জঙ্গি সম্পৃক্ততার অভিযোগে সিঙ্গাপুরে আট বাংলাদেশি আটক

ঢাকা থেকে শাহরিয়ার শরীফ
2016.05.03
160503-SG-Bangladeshis-1000.jpg সিঙ্গাপুর কর্তৃপক্ষ আটক আট সন্দেহভাজন বাংলাদেশি মুসলিম জঙ্গির ছবি প্রকাশ করেছে: (ওপরে বাম থেকে) শরিফুল ইসলাম, লিয়াকত আলী মামুন, মো. জাবেদ কায়সার হাজি নুরুল ইসলাম সওদাগর, রুবেল মিয়া, জামান দৌলত, ইসমাইল হাওলাদার সোহেল, সোহাগ ইব্রাহিম ও রহমান মিনহাজুর। মে ৩, ২০১৬।
সিঙ্গাপুর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

চার মাসের ব্যবধানে আবারও জঙ্গি সম্পৃক্ততার অভিযোগে বাংলাদেশি শ্রমিক ফেরত পাঠিয়েছে সিঙ্গাপুর সরকার। গতকাল মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেররিজম বিভাগ আনুষ্ঠানিকভাবে এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে। এর আগে গত বছরের নভেম্বরে কয়েক ধাপে ২৭ জনকে সিঙ্গাপুর থেকে ফেরত পাঠানো হয় জঙ্গিবাদে সম্পৃক্ততার অভিযোগে। এদের মধ্যে নির্দোষ প্রমাণ হওয়ায় ১২ জনকে ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ।

ঢাকা থেকে টেলিফোনে যোগাযোগ করা হলে সিঙ্গাপুরে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মাহবুব উজ জামান বেনারকে বলেন, “বাংলাদেশ কোনোভাবেই জঙ্গিবাদ সমর্থন করে না। এ ব্যাপারে সিঙ্গাপুরকে সব ধরনের সহযোগিতা করছে বাংলাদেশ।”

এ ধরনের ঘটনা দুই দেশের সম্পর্কে বা শ্রমিক নিয়োগে প্রভাব ফেলবে কিনা—জানতে চাইলে রাষ্ট্রদূত বলেন, দুই দেশের মধ্যে চমৎ​কার সম্পর্ক বিদ্যমান। আর শ্রমিক নিয়োগের বিষয়টি নির্ভর করে দেশটির চাহিদার ওপর। এ ক্ষেত্রে কোনো প্রভাব পড়বে না।

এদিকে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে গতকাল মঙ্গলবার কাউন্টার টেররিজম বিভাগের প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেন, “সিঙ্গাপুরে জঙ্গি সম্পৃক্ততার অভিযোগে ১৩ জনকে চিহ্নিত করা হয়েছে। এদের পাঁচজনকে ২৯ এপ্রিল দেশে ফেরত পাঠানো হয়।”

“দেশে ফিরে ঢাকার বনশ্রীতে তাঁরা আত্মগোপন করেছিলেন। মঙ্গলবার পুলিশ অভিযান চালিয়ে ওই পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে,” জানান মনিরুল।

অভিযুক্ত হয়েছেন যাঁরা

সিঙ্গাপুরের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে অভিযুক্ত বাংলাদেশিদের নাম ও তাদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ সম্পর্কে জানানো হয়েছে। সিঙ্গাপুরে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক আট অভিযুক্ত হলেন; শরিফুল ইসলাম(২৭), লিয়াকত আলী মামুন(২৯), মো. জাবেদ কায়সার হাজি নুরুল ইসলাম সওদাগর(৩০), রুবেল মিয়া (২৬), জামান দৌলত(৩০), ইসমাইল হাওলাদার সোহেল(২৯), সোহাগ ইব্রাহিম(২৭) ও রহমান মিনহাজুর(৩১)।

এ ছাড়া মঙ্গলবার পুলিশ অভিযান চালিয়ে ঢাকার রামপুরা থেকে মিজানুর রহমান, রানা, আলমগীর, তানজিমুল ইসলাম ও সন্তু খান নামের পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে।

পুলিশ জানায়, গ্রেপ্তার হওয়া এই পাঁচজন ২০০৭ সাল থেকে ২০১১ সালের মধ্যে সিঙ্গাপুরে যান। সেখানে গিয়ে তাঁরা জঙ্গি কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। তাঁরা আনসারুউল্লাহ বাংলা টিমের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারেন। গ্রেপ্তারকৃতদের আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন জানানো হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

গোপন দল গড়েন রহমান মিজানুর

সিঙ্গাপুর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে,  রহমান মিজানুর ইসলামিক স্টেট অব বাংলাদেশ (আইএসবি) নামে এ বছরের মার্চে একটি গোপন দল গড়ে তোলেন। জিজ্ঞাসাবাদে দলটির সদস্যরা জানিয়েছেন, এই দলের কমপক্ষে দুজন সদস্য বাংলাদেশে আছেন। তাদের প্রাথমিক চিন্তাভাবনা ছিল সিরিয়ায় গিয়ে আইএসে বিদেশি যোদ্ধা হিসেবে যোগ দেওয়া। বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, সেদিকে এগোতে না পেরে তারা বাংলাদেশে ফিরে গিয়ে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারকে উৎখাতের পরিকল্পনা নেয়।

কাদের ওপর হামলা চালানো হবে, সে বিষয়েও তারা একটি তালিকা করে। ওই তালিকাটি পাওয়া গেছে রহমান মিজানুরের কাছে। এই তালিকায় মন্ত্রী, সাংসদ, সামরিক বাহিনী, পুলিশ, বিডিআর, সরকারী কর্মকর্তা, বুদ্ধিজীবী, সংবাদকর্মী রয়েছেন।

রহমান মিজানুরের কাছ থেকে কি করে বিস্ফোরক বানানো যায় বাংলায় লেখা তার ম্যানুয়াল ও অস্ত্র চালানোর নির্দেশিকা পাওয়া গেছে। তাঁদের কাছে পাওয়া অস্ত্রের সঙ্গে আইএস ও আল-কায়েদা সদস্যদের ব্যবহৃত অস্ত্রের মিল রয়েছে। তবে সিঙ্গাপুরে হামলার কোনো পরিকল্পনা এদের নেই বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।

পাঁচজনের আইএস সম্পৃক্ততা নেই

বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো পাঁচ বাংলাদেশির সঙ্গে ইসলামিক স্টেটের সম্পৃক্ততা খুঁজে পায়নি সিঙ্গাপুর পুলিশ। অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা আইনে তাদেরও গ্রেপ্তার করা হয়। তবে ধর্মীয় কারণে জিহাদে তাদের সমর্থন আছে-এমন মন্তব্য করায় তাদের দেশে ফেরত পাঠানো হয়।

আটককৃত পাঁচজন সম্পর্কে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে বলে বেনারকে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার সানোয়ার হোসেন।

আগেও ফেরত আসে ২৭ জন

এর আগে জঙ্গিবাদে সম্পৃক্ততার অভিযোগে গত বছরের নভেম্বরে কয়েক ধাপে ২৭ জনকে সিঙ্গাপুর থেকে ফেরত পাঠানো হয়। ওই ঘটনায় সন্ত্রাস দমন আইনে বেশ কয়েকটি মামলা হলেও এখন পর্যন্ত পুলিশ অভিযোগপত্র দিতে পারেনি।

অতিরিক্ত উপকমিশনার সানোয়ার হোসেন বলেন, “সন্ত্রাস দমন আইনে করা মামলায় অভিযোগপত্র দায়ের করার নির্দিষ্ট সময় সীমা আছে। সে সময়ের মধ্যেই অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হবে।”

“সিঙ্গাপুর সরকারের অভিযোগের ভিত্তিতে ২৭ জনের বিষয়ে খোঁজখবর করা হয়েছে। এদের মধ্যে ১২ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা মেলেনি। তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তবে পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি) তাদের সম্পর্কে খোঁজখবর রাখছে,” বেনারকে জানান ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের উপকমিশনার মাশরুকুর রহমান।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।