৫৪ ধারা থেকে অব্যাহতি পেলেন তাহমিদ ও হাসনাত
2016.10.05
কানাডার টরেন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইফ সায়েন্স বিভাগের ছাত্র তাহমিদ হাসিব খান জামিনে মুক্তি পাওয়ার তিনদিনের মাথায় ৫৪ ধারার অভিযোগ থেকেও মুক্তি পেলেন। গতকাল বুধবার ঢাকার মহানগর হাকিম নূর নবী এই আদেশ দেন।
একই ঘটনায় করা মামলায় গ্রেপ্তার নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক হাসনাত রেজা করিমকেও ৫৪ ধারা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
গুলশানের হলি আর্টিজানে হামলা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইম বিভাগের পরিদর্শক হুমায়ূন কবীর বলেন, “তদন্তে দুজনের সম্পৃক্ততার অভিযোগ পুলিশ পায়নি। সে কারণে ৫৪ ধারা থেকে অব্যাহতি চেয়ে পুলিশ আদালতে আবেদন করার সিদ্ধান্ত নেয়।”
উল্লেখ্য, সিআরপিসির ৫৪ ধারাটি সন্দেহভাজন কাউকে গ্রেপ্তারে ব্যবহার করা হয় এবং এই ধারাটি খুবই বিতর্কিত। এই ধারায় আসামি গ্রেপ্তারের ক্ষেত্রে মাসকয়েক আগে উচ্চ আদালত বেশকিছু নির্দেশনা দিয়েছে।
গত ২৮ সেপ্টেম্বর আদালতে প্রতিবেদন দিয়ে তাহমিদকে ৫৪ ধারার অভিযোগ থেকে অব্যাহতির আবেদন করে পুলিশ। গত ২ অক্টোবর তাহমিদ হাসিব খান প্রথমে জামিনে মুক্তি পান।
পুলিশের ওই আবেদনের ওপর তাহমিদ হাসিব খান ও হাসনাত রেজা করিমের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল। শুনানির সময় তাহমিদ আদালতে উপস্থিত থাকলেও হাসনাত করিম কারাগারে ছিলেন।
তবে, ৫৪ ধারা থেকে অব্যাহতি পেলেও গুলশানের হলি আর্টিজানে হামলার ঘটনা থেকে পুরোপুরি মুক্তি মিলছে না কারোই।
নতুন করে তাহমিদ হাসিব খানের বিরুদ্ধে পুলিশকে অসহযোগিতার অভিযোগ আনা হয়েছে। আগামী ৫ অক্টোবর এই অসহযোগিতার ধরন আমলযোগ্য কি না সে সম্পর্কে আদালতে শুনানির কথা রয়েছে।
অন্যদিকে হাসনাত রেজা করিমের বিরুদ্ধে গুলশানের হলি আর্টিজানে হামলার ঘটনায় গত ১৩ আগস্ট সন্ত্রাস বিরোধী আইনে মামলা হয়েছে। ওই মামলায় গ্রেপ্তার হাসনাত এখন কাশিমপুর কারাগারে আছেন।
তাহমিদ প্রায় তিন মাস পর বাড়ি ফিরতে পারলেও হাসনাতের আশু মুক্তির সম্ভাবনা নেই।
৫৪ ধারা থেকে অব্যাহতি পাওয়ায় তাহমিদ হাসিব খানের পরিবারের প্রতিক্রিয়া জানতে বেনারের পক্ষ থেকে তাঁর বাবার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলেও তাঁকে পাওয়া যায়নি।
তবে কানাডা ভিত্তিক একটি সংবাদ মাধ্যম তাহমিদ হাসিব খানের ভাই তালহা খানকে উদ্ধৃত করে বলেছে, তিনি এখন ‘ভারমুক্ত’ বোধ করছেন। তবে পরিস্থিতি এখনও ‘জটিল’।
হাসনাত রেজা করিমের বাবা রেজাউল করিম গতকাল রাতে মুঠোফোনে বেনারকে বলেন, “আমি এখনও ভারমুক্ত বোধ করছি না। সন্ত্রাস বিরোধী আইনে মামলাটা রয়ে গেছে। যতদিন পর্যন্ত ওই মামলা থেকে হাসনাত অব্যাহতি না পাচ্ছে, ততদিন পর্যন্ত ভারমুক্ত বোধ করার কোনো সুযোগ নেই।”
তিনি বলেন, তিনি ও তাঁর পরিবার আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। গুলশানের হলি আর্টিজানের ন্যক্কারজনক হামলার তদন্তে তাঁরা সর্বোচ্চ সহযোগিতা করতে চান। রেজাউল করিম আশা করেন, প্রক্রিয়া দীর্ঘ হলেও প্রমাণিত হবে যে হাসনাত রেজা করিম ওই ঘটনায় জড়িত ছিলেন না।
তাহমিদ হাসিব খানের পক্ষে কানাডিয় আইনজীবী মার্লিজ এডওয়ার্ড সিবিসি নিউজকে দেওয়া সাক্ষাতকারে বলেছেন, “তাহমিদের বিরুদ্ধে পুলিশ নির্দেশ দেওয়া সত্ত্বেও ১০ জুলাই ও ২১ জুলাই উপস্থিত না হওয়ার অভিযোগ তুলেছে। কিন্তু ওই দুদিন তাহমিদ আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতেই ছিল। ১৬ জুলাইও তাহমিদকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।”
তাহমিদ ও হাসনাত ঘটনার শিকার
পত্রপত্রিকায় গুলশানের হলি আর্টিজানের ছাদে হামলাকারী রোহান ইমতিয়াজের সঙ্গে তাহমিদ হাসিব খান ও হাসনাত রেজা করিমের একটি ছবি প্রকাশের পর গুলশান হামলায় তাদের জড়িত থাকা না থাকা নিয়ে নানা বিতর্ক শুরু হয়।
গতকালও ৫৪ ধারা থেকে অব্যাহতি পাওয়ার পর এই বিতর্ক অব্যাহত ছিল।
তবে অভিযানে অংশ নেওয়া পুলিশ কর্মকর্তা ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে তাহমিদ ও হাসনাতের সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
ভারতীয় চিকিৎসক সত্য পাল প্রকাশের ১৬৪ ধারার জবানবন্দিতে এ দুজনের ভূমিকা সম্পর্কে বলা হয়েছে, “টেবিলের নিচে দুই নারী লুকিয়ে ছিলেন। ওই মেয়েরা এবং তাঁদের সঙ্গে থাকা একজন তরুণকে ছেড়ে দিতে তাঁরা কাকুতি-মিনতি করছিলেন।”
তাহমিদ হাসিব খান তাঁর দুই বান্ধবী তাহানা তাসমিয়া ও মালিহা ফাইরুজের সঙ্গে ওই দিন রেস্তোরাঁয় খেতে গিয়েছিলেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক পুলিশ কর্মকর্তা বেনারকে বলেন, ওই দুই নারীও জবানবন্দিতে বলেছেন, তাঁদের অনুরোধেই তাহমিদ ওই রেস্তোরাঁয় গিয়েছিলেন। আর হাসনাত করিম খান গিয়েছিলেন তাঁর মেয়ের জন্মদিন পালন করতে।
গত ১ জুলাই রাতে জঙ্গিরা গুলশানের হলি আর্টিজানে হামলা চালিয়ে ১৭ বিদেশি নাগরিকসহ ২০ জনকে নৃশংসভাবে হত্যা করে। তার আগে জঙ্গিদের বোমার আঘাতে পুলিশের দুই কর্মকর্তা নিহত হন।
পরদিন সকালে সেনা কমান্ডোদের অভিযানে হামলাকারী পাঁচ জঙ্গিসহ ছয়জন নিহত হয়। অভিযানের আগে ও পরে ওই রেস্তোরাঁ থেকে উদ্ধার করা হয় ৩২ জন জিম্মিকে। তাঁদের মধ্যে তাহমিদ ও হাসনাত ছিলেন। ৩ আগস্ট ওই দুজনকে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখায় পুলিশ।