৮১মিলিয়ন ডলার উদ্‌ঘাটনে একসঙ্গে কাজ করবে বাংলাদেশ ব্যাংক,নিউ ইয়র্ক ফেড ও সুইফট

ঢাকা থেকে কামরান রেজা চৌধুরী
2016.05.11
BD-SWIFT-NY-FED620.jpg সোসাইটি ফর ওয়ার্ল্ড ইন্টারব্যাংক ফাইন্যান্সিয়াল টেলিকমিউনিকেশনস (সুইফট) ৮১ মিলিয়ন ডলার জালিয়াতির ঘটনা উদ্ঘাটনে বাংলাদেশ ব্যাংক ও ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউ ইয়র্কের সঙ্গে একযোগে কাজ করার অঙ্গিকার করে। জুন ২৬, ২০০৬।
এএফপি

বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের টাকা খোয়া যাওয়ার ঘটনা উদ্‌ঘাটনে একযোগে কাজ করবে বাংলাদেশ ব্যাংক, ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউ ইয়র্ক এবং সোসাইটি ফর ওয়ার্ল্ড ইন্টার ব্যাংক ফাইন্যান্সিয়াল টেলিকমিউনিকেশনস (সুইফট)। গতকাল মঙ্গলবার এই তিন প্রতিষ্ঠান পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির ব্যাপারে একমত হয়েছে।

এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ৮১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার চুরি যায়।এই পরিপ্রেক্ষিতে তিনটি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা গতকাল সুইজারল্যান্ডে একত্র হয়েছিলেন।

বাংলাদেশের ইতিহাসে ঘটে যাওয়া বৃহত্তম সাইবার চুরি নিয়ে তাঁরা এ সময় আলোচনা করেন। চুরির বিষয়ে এখন পর্যন্ত ঠিক কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তা নিয়েও সেখানে আলোচনা হয়।

সুইফট ও দুটি ব্যাংক যৌথ বিবৃতিতে বলেছে, “সব পক্ষ এই চুরির ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। ব্যাংক পরিচালনা পরিস্থিতিকে স্বাভাবিক করতে আমরা একত্রে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”

ওই বিবৃতিতে আরও বলা হয়, “জালিয়াতির প্রতিটি স্তর খুঁজে বের করা, এর সঙ্গে জড়িতদের বিচারের আওতায় আনা ও আন্তর্জাতিক অর্থ ব্যবস্থাপনাকে সুরক্ষিত করার ব্যাপারে এক সঙ্গে কাজ করারও সিদ্ধান্ত হয়েছে।”

বাংলাদেশের তদন্তকারী সংস্থা বলছে, ইলেকট্রনিক ট্রান্সফারের মাধ্যমে ৮১ মিলিয়ন ডলার জালিয়াতির ঘটনায় অভ্যন্তরীণ একটি সূত্রের ভূমিকা আছে। ওই সূত্রটির নিউ ইয়র্ক ফেডে একটি জমা হিসাব আছে।

অভ্যন্তরীণ সূত্রগুলোর সম্পৃক্ততার বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই) এর বক্তব্য সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে। এই সংবাদের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করলে পুলিশের বিশেষ শাখার ফরেনসিক উইংয়ের প্রধান মো. শাহ আলম বেনার নিউজ কে বলেন, “আমরা ভেতরকার একটা তৎপরতা দেখতে পাচ্ছি।”

সিআইডির ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, “তদন্তের এই পর্যায়ে আমি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কোনো কর্মকর্তার সম্পৃক্ততার কথা বলতে চাই না। তবে কারও কারও ওপর আমরা নজর রাখছি। সুনির্দিষ্টভাবে কারও নাম বলা এখন সম্ভব নয়।”

গত মঙ্গলবার ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, জালিয়াতির ঘটনায় কমপক্ষে একজন ব্যাংক কর্মকর্তার সম্পৃক্ততার প্রমাণ পেয়েছে এফবিআই। তবে এফবিআই বেনার নিউজকে জানিয়েছে, জালিয়াতির ঘটনায় প্রকাশ করার মতো তথ্য এখনো তাদের হাতে নেই।

সুইফট দায়ী নয়

জালিয়াতির ঘটনা ঘটার তিন সপ্তাহ পর ফিলিপাইনের একটি পত্রিকায় এ সম্পর্কিত খবর প্রকাশ পায়।

বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে হ্যাকারদের আক্রমণের বিষয়টি পরে ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন প্রতিবেদনে প্রকাশ পেতে থাকে। সে সময় বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের ফেসবুক পেজে জানায়, জালিয়াতরা ব্যাংকের সাইবার সিস্টেমে আক্রমণ করেছে এবং সুইফট কোড ব্যবহার করে নিউ ইয়র্ক ফেডে ৩৫টি চেকের নির্দেশনা পাঠিয়েছে। পাঁচটি নির্দেশনায় জালিয়াতরা টাকা তুলে নিয়ে গেছে। বানান ভুল থাকায় বাকি নির্দেশনাগুলো স্থগিত করা হয়।

মঙ্গলবার বৈঠকের আগে শাহ আলম জানান, জালিয়াতদের সঙ্গে কোনো সময় সুইফটের যোগাযোগ হয়েছিল কি না, সে বিষয়টি এখনো তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

তিনি বলেন, “বাংলাদেশ ব্যাংকের সুইফট ব্যবস্থাপনা ইন্টারনেটের সঙ্গে যুক্ত। সে কারণেই অপরাধীরা বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি ভেদ করতে সমর্থ হয়।” পদ্ধতিগত এই ত্রুটি থাকা ঠিক হয়নি বলে উল্লেখ করেন তিনি। তিনি আরও বলেন, সুইফট কর্তৃপক্ষ তাদের পদ্ধতিতে কিছু ফাঁক রেখেছে।

অবশ্য সুইফট শাহ আলমের এই বক্তব্যের নিন্দা করেছে। অভিযোগটি ভিত্তিহীন বলে মনে করছে তারা।

সোমবার এক বিবৃতিতে সুইফট জানায়, কর্মকর্তারা যেসব কথা বলছেন সে ব্যাপারে সুইফটের কোনো দায় নেই। আর সব ব্যবহারকারীর মতো সার্ভারের নিরাপত্তা রক্ষার দায়িত্ব পুরোপুরিভাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের ওপরই বর্তায়।

সুইফট ব্যবহারকারী অন্য সব প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। পাসওয়ার্ড থেকে শুরু করে অভ্যন্তরীণ সব ব্যাংকিং পদ্ধতির নিরাপত্তা রক্ষার দায়িত্ব বাংলাদেশ ব্যাংকেরই ছিল বলে সুইফট মনে করে।

খোয়া যাওয়া টাকার সিংহভাগ উদ্ধার হয়নি

মার্চের ৩১ এবং এপ্রিলের ৪ ও ১৯ তারিখে ফিলিপাইনের একজন ব্যবসায়ী ১০ মিলিয়ন ইউএস ডলার ফেরত দিয়েছে। নিউ ইয়র্ক ফেড ব্যাংক থেকে ফিলিপাইন ও শ্রীলঙ্কায় এই অর্থ পাচার হয়। ব্যবসায়ী ও ক্যাসিনো ব্যবস্থাপক কিম অং ফিলিপাইনের অ্যান্টি মানি লন্ডারিং কাউন্সিল ও ফিলিপাইনের সিনেটের কাছে ওই অর্থ ফেরত দেন।

অং তাঁর সাক্ষ্যে বলেন, চীনের দুজন নাগরিক ও ফিলিপাইনের এক ব্যাংকার পাচার হওয়া ওই টাকা ক্যাসিনোতে ব্যবহার করেছেন।

একই সঙ্গে বাংলাদেশের তদন্তকারীরা ঘোষণা দিয়েছেন, তাঁরা ধারণা করছেন শ্রীলঙ্কা, ফিলিপাইন, চীন ও জাপানের কমপক্ষে ২০ জন নাগরিক তাঁদের সন্দেহের তালিকায় আছেন।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।