সড়ক পরিবহন আইনে পরিবারের গাড়ির সংখ্যা নির্ধারণ করা হচ্ছে

ঢাকা থেকে শাহরিয়ার শরীফ
2016.06.29
Car-story620.jpg ঢাকায় যানজটের অন্যতম কারণ ব্যক্তিগত গাড়ি। জুন ২৬, ২০১৬।
স্টার মেইল

পরিবার প্রতি গাড়ির সংখ্যা নির্ধারণ করে দিয়ে ‘সড়ক পরিবহন আইন’ করতে যাচ্ছে সরকার। মোটর ভেইকেল অর্ডিন্যান্স-১৯৮৩ এর পরিবর্তে দুটি ভিন্ন আইন হবে; একটি বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ আইন, অন্যটি সড়ক পরিবহন আইন।

খসড়া সড়ক পরিবহন আইনে প্রতিটি পরিবারের গাড়ির সংখ্যা নির্ধারণ করে দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। গতকাল বুধবার জাতীয় সংসদকে এই তথ্য জানান সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

নগর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজধানীর যানজটের জন্য ব্যক্তিগত গাড়ি প্রধানত দায়ী। তাঁদের মতে, ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করা গেলে যানজট সহনীয় হয়ে আসবে।

এই পরিপ্রেক্ষিতে সরকার বলছে, চাইলেই একটি পরিবার যত খুশি তত গাড়ি রাখতে পারবে না। প্রতিটি পরিবার কয়টি গাড়ি রাখতে পারবে, তার সীমা নির্ধারণের প্রস্তাব করা হচ্ছে ওই আইনে।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) হিসাবে, সড়ক না বাড়লেও সরকারি হিসেবে প্রতিদিন রাজধানীতে প্রায় ১৫০টি নতুন গাড়ি নামছে। এর ফলে যানজট বেড়েই চলছে।

সূত্র জানায়, আইনে পরিবার প্রতি সর্বোচ্চ দুটি ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহারের সুযোগ দেওয়া হতে পারে। এ ছাড়া ছোট গাড়ি নিয়ন্ত্রণে সপ্তাহের একেক দিন জোড়-বিজোড় নিবন্ধন নম্বর হিসেবে চলাচলের চিন্তা রয়েছে।

“এমন অনেক পরিবার আছে যাঁরা ৪ থেকে ৫টি ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার করেন, এটি অস্বাভাবিক । এ জন্য পরিবার-প্রতি গাড়ির ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে আনার কথা ভাবা হচ্ছে,”বেনারকে জানান ওবায়দুল কাদের।

তিনি বলেন, রাজধানীসহ বড় শহর সচল রাখতে ও আর্থিক ক্ষতির বিষয়টি আমলে নিয়ে ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করতে চায় সরকার।

বিআরটিএ’র হিসেবে, ঢাকায় প্রাইভেট গাড়ির সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে। ২০১২ সালে ৮ হাজার ১৮৭টি গাড়ির নিবন্ধন দেওয়া হয়েছিল। ২০১৫ সালে ১৮ হাজার ৪২২টি প্রাইভেট কার নিবন্ধন দেওয়া হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউট ও বেসরকারি নর্দান ইউনিভার্সিটির ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের যৌথ সমীক্ষায় দেখা যায়, রাজধানীতে বছরে যানজটের কারণে নষ্ট হয় ১১ হাজার ৮৪৪ কোটি টাকার জ্বালানি।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, রাজধানীতে সড়কের তুলনায় গাড়ির চাপ দ্বিগুণ। নিয়মানুযায়ী এ শহরে ২৫ শতাংশ সড়ক থাকার কথা থাকলেও আছে মাত্র ৮ শতাংশ।

বিশেষজ্ঞদের মতে, শহরে পর্যাপ্ত গণপরিবহনের অভাব রয়েছে। এ কারণে মধ্যবিত্তদের অনেকেই ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে গাড়ি কিনছেন। সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, ঢাকায় যানবাহনের সংখ্যা প্রায় সোয়া সাত লাখ।

বেসরকারি সংস্থা ওয়ার্ক ফর বেটার বাংলাদেশ (ডব্লিউবিবি) ট্রাস্ট পরিচালিত সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় বলা হয়েছে, ব্যক্তিগত গাড়ি বেড়ে যাওয়ায় রাস্তায় পার্কিং-সুবিধা দিতে গিয়ে নাগরিকের চলাচলের জায়গা কমে গেছে।

“ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহারের লাগাম টেনে ধরার কথা অনেকদিন ধরে বলা হচ্ছে। কিন্তু এটা এখনই করতে হবে,” বেনারকে জানান পরিবহন বিশেষজ্ঞ ও বুয়েটের অধ্যাপক ড. শামসুল হক ।

ওই বিশেষজ্ঞ মনে করেন, ঢাকায় গাড়ির বাড়তি চাপের অন্যতম কারণ হলো পরিবহন ক্ষমতায় ঘাটতি। এ কারণে ছোট গাড়ির সংখ্যা বাড়ে, সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ে যানজটও। তিনি বলেন, যানজট বাড়লে বড় গাড়ির পরিবহন ক্ষমতা কমে।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।