বিচারবহির্ভূত হত্যার চেয়ে মানুষের নিগৃহীত হওয়া গুরুত্বপূর্ণ: এইচআরসি চেয়ারম্যান

ঢাকা থেকে শাহরিয়ার শরীফ
2016.04.15
HRC-Chairman-Mizanur-Rahman620.jpg মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান
অনলাইন

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের বার্ষিক মানবাধিকার প্রতিবেদনে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডকে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য মানবাধিকার সমস্যা হিসেবে উল্লেখ করা হলেও এর সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করেছেন বাংলাদেশের মানবাধিকার কমিশনের (এইচআরসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক মিজানুর রহমান।

“আমার মতে, ওই প্রতিবেদনে বেশি গুরুত্ব পাওয়া উচিত ছিল, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের নিগৃহীত ও হয়রানির শিকার হওয়ার বিষয়গুলো,” বেনারকে জানান ড. মিজান।

তিনি বলেন, মানবাধিকার কমিশনে জমা পড়া বেশিরভাগ অভিযোগই আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে সাধারণ মানুষের হয়রানি সংক্রান্ত, যা ওই প্রতিবেদনে গুরুত্ব পায়নি।”

বিশ্বের ২০১৫ সালের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের করা ওই প্রতিবেদনটি গত বুধবার অবমুক্ত করেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি। এ সময় কেরি বলেন, মানবাধিকার পরিস্থিতি উন্নয়নে সব দেশের, এমনকি যুক্তরাষ্ট্র সরকারেরও করণীয় রয়েছে।

ওই মানবাধিকার প্রতিবেদনে বলা হয়, নিরাপত্তাবাহিনী আইনের অপপ্রয়োগ করছে এবং দায়ী লোকজনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সরকার ব্যর্থ হয়েছে।

প্রতিবেদনের এসব বক্তব্য প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মিজানুর রহমান বলেন, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডকে অধিক গুরুত্ব দেওয়া হলেও এটা এই সময়ে এতটা গুরুত্ব পাওয়ার কথা নয়। সংবাদমাধ্যম ও মানবাধিকার সংগঠনগুলোর তথ্য থেকে বোঝা যায়, এ ধরনের হত্যাকাণ্ড বন্ধ হয়নি, তবে কমেছে।

“সাধারণ নাগরিকদের হয়রানি বন্ধে কমিশন সরকার ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করে আসছে। কিছু ক্ষেত্রে সুফল পাওয়া যাচ্ছে, অনেক ক্ষেত্রে আবার পাওয়া যাচ্ছে না,” জানান অধ্যাপক মিজান।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, দায়মুক্তির সুযোগে র‍্যাবসহ অন্যান্য বাহিনীগুলো ক্ষমতার অপব্যবহার করেছে।দেশের সুশীল সমাজ ও মানবাধিকার সংগঠনগুলোও এই দায়মুক্তির বিরুদ্ধে সোচ্চার।

“আমরা বারবার বলে আসছি, কাউকে জবাবদিহির ঊর্ধ্বে রাখা উচিত নয়।কেউ গুম হলে বা ক্রসফায়ারের স্বীকার হলে রাষ্ট্র বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নীরব থাকা মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন,” জানান মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান।

প্রতিবেদনে সরকারি বাহিনীর হত্যাকাণ্ডের বিবরণ দিয়ে বলা হয়েছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানের সময় সন্দেহজনক মৃত্যু, ক্রসফায়ার ও গুমের ঘটনা ঘটছে।

“এসব ঘটনা তো আছেই। কিন্তু মানবাধিকার লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে এগুলোর চেয়ে আরও গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা আছে।যখন একজন সাধারণ নাগরিককে ধরে নেওয়া হয় এবং সে দিনের পর দিন ও মাসের পর নিখোঁজ থাকে, তখন আইন শৃঙ্খলা বাহিনী বা রাষ্ট্রের চুপ থাকা মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন,” জানান মিজানুর রহমান।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়ার সমালোচনা করা হয়েছে প্রতিবেদনে। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে যারা বিরোধিতা করেছিলেন, হত্যা ও ধর্ষণের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছিলেন, তাঁদের বিচারের জন্য এই ট্রাইব্যুনাল গঠিত হয়।

“আমার মতে, নানা সমালোচনা ও সীমাবদ্ধতার মধ্যেও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ করছে। এ ধরনের বিচারে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড সৃষ্টি করছে বাংলাদেশের মতো একটি ছোট রাষ্ট্র। এ জন্য দেশটিকে সম্মান ও স্বীকৃতি দেওয়া উচিত,” জানান অধ্যাপক মিজান।

প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি বলেন, প্রতিবেদনে প্রকাশিত বিষয়গুলো যুক্তরাষ্ট্রের বানানো নয়। যুক্তরাষ্ট্র মানবাধিকারের কোনো মানদণ্ড নির্ধারণ করে দিতে চায় না।মানবাধিকারের বিষয়গুলো আন্তর্জাতিক এবং বিশ্বের বেশির ভাগ দেশ এসব মেনে চলতে অঙ্গীকারবদ্ধ।

উল্লেখ্য, গত চার দশক ধরে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিবছর বিশ্বের দেশগুলোর মানবাধিকার নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করছে। কংগ্রেসে প্রণীত আইনের ফলে মার্কিন সরকারের এই প্রতিবেদন প্রকাশ করা বাধ্যতামূলক।

এর ওপর ভিত্তি করে যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক সাহায্য, নিরাপত্তা সহযোগিতা নির্ধারিত হয়ে থাকে। সারা বিশ্বের মানবাধিকারকর্মী, সরকারি মহল, শিক্ষা ও গবেষণায় এই প্রতিবেদন গুরুত্বপূর্ণ দলিল হিসেবে কাজ করে।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।