দার্জিলিং-এর জনমুক্তি মোর্চা কি বিজেপি ছেড়ে মমতার হাত ধরতে যাচ্ছে?
2015.06.19
বিজেপি-কে ত্যাগ করে কি তৃণমূল কংগ্রেসের হাত ধরতে চলেছেন গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার প্রধান বিমল গুরুং? মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দার্জিলিং সফরের পর প্রশ্নটি ক্রমে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে।
অখিল ভারতীয় গোর্খা লিগ-এর প্রধান মদন তামাং-এর খুনের মামলায় সিবিআই গত ২৯ মে চার্জশিট পেশ করে। জনমুক্তি মোর্চার প্রধান বিমল গুরুং, তাঁর স্ত্রী আশা, কালিম্পং-এর বিধায়ক এবং দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতা হরকাবাহাদুর ছেত্রীসহ মোট ২৩ জন মোর্চা নেতার নাম ছিল সেই চার্জশিটে।
৬ জুন কলকাতা হাইকোর্ট এই ২৩ জনের নামে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে। গুরুংরা আদালতে অগ্রিম জামিনের আবেদন করেন। ১৭ জুন আদালত জানায়, যত ক্ষণ না অগ্রিম জামিনের প্রশ্নটিতে সিদ্ধান্ত হচ্ছে, তত ক্ষণ সিবিআই গুরুংদের গ্রেফতার করতে পারবে না।
এরই মধ্যে দার্জিলিং সফরে যান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দার্জিলিং-এর রিচমন্ড হিলে গুরুং মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে যান। সঙ্গে ছিলেন গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার আরও তিন বিধায়ক। তবে, শেষ আধ ঘণ্টা শুধু গুরুং-এর সঙ্গেই একান্ত বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই বৈঠকে কী আলোচনা হয়েছে, জানা যায়নি। মদন তামাং হত্যামামলা প্রসঙ্গে আলোচনা হল? দার্জিলিং-এর বিধায়ক ত্রিলোক দেওয়ান বললেন, এটি সরকারি সাক্ষাৎকার। ফলে বিচারাধীন মামলার প্রসঙ্গে আলোচনার কোনও প্রশ্নই নেই।
তবে, সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে। দার্জিলিং-এর বাসিন্দা অধ্যাপিকা রীতা সেন বেনার নিউজকে মনে করিয়ে দিলেন, ‘‘গোর্খা টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বা জিটিএ-র কাজের পরিসরে রাজ্য সরকারের হস্তক্ষেপ নিয়ে বিমল গুরুং দীর্ঘ দিন ধরেই মুখ্যমন্ত্রীর প্রতি অসন্তুষ্ট। গত মার্চ মাসে দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেও গুরুং বলে এসেছিলেন, শুধু জিটিএ দিয়ে দার্জিলিং-এর গোর্খাদের উচ্চাকাঙ্ক্ষা পূরণ করা সম্ভব নয়। এই জেলাটি ঐতিহাসিক ভাবে কখনও পশ্চিমবঙ্গের অংশ ছিল না। সুতরাং, গোর্খাল্যান্ড তৈরি করাই একমাত্র সমাধান।’’
১৭ তারিখের বৈঠক সেরে বেরিয়ে সেই গুরুং-ই বললেন, ‘‘নানা বিষয়ে খুব ভালো আলোচনা হয়েছে। অতীতে এত ভাল আলোচনা কোনও দিনই হয়নি।’’ নানা দফতর হস্তান্তর নিয়ে রাজ্যের বিরুদ্ধে তাঁর যে ক্ষোভ-অভিযোগ ছিল, সেই প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে গুরুঙ্গের মন্তব্য, ‘‘দুঃখের দিন আর নেই। এখন সুখের দিন!’’
কাজেই প্রশ্ন উঠছে, সিবিআই-এর চার্জশিটে কি কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন বিজেপি-র ওপর চটেছেন গুরুং?
বিজেপি-কে ছেড়ে মোর্চা তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে সমঝোতায় এলে যে তৃণমূলের বিলক্ষণ লাভ, স্বীকার করছেন দলের নেতারাই। পরিচয় গোপন রাখার শর্তে উত্তরবঙ্গের এক প্রথম সারির তৃণমূল নেতা বললেন, পাহাড়ে তৃণমূল এখনও কার্যত অস্তিত্বহীন। ফলে, গুরুং যদি স্বেচ্ছায় সমর্থন জানাতে চান, সেটা তৃণমূলের পক্ষে ভালই।
মদন তামাং-এর দল অখিল ভারতীয় গোর্খা লিগ গোড়ায় মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে গুরুং-এর সাক্ষাৎকারে নিজেদের অসন্তোষ জানিয়েছিল। দলের সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ খাটি বলেছিলেন, তাঁরা আর মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন কি না, গুরুং-এর বৈঠকের পর সে বিষয়ে তাঁরা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছেন। তবে, শেষ পর্যন্ত তাঁরা মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে মদন তামাং হত্যাকাণ্ডে পৃথক বিচারবিভাগীয় তদন্ত দাবি করেন।
পাহাড়ে যে রাজনীতির খেলা বদলাতে পারে, সে বিষয়ে সচেতন বিজেপি-ও। দার্জিলিং-এর বিজেপি সাংসদ সুরেন্দ্র সিংহ আলুওয়ালিয়া বলেছেন, ‘মামলাটি আইনি বিষয়, ফলে কারও পক্ষেই তাতে হস্তক্ষেপ করার উপায় নেই। কিন্তু, আমরা গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার পাশেই আছি। আমাদের জোট অটুট। ওরাও আমাদের ছেড়ে যাবে না, আমরাও ওদের ছে়ড়ে যাব না।’ মোর্চার নেতারা এখনই এই প্রসঙ্গে কোনও মন্তব্য করতে নারাজ।
রাজনীতির টানাপড়েনে পাহাড় উত্তপ্ত। সেখানকার বাসিন্দারা কী বলছেন? দার্জিলিং-এর ঘুম অঞ্চলের বাসিন্দা অঞ্জলি ছেত্রী বেনার নিউজকে বললেন, ‘‘যত অশান্তি চলবে, আমাদের ততই ক্ষতি। স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। গুরুংদের গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হওয়ার খবরেই যেমন পাহাড়ে অঘোষিত ধর্মঘট হয়ে গেল। আর কত দিন আমাদের রুজিরুটির মূল্যে এই রাজনীতির খেলা দেখতে হবে, কে জানে।’’