রানাঘাট স্কুলে ডাকাতি ও নান ধর্ষণ মামলার চার্জশিট দাখিল
2015.06.23
রানাঘাটের কনভেন্ট স্কুলে ডাকাতি ও বৃদ্ধা সন্ন্যাসিনীকে ধর্ষণের মামলায় চার্জশিট পেশ করল সিআইডি। গোটা দেশকে স্তম্ভিত করে দেওয়া এই অপরাধটি ঘটেছিল ১৩ মার্চ মধ্যরাতে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অবিলম্বে সিআইডির হাতে তদন্তের ভার তুলে দেন।
গত সোমবার, ২২ জুন রানাঘাট আদালতে অতিরিক্ত মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট বিষ্ণু বরণ মণ্ডলের এজলাসে সিআইডি-র তরফে ৯৯৫ পাতার চার্জশিট জমা দেন তদন্তকারী অফিসার বিজয় কুমার যাদব। জানা গিয়েছে, এখন অবধি গ্রেফতার হওয়া ছয় অভিযুক্তের মধ্যে পাঁচ জনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধারায় অভিযোগ পেশ করা হয়েছে। শুধু গত বুধবার শেয়ালদা স্টেশন থেকে গ্রেফতার হওয়া নজরুল ইসলাম ওরফে নজুর বিরুদ্ধে তদন্ত শেষ না হওয়ায় নির্দিষ্ট অভিযোগ পেশ করা হয়নি। অবশ্য তার গ্রেফতার হওয়ার উল্লেখ রয়েছে চার্জশিটে। আরও তিন সন্দেহভাজন, বাংলাদেশি নাগরিক তুহিন, হাবিব ও সেলিমের উল্লেখ রয়েছে পলাতক হিসেবে।
রানাঘাটের ঘটনার দু’সপ্তাহের মাথায় হাবরায় গোপাল সরকার, মুম্বইয়ে সালিম শেখ এবং বনগাঁ স্টেশনে খালেদর রহমান মিন্টু ওরফে ফারুক নামে তিন অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে সিআইডি। পরে শিয়ালদহ স্টেশনে ধরা পড়ে মিলন সরকার এবং ওহিদুল ইসলাম ওরফে বাবু নামে অন্য দুই অভিযুক্ত। গত বুধবার গ্রেফতার করা হয় নজরুল ইসলাম ওরফে নজুকে। সিআইডি-র দাবি, ওই ঘটনায় নজু আর মিলনই মূল চক্রান্তকারী। ঘটনার পরেই তারা দু’জনেই বাংলাদেশে পালিয়ে যায়।
নজু ছাড়া এখনও অবধি গ্রেফতার হওয়া পাঁচ জনের বিরুদ্ধে সিআইডি চার্জশিটে ভারতীয় দণ্ডবিধির যে ধারাগুলি প্রয়োগ করেছে, সেগুলি হল, ১২০বি (অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র), ৩৯৫ (ডাকাতি), ৩৯৭ (ডাকাতির সময় হত্যা বা গুরুতর শারীরিক আঘাতের চেষ্টা), ৩৭৬ (যৌন নির্যাতন), ৩৭৬ডি (ধর্ষণ), ২১২ (অপরাধীকে আশ্রয় দেওয়া ও সাহায্য করা), ২১৬এ (ডাকাতদের আশ্রয় দেওয়া) ও ১০৯ (অপরাধের পর পলায়ন)। উল্লেখযোগ্য ভাবে, চার্জশিটে গণধর্ষণের কথা উল্লেখ করা হলেও কে বা কারা ওই বৃদ্ধা সন্ন্যাসিনীকে ধর্ষণ করেছিল, তার উল্লেখ নেই।
বিরোধী দলগুলি প্রশ্ন তুলেছে, তা হলে কি সিআইডি ধর্ষণকারীকে চিহ্নিত করতে পারেনি? প্রায় বিজেপি-র সুরে সুর মিলিয়েই সিপিআইএম-এর নদিয়া জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য এস এম সাদি বলেন, “সন্ন্যাসিনীকে কে ধর্ষণ করেছে, তা কি সিআইডি-র কাছে স্পষ্ট? মনে হচ্ছে, আলাদা করে কাউকে চিহ্নিত করতে পারেননি গোয়েন্দারা।”
সব তথ্যপ্রমাণ বলছে, গত বুধবার গ্রেফতার হওয়া নজুই সন্ন্যাসিনীকে ধর্ষণ করেছিল। তাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল ডাকাতি। বৃদ্ধা মাদার সুপিরিয়র বাধা দেওয়ায় নজু তাঁকে ধর্ষণ করে। প্রশ্ন উঠছে, সেই নজুর বিরুদ্ধে এই চার্জশিটে ধর্ষণের প্রত্যক্ষ অভিযোগ আনা হল না কেন? সিআইডি-র স্পেশাল সুপার চিরন্তন নাগ জানিয়েছেন, মাদার সুপিরিয়রের চাদরে পাওয়া বীর্য ও রক্তের ডিএনএ পরীক্ষার ফল এখনও মেলেনি। সেই ডিএনএ নজুরই কি না, এখনও জানা যায়নি। ফলে, এই মুহূর্তে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আনা সম্ভব নয়। তবে, এই চার্জশিটেই উল্লেখ করা হয়েছে যে যারা এখনও পলাতক, তারা ধরা পড়লে বা নতুন তথ্যপ্রমাণ হাতে এলে সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট পেশ করা হবে।
রাজ্য পুলিশের আইজি-২ (সিআইডি)বিনীত কুমার গোয়েলও বলেন, নজুর বিরুদ্ধে প্রমাণ পাওয়া গেলেই সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট পেশ করা হবে। এবং, যদি একা নজুও ধর্ষণ করে থাকে, তবুও বাকিরা তাকে বাধা দেয়নি, বরং সহায়তা করেছে। অতএব, তাদের বিরুদ্ধেও ধর্ষণের মামলাই হবে।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্বের গবেষক অমৃতা গুপ্ত বললেন, রানাঘাট কাণ্ড এক বিরল বর্বরতা। এই মামলায় যদি দ্রুত এবং কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা না হয়, তবে ভবিষ্যতে এমন বর্বরতার আরও উদাহরণ মিলবে বলেই আশঙ্কা করি।
কনভেন্টের মাদার সুপিরিয়র ঘটনার পর পশ্চিমবঙ্গ ছেড়েছেন। তিনি এখন কোথায়, জানা যায়নি।