩ আগস্ট বাবুল পুলিশ সদর দপ্তরে গেলেও কাজে যোগ দেননি।

বাবুলের চাকরি আছে কী নেই, তা নিয়ে নানা কানাঘুষা ও গুঞ্জন চলছে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে। এরই মধ্যে এ বিষয়ে মুখ খুললেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

পুলিশের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেনারকে বলেন, “মিতু হত্যার খুনীরা চিহ্নিত হয়েছে। কিন্তু বাবুলের সম্পৃক্ততার বিষয়টি এখন পর্যন্ত পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে তাঁকে সন্দেহের যথেষ্ট কারণ আছে।”

পদত্যাগের বিষয়ে শিগগির সিদ্ধান্ত

রোববার রাতে বেসরকারি ইন্ডিপেনডেন্ট টেলিভিশনকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “পুলিশ সদর দপ্তর থেকে যে ফাইলটি আমাদের কাছে এসেছে, তাতে বাবুল আক্তারের নিজের হাতে লেখা পদত্যাগপত্র রয়েছে ।” তিনি বলেন, “বিষয়টি আমাদের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছে। শিগগিরই আমরা সিদ্ধান্ত নেব।”

গত ২১ জুলাই পুলিশ প্রধান এ কে এম শহীদুল হক সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেন, “সে (বাবুল) চাকরিতে বহাল আছে, কিন্তু অফিস করছে না। অফিসে আসে না, আমাদের সাথে যোগাযোগও করে না। সে কেন আসে না, সে কথা আমরা বলতে পারব না।”

শহীদুল হক আরও বলেন, তাঁর নাকি চাকরি করার মতো মানসিক অবস্থা নেই।

স্ত্রী হত্যা মামলার বাদী বাবুল মিতু হত্যাকাণ্ডের পর দুই সন্তানকে নিয়ে ঢাকায় তাঁর শ্বশুরবাড়িতে ওঠেন। এখনও সেখানেই রয়েছেন তিনি। তাঁর শ্বশুর অবশ্য বিশ্বাস করেন না যে, তাঁর জামাই এই খুনের সঙ্গে জড়িত।

পদোন্নতি পেয়ে এসপি হয়ে বাবুল আক্তার চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় পুলিশ সদর দপ্তরে বদলি হয়ে আসার কয়েক দিনের মধ্যে তাঁর স্ত্রী খুন হন। এরপর গণমাধ্যমে নানা তথ্য প্রকাশ পেতে থাকে। এমনও গুঞ্জন আছে যে, বাবুলকে দুটি সুযোগ দেওয়া হয়: একটি জেল, অপরটি পুলিশ বাহিনী থেকে সরে যাওয়ার।

তবে এসব প্রস্তাবের সত্যতা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। বাবুলকে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ এবং চাকরি থেকে তাঁর ইস্তফা দেওয়ার ঘটনায় স্ত্রী মিতু হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তাঁর সম্পৃক্ততার আলোচনা জোরদার হচ্ছে।

পদত্যাগপত্র ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের বিষয়ে তাঁর শ্বশুর মোশাররফ বলেন, “বাবুল আকতারের পদত্যাগ নিয়ে এতোদিন বিভিন্ন গণমাধ্যমে দেখেছি। প্রত্যক্ষদর্শীতো আপনি-আমি না। যে সই করেছে, বা যে সই নিয়েছে বা দিয়েছে, তারাই বিষয়টি ভালো জানেন।”

ফেসবুকে স্ত্রীকে নিয়ে স্মৃতিচারণ

ঘটনার দুই মাস আট দিন পর বাবুল আক্তার ফেসবুকে স্ত্রীকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করেছেন। বাবুলকে ডিবি পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে গেলে এবং এখনো চাকরিতে ফিরে না যাওয়ায় বিভিন্ন মিডিয়ায় তাঁকে নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।

গণমাধ্যমের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দিয়ে বাবুল ফেসবুকে লিখেছেন, “যখন মা হারানো মেয়েটার অযথা গড়াগড়ি দিয়ে কান্নার শব্দ কেবল আমিই শুনি, তখন অনেকেই নতুন নতুন গল্প বানাতে ব্যস্ত। আমি তো বর্ম পড়ে নেই, কিন্তু কোলে আছে মা হারা দুই শিশু। আঘাত সইতেও পারি না, রুখতেও পারি না।”

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।