আইএসের ভিডিওতে সাবেক নির্বাচন কমিশনারের ছেলে সাফির ধারাভাষ্য

ঢাকা থেকে শাহরিয়ার শরীফ
2016.10.03
20160804-Hasanat-NSU1000.jpg হাসনাত রেজা করিম (মাঝখানে চশমা পরা) ও তাহমিদ হাসিব খানকে (সামনে) আদালতে হাজির করে আটদিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। আগস্ট ৪,২০১৬।
ফোকাস বাংলা

ইসলামিক স্টেট (আইএস) গত ২৩ সেপ্টেম্বর সর্বশেষ যে ভিডিওটি প্রকাশ করে, তাতে ধারাভাষ্য দিয়েছে সাবেক নির্বাচন কমিশনার ও সাবেক স্বরাষ্ট্র সচিবের ছেলে তাহমিদ রহমান সাফি। পুলিশ জানিয়েছে, সাফি সিরিয়ায় পালিয়ে যাওয়া ‘নিও জেএমবি’ সদস্য।

এদিকে কানাডার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র তাহমিদ হাসিব খান জামিনে মুক্ত হওয়ার একদিন পর পুলিশ আভাস দিয়েছে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক হাসনাত করিমও ছাড়া পেতে পারেন। গুলশানের হলি আর্টিজানের ঘটনায় হাসনাতের জড়িত থাকার অভিযোগ এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।

গতকাল সোমবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক অনানুষ্ঠানিক ব্রিফিংয়ে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইম বিভাগের প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেন, “তাহমিদ গুলশানের হলি আর্টিজানে হামলায় জড়িত ছিল না বলেই আমাদের মনে হয়েছে। তবে সে কিছু তথ্য চেপে যায়। পুলিশকে অসহযোগিতার কারণে তাকে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছিল।”

কি ধরনের অসহযোগিতা তাহমিদ করেছে—এমন প্রশ্নে মনিরুল বলেন, তাকে পুলিশ ছেড়ে দিয়েছিল। এরপর বেশ কয়েকবার তাকে নোটিশ দেওয়া হলেও সে পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। তবে তাহমিদ হাসিব খান কোথায় ছিল, সে বিষয়ে মনিরুল কিছু বলেননি।

সংবাদ সম্মেলনে হাসনাত করিম সম্পর্কে মনিরুল ইসলাম আরও বলেন,  “হাসনাত করিম গুলশান হামলার ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার সন্দেহভাজন আসামি। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। টিএফআই সেলে পাঠানো হয়েছিল জিজ্ঞাসাবাদের জন্য।”

এক প্রশ্নের জবাবে মনিরুল জানান, “টিএফআই সেলের তথ্য এখন পর্যন্ত আমরা পাইনি। সেটা পেলে এবং তদন্তকারী কর্মকর্তা জিজ্ঞাসাবাদে যতটুকু জানতে পেরেছেন, দুটো মিলিয়ে আমরা উপসংহারে পৌঁছাতে পারব।”

গত ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টি আর্টিজানে হামলার পর সেখান থেকে ৩২ জনকে উদ্ধার করে পুলিশ। অন্যদের ছেড়ে দেওয়া হলেও তাহমিদ হাসিব খান ও হাসনাত করিমকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইম বিভাগে রেখে দেওয়া হয়।

৭ জুলাই মনিরুল ইসলাম বলেন, পুলিশের হেফাজতে আর কেউ নেই। ৪ আগস্ট তাহমিদ হাসিব খান ও হাসনাত করিমকে সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। মাঝখানে একমাস এ দুজন কোথায় ছিল সে সম্পর্কে সরকারের বাহিনিগুলো থেকে পরিষ্কারভাবে কখনই কিছু জানানো হয়নি।

তাহমিদ হাসিব খান ফাইল ফটো পারিবারিক সূত্র।

গতকাল পুলিশের কাউন্টর টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইম বিভাগের উপকমিশনার মো. ছানোয়ার হোসেন বেনারকে বলেন, “অসহযোগিতার বিষয়টি প্রমাণ হলে তাহমিদ হাসিব খানের শাস্তি হতে পারে।

আইএসের নতুন ভিডিওতে সাফির ধারাভাষ্য

গত ২৩ সেপ্টেম্বর আইএসের প্রকাশিত ভিডিওটি প্রসঙ্গে মনিরুল ইসলাম বলেন, “সফটওয়্যারের মাধ্যমে বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এটির যে ব্যাকগ্রাউন্ড তা পরে যুক্ত করা হয়েছে। আর এতে কণ্ঠ শোনা গেছে সিরিয়ায় পালিয়ে যাওয়া নিও জেএমবি সদস্য তাহমিদ রহমান সাফির।”

 

 

তাহমিদ রহমান সাফি। ফাইল ফটো, স্টার মেইল।

সাফি সাবেক স্বরাষ্ট্র সচিব ও সাবেক নির্বাচন কমিশনার শফিউর রহমানের ছেলে। বিএনপি–জামায়াত জোট সরকারের মেয়াদে তিনি এসব গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন।

এর আগে গত ৫ জুলাই গুলশানে হামলাকারীদের প্রশংসা করে আইএসের নামে তিনজনের যে ভিডিওটি প্রকাশ করা হয়, তাতেও সাফি অংশ নিয়েছিল।

মনিরুল ইসলাম জানান, সাফি বর্তমানে সিরিয়ায় আছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানতে পেরেছে পুলিশ। দেশে এলেই তাকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হবে।

ভিডিওতে সিরিয়ায় অবস্থানকারী সাফি অংশ নিলেও, সেটি কোথায় ধারণ করা হয়েছে সে সম্পর্কে মনিরুল কোনো তথ্য দেননি।

তাহমিদ রহমান সাফি গত ১৪ ফেব্রুয়ারী মধুচন্দ্রিমায় মালয়েশিয়া যাওয়ার কথা বলে ঘর ছাড়ে। এরপর আর ফিরে আসেনি। সে ও তার স্ত্রী সায়েমা খান দুজনেই সিরিয়ার রাকায় আছে বলে জানা গেছে।

সম্প্রতি তারা একটি কন্যা সন্তানের বাবা-মা হয়েছে বলেও পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে। তাহমিদ প্রায়ই তার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে, তবে পরিবারের কেউ তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না।

অব্যাহতি পেতে পারেন হাসনাত করিম?

পুলিশের বক্তব্য থেকে ধারণা করা হচ্ছে, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক হাসনাত করিম ছাড়া পেতে পারেন।

“দীর্ঘ তদন্তে মনে হয়েছে, হাসনাত করিম ঘটনার শিকার হয়েছিলেন,” বেনারকে জানান ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া ও গণসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার মাসুদুর রহমান।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, হাসনাত করিম মামলা থেকে অব্যাহতি পাচ্ছেন কিনা, তা এখনই নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না। তবে মামলার প্রয়োজনে পুলিশ যে কাউকে গ্রেপ্তার ও জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারে।

হাসনাত করিম ফাইল ফটো পারিবারিক সূত্র।

পুলিশের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, হামলার পরদিন সকালে পুলিশ হলি আর্টিজান থেকে ৩২জনকে উদ্ধার করে। তাদের সবাই এক জায়গায় ছিলেন না। তবে বক্তব্য যা পাওয়া গেছে তাতে ধারাবাহিকতা ছিল।

শেষ পর্যন্ত পুলিশ ১৪ জনের সাক্ষ্য নেয়। তাদের মধ্যে ফাইরুজ মালিহা, তাহানা তাসমিয়া ও ভারতীয় চিকিৎসক সত্য পল প্রকাশ তিনজনই ১৬৪ ধারায় দেওয়া জবানবন্দিতে উল্লেখ করেছেন যে, হামলাকারিরা তাদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেছিল।

তাহমিদ হাসিব খানকে অস্ত্র ধরতে দেওয়া হলে সে কেঁদে ফেলে। হাসনাত করিম খানকে দিয়ে দরজা খোলানো হয়েছিল এই চিন্তা থেকে যে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনির গুলিতে যেন তিনি আগে আক্রান্ত হন।

মামলার অগ্রগতি সম্পর্কে তদন্ত সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেনারকে বলেন, গুলশান হামলার পরিকল্পনাকারীদের মধ্যে কেউ কেউ ইতিমধ্যে অভিযানে নিহত হয়েছেন বা আত্মহত্যা করেছেন। পলাতক মারজান, জাহাঙ্গীর ওরফে রাজীব এবং চকলেট ওরফে বাশারুজ্জামানকে গ্রেপ্তার করতে পারলে এ ঘটনার পুরো রহস্য উন্মোচিত হবে।

ওই কর্মকর্তা বলেন, আজিমপুরে জঙ্গিবিরোধী অভিযানে নিহত তানভীর কাদেরীর ছেলে পুলিশের কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। এই জবানবন্দির মাধ্যমে গুলশান হামলা সম্পর্কে কিছু প্রমাণ পাওয়া গেছে।

এ ছাড়া কল্যাণপুরের অভিযানে আহত রাকিবুল হাসান রিগ্যানকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। গতকাল বিকেলেই রিগ্যান স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে, তাতেও বেশকিছু নতুন তথ্য পাওয়া গেছে বলে জানান ওই কর্মকর্তা।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।