প্রধানমন্ত্রীর পূত্রকে নিয়ে ভুল খবর প্রচারে ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকসহ গ্রেপ্তার ৩

ঢাকা থেকে শাহরিয়ার শরীফ
2016.08.08
20160808-Editor-arrest620.jpg বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে) বিক্ষোভ সমাবেশ করে।আগস্ট ৭, ২০১৬।
বেনার নিউজ

গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যে ভুল–ভ্রান্তি, জঙ্গি দমন অভিযান নিয়ে প্রশ্ন তোলা বা সরকারের ভাষায় ‘বাড়াবাড়ি’ করার ঘটনাগুলো কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সরকার এ বিষয়ে গণমাধ্যমগুলোকে সতর্ক করছে বিভিন্ন উপায়ে।

সর্বশেষ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে এবং তাঁর উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়কে নিয়ে ভুল খবর প্রকাশ করায় অনলাইন সংবাদমাধ্যম বাংলা মেইল ২৪ ডটকমের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকসহ তিনজনকে আটক করেছে র‍্যাব। গত রোববার রাতে র‍্যাব-৩ এর একটি দল তাদের আটক করে।

আটক তিনজনসহ প্রতিষ্ঠানটির মালিক ও সাবেক স্বতন্ত্র সাংসদ ফজলুল আজিমকে আসামি করে পল্টন থানায় তথ্যপ্রযুক্তি (আইসিটি) আইনে মামলা করা হয়েছে এবং বাংলা মেইল ওয়েব পোর্টালটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।এছাড়াও ওই পত্রিকার সাংবাদিকদের নয়টি অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড গতকাল বাতিল করেছে তথ্য অধিদপ্তর।

‘বিমান দুর্ঘটনায় প্রধানমন্ত্রীপুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়ের মৃত্যুর গুজব’ শিরোনামে গত রোববার একটি সংবাদ প্রকাশের জের ধরে তিনজনকে আটক করা হয়। তবে সোমবার তাদের আদালতে হাজির করা হয়নি। আজ মঙ্গলবার তাদের আদালতে হাজির করা হতে পারে।

বাংলা মেইলে অভিযান

তিনজনকে আটকের পর বাংলা মেইলের কার্যালয়টি প্রতিষ্ঠানটিতে কর্মরতদের হেফাজতেই তালাবন্ধ রাখা হয়েছে।গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন; সংবাদমাধ্যমটির ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মো. সাহাদাত উল্যা খান, নির্বাহী সম্পাদক মাকসুদুল হায়দার চৌধুরী ও নিজস্ব প্রতিবেদক প্রান্ত পলাশ।

“রোববার রাত সোয়া একটার দিকে সাহাদাত উল্যা খান ও প্রান্ত পলাশকে আটক করে নিয়ে যায় র‍্যাব। এ ছাড়া ভারপ্রাপ্ত সম্পাদককে তাঁর উত্তরার বাসা থেকে ডেকে এনে আটক করা হয়,” বেনারকে জানান নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সংবাদকর্মী।

মেইল মিডিয়া লিমিটেডের প্রতিষ্ঠান বাংলা মেইলের কার্যালয় রাজধানীর কাকরাইলের স্কাউট ভবনের চতুর্থ তলায়। আটকের আগে র‍্যাবের সদস্যরা বাংলা মেইল কার্যালয়ে তল্লাশি করে ও একটি কম্পিউটার জব্দ করে। উল্লেখ্য, মেইল মিডিয়ার মালিক ফজলুল আজিম নোয়াখালী ৬ আসনের সাবেক স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার দেশের ৩৫টি ওয়েব পোর্টাল বন্ধ করে দেওয়া হয়। এর কারণ হিসেবে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, “জঙ্গি বিরোধী অভিযান নিয়ে বিভ্রান্তিকর ও উস্কানিমূলক খবর বা বক্তব্য প্রচারের অভিযোগে গোয়েন্দা সংস্থা ও পুলিশের পরামর্শে এগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।”

আমার দেশ, শীর্ষ নিউজ, দিনকাল অনলাইনসহ ওই ৩৫টি নিউজ পোর্টাল বন্ধের প্রতিবাদে সরকারবিরোধী বলে পরিচিত বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে)গতকাল ৭ আগস্ট বিক্ষোভ–সমাবেশ করেছে।

তথ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, এগুলো চালু করার সম্ভাবনা নেই। বরং আরও কিছু অনলাইন গণমাধ্যম বন্ধ হতে পারে।

তথ্য মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেনারকে জানান, ‘সরকার অনলাইন গণমাধ্যমের জন্য নীতিমালা করেছে। অনলাইনগুলো পরিচালনার দায়িত্ব সরকার সম্প্রচার কমিশনের কাছে দিতে চায়, এ জন্য সম্প্রচার আইনের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করার প্রক্রিয়া চলছে’।

চাপের মুখে গণমাধ্যম

গত ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার পর থেকে গণমাধ্যমের কর্মকাণ্ডে সরকার বিরক্তি প্রকাশ করে আসছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কয়েক দফা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে এবং মন্ত্রিসভার বৈঠকে বিরক্তি প্রকাশ করেন।

সম্প্রতি তথ্য মন্ত্রণালয় একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে বিভিন্ন দুর্ঘটনা ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানের খবর গণমাধ্যমে সরাসরি সম্প্রচারের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়। ওই নিষেধাজ্ঞার পরপরই রাজধানীর কল্যাণপুরে জঙ্গি দমন অভিযান চালানো হয়, যেখান থেকে গণমাধ্যমগুলো বেশ দূরে অবস্থান করে।

গত এক মাসে পুলিশের মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক, র‍্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদসহ অনেকেই গণমাধ্যমের সমালোচনা করেছেন। সর্বশেষ গত রোববার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেররিজম ও ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম বিভাগের (সিটি) প্রধান মো. মনিরুল ইসলাম জঙ্গি বিষয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলোতে সঠিক তথ্য দেওয়ার জন্য গণমাধ্যমগুলোর প্রতি আহ্বান জানান।

এদিকে যে সংবাদ পরিবেশন করলে দেশের ক্ষতি হয় তা প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। গতকাল সোমবার বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবের কনফারেন্স লাউঞ্জে এক অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ আহ্বান জানান।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘যে সংবাদটি প্রচার করলে দেশের ক্ষতি হবে তা আপনারা কখনো প্রচার করবেন না। আমি বিনীত ভাবে আপনাদের অনুরোধ করছি এবং আপনাদের বিবেচনায় ওপর ন্যস্ত করছি।’

বিরোধী সাংবাদিক নেতাদের বক্তব্য

“সরকারের বিরুদ্ধে ভিন্নমত প্রকাশ করলেই তাদের ওপর চরম নির্যাতন নেমে আসছে। এই সরকারের কাজকর্মে মনে হয়, ভিন্নমত প্রকাশকারী কেউ দেশে থাকতে পারবে না,” বেনারকে জানান সাংবাদিক নেতা রুহুল আমিন গাজী।

'অনেক গণমাধ্যম আজ সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছে। কিন্তু তারপরও সরকার ভিন্নমতের গণমাধ্যম সহ্য করতে পারছে না'। বেনারকে জানান বিএফইউজে’র একাংশের সভাপতি শওকত মাহমুদ। তিনি দাবি করেন, দেশের কোনো মানুষ আজ নিরাপদে নেই। সাংবাদিকেরা নিরাপত্তাহীনতায় দিন কাটাচ্ছে। সংবাদমাধ্যমগুলো চাপের মুখে রয়েছে।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।