গরমে পুড়ছে দেশ, বেড়েছে রোগ–বালাই, বৃষ্টির জন্য প্রার্থনা

ঢাকা থেকে জেসমিন পাপড়ি
2016.04.27
20160427-Hit-Wave-BD620.jpg প্রচণ্ড গরমে অসুস্থ হয়ে পড়ছে শিশুরা। খুলনা শিশু হাসপাতালে অসুস্থ শিশুরা। এপ্রিল ২৬, ২০১৬।
ফোকাস বাংলা

বুধবার সকাল ১১টা। দিনের শুরুর দিকের সময় হলেও সূর্য যেন দ্বিগুন তেজে তাপ ছড়াচ্ছে। এমন তাপদাহের মধ্যে পুড়তে পুড়তে শিশু সন্তানকে নিয়ে রাজধানীর নীলক্ষেত মোড় থেকে ঢাকা বিশ্ববিদালয়ের টিএসসি যাওয়ার জন্য রিকশা খুঁজে হয়রাণ হচ্ছিলেন জান্নাত সরকার।

কিন্তু মাত্র এক কিলোমিটারের পথ যেতে স্বাভাবিকের চেয়ে দ্বিগুন ভাড়া চান প্রায় প্রতিটি রিকশাওয়ালা। শেষমেষ নিরুপায় হয়ে ১৫ টাকার ভাড়া ৩০ টাকা দিতে রাজি হন জান্নাত।

অতিরিক্ত ভাড়া চাওয়ার কারণ জানতে চাইলে রিক্সা চালক জয়নুল মোল্লা বলেন, “এত গরমে অল্প সময় রিক্সা চালিয়ে ক্লান্ত হয়ে যাই। তাই অল্প পথে বেশি টাকা রোজগারের চেষ্টা করি। আবার এমন সময়ও আসে, যখন যাত্রীরা টাকা বেশি দিতে চাইলেও শরীর পেরে ওঠে না।”

শুধু রাজধানী ঢাকাতেই নয় , গরমের কারণে এমনই ‘অস্থির’ অবস্থা বিরাজ করছে সারা দেশে। প্রায় মাসব্যাপী তীব্র গরমে নানা রকম অসুখে আক্রান্ত হচ্ছে শিশুসহ নানাবয়সী মানুষ। অবস্থা এতটাই খারাপ যে, বৃষ্টি চেয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রার্থনা চলছে।

এদিকে আবহাওয়াবিদেরাও তেমন সুখবর দিতে পারছেন না। বরং এ তাপমাত্রা আরো বাড়তে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

একমাত্র সিলেট ছাড়া সারাদেশেই  বাতাসের সঙ্গে যেন আগুনের হল্কা বইছে। সূর্যের তাপে গলে যাচ্ছে রাস্তার পিচও। গুরুত্বপূর্ণ কাজ ছাড়া ঘর থেকে বের হচ্ছে না মানুষ।

এমনকি গরমের কারণে স্কুল-কলেজগুলোতেও শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কমে এসেছে। ভ্যাপসা গরমে খেটে খাওয়া মানুষসহ সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে।

গরমের কারণে গত কয়েক দিনে সারা দেশে ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন ধরনের রোগের প্রকোপ বেড়েছে। গত এক সপ্তাহে রাজধানীর আইসিডিডিআরবিতে সহস্রাধিক রোগী ভর্তি হয়েছে।

বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত হাসপাতালটিতে ভর্তি হয় ৪৭০ জন রোগী। এর আগে মঙ্গলবার ভর্তি হয় ৪৫৫জন, সোমবার ৪৩৮ জন, রোববার ৫২২ জন, আর শনিবারে ভর্তি হয় ৫১৫ জন।

এ বিষয়ে হাসপাতালের প্রধান চিকিৎ​সক আজহারুল ইসলাম বেনারকে বলেন, “রোগীদের ২০ থেকে ২৫ শতাংশ তীব্র ডায়রিয়া বা কলেরা নিয়ে ভর্তি হচ্ছে। ভর্তি হওয়া রোগীদের বিরাট একটি অংশ শিশু।”

এমন পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকারও সতর্ক রয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ১৬২৬৩ নম্বরে ফোন করলে চিকিৎসকের পরামর্শ পাওয়া যাচ্ছে ২৪ ঘণ্টা।

অধিক তাপমাত্রার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ফসলের মাঠও। দেশের বিভিন্ন স্থানে টিউবওয়েল ও স্যালো মেশিনে পানি উঠছে না। ফলে পাট ক্ষেত, ধান ক্ষেতে পানির চাহিদা মেটাতে পারছেন না কৃষকেরা।

টাঙ্গাইলের কৃষক মোতালেব হোসেন বেনারকে বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে বৃষ্টি নেই। রোদের তাপে পুড়ছে ফসলের মাঠও। এদিকে গভীর নলকূপেও পানি পাচ্ছি না। দারুণ পানি সংকটে আমার পাট ক্ষেত শুকিয়ে যেতে শুরু করেছে। এখন বৃষ্টির জন্য প্রার্থনা ছাড়া কিছুই করার নেই।”

তবে তাপমাত্রা নিয়ে কষ্টে থাকলেও ‘বৃষ্টি না হওয়া নিয়ে’ কিছুটা স্বস্তিতে আছেন বোরো চাষীরা।

এ প্রসঙ্গে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরিচালক চৈতন্য কুমার দাস বেনারকে বলেন, “এখন বোরো ধান সংগ্রহের সময়। সারা দেশের প্রায় সাত মাসের খাদ্য জোগান হয় এই বোরো থেকে। তাই বৃষ্টি না হওয়ায় খুশি বোরো চাষীরা।”

এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তরও কোনো সুখবর দিতে পারছেনা।   আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ বৃহস্পতিবার বেনারকে বলেন, “আগামী ৩ থেকে ৪ দিন ঢাকায় ৩৬ থেকে ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বহাল থাকবে। আর দেশে যে তাপমাত্রা বয়ে যাচ্ছে তাকে মৃদু বা মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বলা যেতে পারে।”

গত প্রায় একমাস ধরেই গড়ে তাপমাত্রা ৩৭-৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস যাচ্ছে বলে জানান তিনি।

আগামী কয়েকদিনও একই তাপমাত্রা বিরাজ করবে জানিয়ে এই আবহাওয়াবিদ বলেন, “আগামী ৩-৪ দিনের মধ্যে দু’একটি স্থানে বাদে দেশে বৃষ্টির হওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।”

আবহাওয়াবিদদের আশঙ্কা এ বছর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে যেতে পারে। এর আগে ১৯৭২ সালের ৩০ মে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪৫ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস রাজশাহীতে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বৈশ্বিকভাবেই তাপমাত্রা বাড়ছে। সামনে আরো খারাপ সময় আসতে পারে।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. শহিদুল ইসলাম বেনারকে বলেন, “স্মরণকালের ভয়াবহ গরমের অন্যতম কারণ জলবায়ু পরিবর্তন ও এল নিনোর প্রভাব। এটা আমাদের মত কৃষি প্রধান দেশের জন্য মোটেই ভাল খবর নয়।”

তাঁর মতে, বিষয়টি এখন আর অবহেলা করার মতও নয়। সরকারকে এখনই এল নিনো ও জলবায়ুর প্রভাব মোকাবেলার প্রস্তুতি নিতে হবে।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।