সাম্প্রতিক হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে সংখ্যালঘুদের মানববন্ধন
2016.06.08
নাটোরে নিরীহ খ্রিষ্টান ব্যবসায়ী সুনীল গমেজসহ সাম্প্রতিক নৃশংস হত্যাকাণ্ডগুলোর প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে পড়ে সংখ্যালঘুদের প্রতিনিধিত্বকারি বিভিন্ন সংগঠন। গতকাল বুধবার ঢাকার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানবন্ধন কর্মসূচির মাধ্যমে এসব ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করা হয়।
সুনীল হত্যার প্রতিবাদে খ্রীষ্টান অ্যাসোসিয়েশন এই কর্মসূচির ডাক দিলেও এতে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সব সংগঠনের নেতা এবং রাজধানীর একটি মসজিদের ইমাম যোগ দেন। গত ৫ জুন সুনীলকে হত্যা করা হয়। একইদিন চট্টগ্রামে হত্যা করা হয় পুলিশ কর্মকর্তা বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানমকে।
মানববন্ধন কর্মসূচী চলাকালে অনুষ্ঠিত সমাবেশে খ্রীষ্টান অ্যাসোসিয়েশনের উপদেষ্টা হিউবার্ট গমেজ বলেন, “আমরা এভাবে রাজপথে আসতে চাই না, জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে দাঁড়াতে চাই না। কিন্তু আজ আমরা আসতে বাধ্য হয়েছি। কারণ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়সহ অন্যদের হত্যা ও নির্যাতনের ঘটনায় আমরা গভীরভাবে মর্মাহত।”
তিনি আরও বলেন, দেশের মানুষ এখন উদ্বেগ–উৎকন্ঠায় আছেন। তাঁরা এসব নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পুণারাবৃত্তি আর দেখতে চায় না। এগুলো বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান ওই খ্রীষ্টান নেতা।
“আমরা নিরাপত্তা চাই। সব ঘটনার রহস্য উদঘাটনের কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। আমরাও তা চাই,” সমাবেশে জানান সাবেক রাষ্ট্রদূত ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নিম চন্দ্র ভৌমিক।
ওই অধ্যাপক বলেন, সরকারও আজ উদ্বিগ্ন। প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিচ্ছেন। কিন্তু এখন আর নির্দেশে সীমাবদ্ধ থাকলে হবে না। সরকার বলছে, ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু এ ধরনের হত্যা তো থামছে না।
এ ধরণের দুর্বৃত্তদের চিহ্নিত করে দ্রুত বিচার আদালতে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়ার আহ্বান জানান ড. ভৌমিক।
তিনি আরও বলেন, “প্রায় প্রতিটি ঘটনার পর আইএসের নামে দায় শিকার করা হচ্ছে। এর সত্য–মিথ্যা আমরা জানি না। কিন্তু সরকারের দায়িত্ব জড়িতদের খুঁজে বের করে শাস্তি দেওয়া।”
দেশের নাগরিক, ধর্মীয় ও সামাজিক সংগঠনগুলোকে দুর্বৃত্তদের প্রতিরোধে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান ড. ভৌমিক।
সমাবেশে বক্তৃতা করেন হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদের উষাতন তালুকদার ও সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত, কারওয়ানবাজার আম্বরশাহ জামে মসজিদের খতিব মাজহারুল ইসলাম, খ্রীষ্টান অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব নির্মল রোজারিও, বুড্ডিস্ট ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক অশোক বড়ুয়া প্রমুখ।
পাকিস্তান দূতাবাস ঘেরাও
সম্প্রতি দেশে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন হত্যাকাণ্ডে পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ তুলে বুধবার রাজধানীর গুলশানে পাকিস্তান দূতাবাস ঘেরাও কর্মসূচি পালন করেছে কয়েকটি সংগঠন।
এসব সংগঠনের মধ্যে রয়েছে; জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা সমন্বয় কমিটি, আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, শ্রমিক লীগ, ছাত্রলীগসহ বেশ কয়েকটি সংগঠন। এই কর্মসূচি পালনের সময় গুলশান ২ নম্বর থেকে পাকিস্তান দূতাবাস পর্যন্ত সড়কে যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়।
এই কর্মসূচি পালনের জন্য সকাল থেকে বিপুলসংখ্যক লোক গুলশান ২ নম্বর চত্বরে এসে সমবেত হন। একপর্যায়ে তাঁরা চত্বর থেকে পাকিস্তান দূতাবাস অভিমুখী সড়কের দিকে যেতে চাইলে পুলিশ বাধা দেয়।
গুলশান ২ নম্বরে বসতি টাওয়ারের সামনে দেওয়া পুলিশের ওই ব্যারিকেডে ১০ থেকে ১৫ মিনিট অবস্থান নেন নেতা-কর্মীরা। সেখানে সমাবেশে নেতারা বক্তব্য দেন।
এসময় বক্তারা বলেন, পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই ও ইসরায়েলের মোসাদ এ দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। এই ষড়যন্ত্রের কারণেই হত্যাকাণ্ডগুলো ঘটছে।
জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা সমন্বয় কমিটির সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী এ বি এম তাজুল ইসলাম বলেন, ‘যতই ষড়যন্ত্র হোক না কেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধারা ফিরে যাবেন না’।
“কূটনৈতিক এলাকায় মিছিল-সমাবেশ করে ভেতরে যাওয়া যায় না। তাই পুলিশ ব্যারিকেড দিয়েছে। তবে কর্মসূচি ছিল শান্তিপূর্ণ,” বেনারকে জানান পুলিশের গুলশান বিভাগের উপকমিশনার মোশতাক আহমেদ খান।