জঙ্গি আতঙ্কে বাংলাদেশে সাময়িকভাবে বন্ধ ব্রিটিশ কাউন্সিল

ঢাকা থেকে শাহরিয়ার শরীফ
2016.07.27
20160727-British-Council1000.jpg জঙ্গি আতঙ্কে ঢাকায় শিক্ষার্থীদের ব্যাগ ও বই তল্লাশি করা হচ্ছে। জুলাই ২৭, ২০১৬।
ফোকাস বাংলা

গত ১ জুলাই ঢাকার গুলশানে হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয়, ৭ জুলাই শোলাকিয়ায় ঈদ জামাতের কাছে এবং ২৬ জুলাই ঢাকার কল্যাণপুরে জঙ্গি হামলার ঘটনায় দেশিবিদেশি প্রতিষ্ঠান বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করছে। নিরাপত্তাজনিত কারণে গতকাল বুধবার বাংলাদেশে সাময়িকভাবে ব্রিটিশ কাউন্সিলের সব অফিস বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

এর আগে ঢাকায় অনুষ্ঠিতব্য কমপক্ষে তিনটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন স্থগিত বা স্থান পরিবর্তন করা হয়। এ ছাড়া বেশ কয়েকটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুল সাময়িক বন্ধ ঘোষণা হয়েছে। বন্ধ রাখা হয়েছে ঢাকায় অবস্থিত ইন্দিরা গান্ধী সাংস্কৃতিক কেন্দ্র।

ইতিমধ্যে কূটনৈতিক জোনে গড়ে তোলা হয়েছে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা। ওই এলাকায় জন ও যান চলাচলের ওপর কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। তারপরও নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ কমছে না।

দেশীয় বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন কর্মসূচি ঘোষণা করেও পরবর্তীতে তা থেকে সরে আসছে। প্রায় প্রতিদিনই এমন ঘটনা ঘটছে। একইভাবে নতুন কোনো অনুষ্ঠান বা কর্মসূচির পরিকল্পনার বিষয়েও সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে।

আর্টিজানে হামলার পর পোশাক খাতের কয়েকটি ক্রেতা প্রতিষ্ঠান তাদের নির্ধারিত সফর বাতিল করেছে। এসব প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে দেশের বাইরে বৈঠক করার প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে।

ব্রিটিশ কাউন্সিল বন্ধ

গতকাল বুধবার এক বিজ্ঞপ্তিতে ব্রিটিশ কাউন্সিল বাংলাদেশের পরিচালক বারবারা উইকহ্যাম বলেন, “ব্রিটিশ কাউন্সিলে যাঁরা কাজ করেন এবং এখান থেকে যাঁরা সেবা গ্রহণ করে থাকেন, তাঁদের নিরাপত্তার বিষয়টি আমাদের কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই মূলত আমরা সাময়িকভাবে বাংলাদেশে ব্রিটিশ কাউন্সিলের সব অফিস বন্ধ ঘোষণা করেছি।”

“তবে নিরাপত্তাব্যবস্থা অনুকূলে আসার বিষয়টিকে বিবেচনায় নিয়ে শিগগিরই আবার সব ধরনের কার্যক্রম চালু করা হবে,” জানান বারবারা।

বর্তমানে ঢাকায় দুটিসহ বাংলাদেশে ব্রিটিশ কাউন্সিলের চারটি অফিস রয়েছে। যুক্তরাজ্য ভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা ব্রিটিশ কাউন্সিল শিক্ষা সুযোগ বৃদ্ধি ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক তৈরিতে কাজ করে থাকে।

বিশ্বের একশটিরও বেশি দেশে ব্রিটিশ কাউন্সিলের কার্যক্রমে আট হাজার কর্মী ও কর্মকর্তা আছেন, যাঁদের মধ্যে শিক্ষকের সংখ্যা দুই হাজার। এরা ইংরেজি শিক্ষা, বিভিন্ন সংস্কৃতির মধ্যে যোগাযোগ এবং শিক্ষা ও সামাজিক যোগাযোগ নিয়ে সারা বিশ্বের হাজার হাজার পেশাদার মানুষ, নীতি নির্ধারক ও তরুণদের সঙ্গে কাজ করছেন।

তিনটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন স্থগিত

ঢাকায় অনুষ্ঠিতব্য কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি অ্যাসোসিয়েশনের (সিপিএ) সম্মেলন বাতিল করা হয়েছে।

“আয়োজকেরা বিদ্যমান পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে এখানে সম্মেলন করতে চাননি,” বেনারকে জানান বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, যিনি নিজে সিপিএর একজন সদস্য।

মন্ত্রী বলেন, পর্যটকের সংখ্যা বেশ কমেছে। অর্থনীতির ওপর এর কিছু প্রভাব পড়তে পারে। তবে এই পরিস্থিতি সহসা কেটে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

সেপ্টেম্বরে ঢাকায় নির্ধারিত এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ইন্টারনেট খাতের বিশেষজ্ঞদের একটি সম্মেলন শ্রীলঙ্কায় সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে বলে আয়োজকেরা নিশ্চিত করেছেন।

“অংশগ্রহণকারীরা বাংলাদেশে আসতে ভয় পাচ্ছেন। এ জন্য সম্মেলনের স্থান শ্রীলঙ্কায় সরিয়ে নেওয়া হয়েছে,” বেনারকে জানান আয়োজক সংস্থা বাংলাদেশ ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব এমদাদুল হক।

নিরাপত্তা নিয়ে বিদেশিদের উদ্বেগের কারণে অর্থ পাচার সম্পর্কিত একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনও বাতিল হয়েছে। এশিয়া প্যাসিফিক গ্রুপ অন মানি লন্ডারিংয়ের এ সম্মেলনটি হওয়ার কথা ছিল এ মাসের শেষ সপ্তাহে।

এশিয়া প্যাসিফিক গ্রুপ তাদের ওয়েবসাইটে দেওয়া বিবৃতিতে জানায়, বাংলাদেশের পরিবর্তে এখন বৈঠকটি আগামী সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত হবে।

বেশকিছু কর্মসূচি বাতিল

দেশি-বিদেশি অতিথিদের উপস্থিতিতে সোশ্যাল বিজনেস ডে উপলক্ষে আজ ২৮ থেকে ৩০ জুলাই ঢাকায় বড় দুটি অনুষ্ঠান হওয়ার কথা ছিল। অনুষ্ঠানের আয়োজক ইউনূস সেন্টার তা বাতিলের ঘোষণা দিয়েছে।

কূটনৈতিক সূত্র মতে, বাস্তিল ডে উপলক্ষে ঢাকায় ফ্রান্স দূতাবাসে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন ছিল। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের আগেই তাঁরা সেই আয়োজন থেকে সরে আসে।

গত ২০ জুলাই গুলশানের ওয়েস্টিন হোটেলে একটি বড় অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল আগা খান ডেভেলপমেন্ট নেটওয়ার্ক (একেডিএন)। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে ওই অনুষ্ঠানের দাওয়াত কার্ডও পৌঁছানো হয়েছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে এসে ‘বিদ্যমান নিরাপত্তা পরিস্থিতির’ কারণে তা বাতিল করা হয়।

জাপান এক্সটার্নাল ট্রেড অর্গানাইজেশন জেট্রো’র আয়োজনে টোকিওতে বাংলাদেশ বিষয়ক একটি সেমিনারের আয়োজন ছিল। জেট্রো সদর দপ্তরে ‘বাংলাদেশে বিনিয়োগ উৎসাহ’ শীর্ষক এ সেমিনার হওয়ার কথা ছিল। এতে দুই শতাধিক জাপানি শীর্ষ বিনিয়োগকারীকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে নিরাপত্তা জনিত কারনে তা বাতিল করা হয়। গুলশান হামলার পরপরই ঢাকায় জাপানিজ ল্যাঙ্গুয়েজ প্রফিসিয়েন্সি টেস্ট (পরীক্ষা) বাতিল করে জাপান দূতাবাস।

ঢাকার ইংরেজি মাধ্যম স্কুল স্কলাস্টিকা ও সানিডেল স্কুল বন্ধ রাখা হয়েছে। একইভাবে আরও কয়েকটি স্কুলে এখনও শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়নি।

তবে নিরাপত্তার অতিরিক্ত আয়োজনসহ সরকারের তরফে দেশি-বিদেশিদের উদ্বেগ নিরসনে বহুমুখী প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

“খুব শিগগির দেশে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসবে। জঙ্গিদের কঠোরভাবে দমন করা হচ্ছে। এ নিয়ে দেশি–বিদেশি কারও আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই,” বেনারকে জানান বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।