তাভেল্লা হত্যা মামলায় বিএনপি নেতাসহ ৭ আসামির বিচার শুরু

ঢাকা থেকে জেসমিন পাপড়ি
2016.10.25
161025-BD-Tavella-620.jpeg পুলিশ ঢাকার কূটনৈতিক পাড়ার একটি ঘটনাস্থল পাহারা দিচ্ছে, যেখানে ইতালির নাগরিক সিজার তাভেল্লাকে দুর্বৃত্তরা গুলি করে হত্যা করেছিল। সেপ্টেম্বের ২৯, ২০১৫।
এএফপি

ইতালির নাগরিক সিজার তাভেল্লা হত্যা মামলায় বিএনপি নেতা এম এ কাইয়ুমসহ সাতজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেছে ঢাকার একটি আদালত। এর মধ্য দিয়ে এই বিদেশি ত্রাণকর্মী হত্যার আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হলো।

মঙ্গলবার ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. কামরুল হোসেন মোল্লা এ অভিযোগ গঠন করে আগামী ২৪ নভেম্বর সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য দিন ধার্য করেন।

বিএনপির পক্ষ থেকে এ অভিযোগপত্রকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করা হয়েছে। এ রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করার কথাও জানিয়েছে আসামি পক্ষ।

২০১৫ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর রাজধানী ঢাকার কূটনৈতিক পাড়ায় দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত হন ইতালীয় নাগরিক সিজার তাভেল্লা (৫১)। ঘটনার পর ইসলামিক স্টেটের (আইএস) পক্ষ থেকে হত্যার দায় স্বীকার করা হয়।

অব্যাহতভাবে ব্লগার, লেখক ও প্রকাশকদের ওপর জঙ্গি হামলার পর এ হত্যাকাণ্ড আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। এরপর আরও কয়েকজন বিদেশি হত্যার ঘটনা ঘটলে পশ্চিমা অনেক দেশ তাদের নাগরিকদের জন্য বাংলাদেশ ভ্রমণে রেড অ্যালার্ট জারি করে। ফলে ক্ষতির সম্মুখীন হতে থাকে ব্যবসা ও বিনিয়োগ।

বর্তমানে সে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও বিদেশিদের আস্থা ফেরাতে দ্রুত ও ন্যায় বিচারের মাধ্যমে এসব হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের বিচারের পাশাপাশি জঙ্গিবাদের মূল উৎপাটন করতে হবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।

গত ২৮ জুন এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) পরিদর্শক গোলাম রাব্বানী ঢাকা মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও সাবেক ওয়ার্ড কমিশনার এম এ কাইয়ুমসহ সাতজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।

অভিযোগপত্রে থাকা বাকি আসামিরা হলেন কাইয়ুমের ভাই আবদুল মতিন, তামজিদ আহম্মেদ রুবেল ওরফে শুটার রুবেল, মিনহাজুল আরেফিন রাসেল ওরফে ভাগ্নে রাসেল, রাসেল চৌধুরী ওরফে চাকতি রাসেল ও সাখাওয়াত হোসেন ওরফে শরীফ ও মুহাম্মদ সোহেল ওরফে ভাঙ্গারি সোহেল।

এদের মধ্যে কাইয়ুম ও সোহেল বাদে বাকিরা আটক রয়েছেন। পলাতক এই দুই আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

গত ২৪ আগস্ট মামলাটি আমলে নিয়ে এই দুই পলাতক আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে মহানগর দায়রা জজ আদালত।

এদিকে গ্রেপ্তার হওয়াদের মধ্যে আরেফিন রাসেল, চাকতি রাসেল, সাখাওয়াত হোসেন ও শুটার রুবেল আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে বলেও পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়।

তবে পুলিশের তদন্তের প্রতি অনাস্থা এনে অভিযোগ গঠনের এ আদেশের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করবেন বলে জানিয়েছেন মামলার প্রধান আসামি কাইয়ুমের আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে তিনি বেনারকে বলেন, “এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জঙ্গিরা জড়িত বলে র‌্যাবের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল। অথচ পুলিশ বিএনপি নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দিয়েছে। তাই আমরা মনে করি, পুলিশের তদন্তে চার্জ গঠন সঠিক হয়নি। আদালত পুনরায় তদন্তের দিন ধার্য করলে, সত্য উদ্‌ঘাটিত হওয়ার সুযোগ থাকত।”

এ প্রসঙ্গে রাষ্ট্রপক্ষে আইনজীবী তাপস কুমার পাল বেনারকে বলেন, “আসামিপক্ষের বক্তব্য শুনে আদালত বলেছেন, তথ্য প্রমাণ অনুসারে আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নিয়েছে। যদি পুলিশের তদন্তে এ ঘটনার সঙ্গে জঙ্গি বা অন্য কারও সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়, তবে সাপ্লিমেন্টারি অভিযোগপত্রের মাধ্যমে তা গ্রহণ করা যাবে।”

এদিকে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হিসেবে বিএনপিকে ঘায়েল করতেই তাবেলা হত্যাকাণ্ডের অভিযোগপত্রে বিএনপি নেতাকে আসামি করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান।

এ বিষয়ে পুলিশ ও র‌্যাবের দেওয়া তথ্যের অসংগতি তুলে ধরে তিনি মঙ্গলবার এক অনুষ্ঠানে বলেন, “তাভেল্লা হত্যার সঙ্গে নব্য জেএমবির জঙ্গিরা জড়িত বলে জানিয়েছিল র‌্যাব। অথচ পুলিশের দেওয়া প্রতিবেদনে বিএনপি নেতা কাইয়ুম সাহেবসহ বিএনপির কর্মীদের জড়িত থাকার কথা বলা হচ্ছে।”

নজরুল ইসলাম বলেন, “অপরাধ দমনের চেষ্টা না করে এই সুযোগে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার চেষ্টা করার নামে অপরাজনীতি হচ্ছে। যার পরিণতি দেশ ও দেশের মানুষের জন্য কল্যাণকর হবে না।”

এভাবে রাজনীতিকরণ করে প্রকৃত অপরাধীকে আটক না করলে তারা আড়ালে চলে যেতে পারেন বলেও শঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।

এদিকে এসব হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচারের পাশাপাশি দেশের ভাবমূর্তি রক্ষায় জঙ্গিবাদের মূল উৎপাটন করার দিকে নজর দিতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিশ্লেষকেরা।

এ প্রসঙ্গে সুজন (সুশাসনের জন্য নাগরিক) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বেনারকে বলেন, “দ্রুততম সময়ে এসব হত্যাকাণ্ডের ন্যায় বিচার হতে হবে। তবে শুধু বিচারই যথেষ্ট নয়। এর পাশাপাশি জঙ্গিবাদের মূল কারণ চিহ্নিত করে উদ্যোগী ভূমিকা নিতে হবে।”

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।