আটজনের ফাঁসি যথেষ্ট নয়, বললেন নিহতের বাবা
2016.04.21

কলকাতার উপকণ্ঠে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন সৌরভ চৌধুরী। সে কারণেই ২০১৪ সালে তাঁকে ওরা কুপিয়ে হত্যা করে বলে পরিবারের দাবি।
কলকাতার আদালত ওই হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্ত ১২ জনের ৮ জনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে গত মঙ্গলবার। একদিন পর সৌরভের বাবা সরোজ চৌধুরী বললেন, “রায়ে আমি আংশিক সন্তুষ্ট।”
সরোজ বলেন, “এটাই যথেষ্ট নয়। আমি অভিযুক্ত ১২ জনের মৃত্যুদণ্ড কামনা করেছিলাম। ওরা বীভৎস কায়দায় আমার সন্তানকে খুন করেছে। হত্যাকারীরা এখনও বেঁচে আছে, এই সত্য আমার পরিবারকে কুরে কুরে খায়। এ যে কি অসহনীয় যন্ত্রণা। যতক্ষণ পর্যন্ত না প্রত্যেকের ফাঁসি হচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত এই যন্ত্রণা উপশম হবে না।”
মঙ্গলবার আদালত শ্যামলসহ আটজনের মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে। এরা হলেন, সুমন সরকার, সুমন দাস, অমল বাড়ৈ, সোমনাথ সরদার, তাপস বিশ্বাস, রতন সমাদ্দার ও তারক দাস।
এর বাইরে অভিযুক্তদের মধ্যে রাকেশ বর্মণকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। কর্মকারের বোন পলি মাইতি, শিশির মুখার্জি ও রতন দাসকে হত্যাকাণ্ডে সহযোগিতার জন্য পাঁচ বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
সাক্ষ্য প্রমাণের অভাবে একজন ছাড়া পেয়েছেন। তবে পলাতক আছেন ১৪ নম্বর অভিযুক্ত লিটন তালুকদার।
“যদিও আমরা আদালতের রায়কে স্বাগত জানাই, তবে আমরা পুরোপুরি সন্তুষ্ট হতে পারছি না্” জানান চৌধুরী । তিনি বারাসাত আদালতের রায়কে চ্যালেঞ্জ করতে উচ্চ আদালতে যাওয়ার কথা বলেন।
চৌধুরী বলেন, “আমাদের সন্তানকে এমন পৈশাচিক কায়দায় হত্যা করার পর আমরা নিশ্চয়ই বসে থাকতে পারি না।”
কুপিয়ে হত্যা
২০১৪ সালের ৪ জুলাই সৌরভকে অপহরণ করা হয় উত্তর চব্বিশ পরগণা জেলা থেকে। অপহরণের দু-চারদিন আগে আগে সৌরভ এলাকায় মদ, জুয়ার কারবারসহ অসামাজিক কার্যক্রমের বিরুদ্ধে সমাবেশ করেছিলেন।
অপহরণের একদিন পর দত্ত পুকুর স্টেশন ও বামন গাছি স্টেশনের মাঝামাঝি জায়গায় রেলপথের কাছে সৌরভের লাশ পাওয়া যায়।
এর আগে একই জায়গায় ব্যাপকভাবে যৌন নির্যাতনের ঘটনার প্রতিবাদ করায় খুন হয়েছিলেন ৩৯ বছর বয়স্ক স্কুল শিক্ষক বরুণ বিশ্বাস।
রাজনীতিবিদ ও মাফিয়াদের যোগসূত্র
ন্যাশনাল ক্যাম্পেইন ফর পিপলস রাইট টু ইনফরমেশনের সহ আহ্বায়ক অঞ্জলি ভরদ্বাজ রাজনীতিবিদ ও মাফিয়াদের যোগসূত্রের ঘটনা যাঁরা উন্মোচন করছেন সেসব মানবাধিকারকর্মী ও প্রত্যক্ষদর্শীদের আইনি সুরক্ষা দিতে না পারায় সরকারের সমালোচনা করেছেন।
তিনি বলেন, ‘দেশে হুইসলব্লোয়ার প্রোটেকশন অ্যাক্ট, ২০১১ থাকার পরও সরকার আইনটির কোনো বাস্তবায়ন করছে না।”
এই আইনে দুর্নীতি বা ক্ষমতার অপব্যবহারকারী সরকারী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে যে কোনো অভিযোগ খতিয়ে দেখা যায় এবং যে ব্যক্তি সরকারী প্রতিষ্ঠান, প্রকল্প ও অফিস সম্পর্কে খবর দেবে তার নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দেওয়ার বিধান আছে।
ভরদ্বাজ বেনার নিউজ কে বলেন, “আইনটি পাস হওয়ার পর এত বছর পেরিয়ে গেলেও সরকার আইনের বাস্তবায়ন করতে যে কার্যকর উদ্যোগ প্রয়োজন ছিল তা নেয়নি। ভারতে অনিয়ম-অনাচারের তথ্যদাতা ও প্রত্যক্ষদর্শীদের অনেকের ওপর আক্রমণ হয়েছে, তাঁদের হত্যাও করা হয়েছে। কিন্তু তাঁদের সুরক্ষায় সরকারকে কোনো উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি।”
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সঞ্জয় পারিখ বেনার নিউজকে বলেন, “রাজনৈতিক অনাচার, ভূমি দস্যুতা, কলকারখানায় অন্যায় অবিচার এ তিনটি বিষয়ে কথা বলার কারণেই প্রধানত মানুষকে আক্রমণ ও হত্যার শিকার হতে হচ্ছে।” এই আইনজীবী নিয়মিত হুমকিতে থাকা মানবাধিকারকর্মীদের প্রতিনিধিত্ব করে থাকেন।
তিনি আরও বলেন, “এই আইন বাস্তবায়নে রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব আছে, এটা খুব বিস্মিত হওয়ার মতো ঘটনা নয়।”
পরিবার সুরক্ষা চায়
চৌধুরী ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা জীবন নিয়ে শঙ্কায় আছেন।
“আমার দুই ছেলের মেধ্য বেঁচে আছে একজন। যখনই সে বাড়ির চৌকাঠ পার হয় তখনই ভয় হয় আমার। কারণ সৌরভের হত্যাকারীদের একজন ছাড়া পেয়েছে, আরও একজন পলাতক আছে।”
চৌধুরীর পরিবারের সুরক্ষায় চারজন পুলিশ সদস্যকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু জেলা আদালতের রায় উচ্চ আদালতে চ্যালেঞ্জ করার প্রস্তুতি নেওয়ায় সৌরভের বাবা পুলিশ আরও বাড়ানোর অনুরোধ করেছেন।
বাসু দেবান, শ্রীধরণ বেঙ্গালুরু ভারত থেকে প্রতিবেদনটি তৈরিতে অবদান রেখেছেন।