কলকাতায় মিশনারি স্কুলের সিস্টার ধর্ষণের ঘটনায় বিশ্বব্যাপি প্রতিক্রিয়া,৮জনকে আটক করেছে পুলিশ
2015.03.16
শুক্রবার রাতে কলকাতার রানাঘাটে একটি মিশনারি স্কুলে যে নারকীয় ঘটনা ঘটেছে, সেই ঘটনায় জড়িতদের গত তিনদিনে এখনও কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। তবে বিভিন্ন এলাকায় তল্লাশি চালিয়ে ৮ জনকে আটক করেছে। খবর বেনার নিউজ প্রতিনিধি ও কলকাতার গণমাধ্যম।
এদিকে কলকাতায় হাজার হাজার মানুষ প্রতিবাদে ফেটে পড়ে রানাঘাটে ৭৪ বছর বয়েসি নানকে ধর্ষণের ঘটনায়।অংশ নেয় প্রিস্ট, নান ও মিশনারি স্কুল সমূহের ছাত্র-ছাত্রী ও সাধারণ মানুষ।রাজ্যের রাজধানী থেকে ২০০ কিমি দূরে রানাঘাট শহরে এই ঘটনা ঘটে।
প্রিন্সিপ্যাল সহ তিনজন নান এই মিশনারির আবাসিক গৃহে বসবাস করছে। ঘটনার রাতে দেড়টা থেকে সারে ৪টা পর্যন্ত লুটপাট চালায়। এবং বয়স্ক নানকে ধর্ষণ করে।৭ লাখ রুপি নগদ ক্যাশ মূল্যবান জিনিসপত্র হামলাকারীরা নিয়ে যায়। অন্যান্য নানদেরকেও নির্যাতন করে।এই এলাকায় ৪০০ পরিবার বসবাস করে, তাদের অধিকাংশই খ্রিস্টান।এই এলাকার অনেকে মধ্যপ্রাচ্যের আরব দেশে চাকরী করে। এই মিশনারির জন্য তারা নিয়মিত অর্থ পাঠিয়ে থাকে। সেই গচ্ছিত অর্থই লুট করে নিয়ে যায় হামলাকারীরা।
এই ঘটনা সারা ভারতে এবং বিশ্বব্যাপি খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে।ঘটনার পর রোম থেকে রিলিজিয়াস জেসাস মেরি এন্ড মাদারের সিস্টার আইরিন রোববার রানাঘাটে নানদের কাছে চলে আসে।
পুলিশ ঘটনার সাথে জড়িত ১১জনকে খুঁজে বেড়াচ্ছে।
আটক ৮ জনের মধ্যে সি সি টিভির ফুটেজের একজনের চেহারার সঙ্গে মিল খুঁজে পাচ্ছেন সি আই ডি গোয়েন্দারা। এদিকে, কিছুদিন আগেই ওই মিশনারি স্কুল থেকে এক নিরাপত্তা রক্ষীকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। পুলিশ এই ঘটনার জেরে তাকেও খুঁজছে।
অভিযোগ উঠেছে, ঘটনায় জড়িত- থাকা দুষ্কৃতীদের কয়েকজন শাসকদল তৃণমূলেরও ঘনিষ্ট৷ স্বভাবতই বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি এ ব্যাপারে আরও গলা চড়িয়েছে। অন্য দিকে, ঘটনার তীব্রতায় স্কুলের ছাত্রী থেকে এলাকার বাসিন্দা ক্ষোভে সবাই যেমন ফুঁসছে, তেমনি তাদের নিরাপত্তা নিয়েও তারা আতঙ্কিত।
এতটাই আতঙ্কিত স্কুলের ছেলেমেয়েরা– তারা রবিবার দিনও স্কুলের পোশাক পরে স্কুলে চলে এসে মিছিলে যোগ দিচ্ছে। স্কুলের মধ্যে আতঙ্কের ছাপ নিয়ে বসে থাকছে। এ ব্যাপারে স্কুলের এক ছাত্রী জানান, আমাদের ওপরই এমন হয় কেন বলতে পারেন? আমরাও ওদের কারোর বোন, মা, ঠাকুমা৷ আগে আমাদের মা, ঠাকুমা বলতেন, একা যাবি, চল, আমি যাচ্ছি৷ শুক্রবার স্কুলে ৭১ বছর বয়সী আমাদের দিদিমণির ওপর যা হয়েছে, এতে আমাদের মা, ঠাকুমারাও উদ্বিগ্ন, আতঙ্কিত৷ আমরা স্কুলে আসতে, রাস্তায় বেরোতে ভয় পাচ্ছি৷ নিরাপত্তা বলে কিছু নেই।
স্কুলের পাশেই খ্রিস্টান পরিবারদের বসবাস। বেগোপাড়া বলে পরিচিত। তাঁরাও প্রতিবাদে মিছিলে সামিল৷ তাঁদের বক্তব্য পুলিস আগে ব্যবস্হা নিলে এমন হত না৷ পুলিসের নিষ্ক্রিয়তাই তাঁদের নিরাপত্তা হারানোর একমাত্র কারণ। স্কুলের একাদশ শ্রেণীর এক ছাত্রী নিরাপত্তাহীনতার কথা জানিয়েও পুলিসের ভূমিকায় ভীষণ বিরক্ত। ছাত্রীটি জানায় কয়েকদিন আগে ফোনে আমাদের স্কুলের সিস্টারদের ভয় দেখিয়েছিল।
সিস্টার স্কুলের পক্ষে গাংনাপুর থানায় অভিযোগ জানান। সেই অভিযোগের ব্যবস্হা নিলে এমন ঘটনা ঘটত না। স্কুলের অন্য ছাত্রীর কথায়, স্কুলে দুষ্কৃতীরা প্রায় ৩ ঘণ্টা তাণ্ডব চালাল। স্কুল থেকে ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে রেল গেটে সারা রাত রানাঘাট থানার পুলিস থাকে৷ তারা টেরই পেল না, এটা হয় নাকি।
অন্য দিকে প্রতিবাদে আজও রানাঘাট শহর, স্কুল চত্বর ছিল সরগরম। সংখ্যালঘুদের পক্ষে প্রতিবাদ মিছিল হয়। এই মিছিলের নেতৃত্বে সংখ্যালঘু সেলের নেতা নৌশাদ আলি বলেন, এই ঘটনা আমাদের শিউরে দিয়েছে। দোষীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করতেই হবে। সি পি এমের পক্ষেও রানাঘাট শহরে মিছিল হয়৷ মিছিলের নেতৃত্বে ছিলেন বিরোধী দলনেতা সূর্যকাম্ত মিশ্র, জেলার অন্য সব নেতৃবৃন্দ৷ প্রত্যেকের দাবি ন্যক্কারজনক ঘটনা৷ দোষীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করতে হবে।
রানাঘাটের বিধায়ক পার্থসারথি চট্টোপাধ্যায় ঘটনার নিন্দার সঙ্গে দোষীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন৷ অন্য দিকে শনিবার রাত থেকেই পুলিসের তৎপরতা বেড়ে যায়৷ রানাঘাট-গাংনাপুর থানার পুলিস যৌথভাবে তল্লাশি শুরু করে৷ দুটি থানা এলাকায় দুষ্কৃতী হিসেবে পরিচিতদের ধরবার জন্য চেষ্টা করে৷ সারা রাত তল্লাশি চালিয়ে ৮ জনকে আটক করে৷ তাদের দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ চালায় যদি কোনও তথ্য উঠে আসে।
পুলিসের পক্ষে সি সি টিভি ফুটেজে যাদের দেখা গেছে, সেই সব ছবি নিয়ে সমস্ত থানায় এমনকী বর্ডার এলাকার বি এস এফদের হাতেও তুলে দেওয়া হয়৷ যাতে তারা কোনও সন্ধান দিতে পারে৷ পুলিস কুকুর এনে তল্লাশি শুরু করে৷ যাতে কোনও সন্ধান পাওয়া যায়৷ জেলার পুলিসের পাশাপাশি সি আই ডি একটি দল তদম্তের কাজ শুরু করেছে৷
এ-সব সত্ত্বেও পুলিসের কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছে অভিযোগ পাওয়ার পর পরই ব্যবস্হা নিলে হয়ত এমন হত না। আর একদলের মতে, ব্যবস্হা নেবে কী করে৷ ওরা যে এ রাজ্যে ক্ষমতাসীন দলের লোক। অন্য দিকে ঘটনা সম্বন্ধে খোঁজ খবর নিতে রাজ্য মহিলা কমিশনের চেয়ারম্যান-সহ ৩ জনের প্রতিনিধি, বি জে পি প্রতিনিধি, সি পি এমের বিরোধী দলনেতা ঘটনাস্হলে আসেন।
কলকাতার আর্চবিশপ টমাস ডি’সাউজা গতকাল সোমবার নীরব শোভাযাত্রার ডাক দেয়। হাজার হাজার মানুষ তাতে যোগ দেয়।কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজ্য সরকারকে ৪৮ ঘন্টার মধ্যে ঘটনার উপর তদন্ত রিপোর্ট দেয়ার সময় বেধে দেয়।
মূখ্য মন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী দৃশ্যত ঘটনায় বিষন্ন, তিনি সোমবার রানাঘাটের হাসপাতালে আহত ও নির্যাতিতা নানদের সাথে দেখা করতে যান।
রাজ্যের নারী অধিকার কমিশনের চেয়ারপার্সন সুনন্দা মুখার্জী তার প্রতিক্রিয়ায় পুলিশের নির্বিকার ভুমিকার সমালোচনা করেন।