ভারতের মনিপুরে বিদ্রোহীদের আক্রমনে ২০ সেনা সদস্য নিহত

নয়াদিল্লি থেকে আলতাফ আহমেদ
2015.06.04
Ind-manipur মনিপুরে ইম্ফলের কাছে একটি বোমা বিস্ফোরনের অকুস্থল সেনা কর্মকর্তারা পরিদর্শন করছেন। ২৯মে, ২০১৪
এএফপি

বৃহস্প্রতিবার সকালে কমপক্ষে ২০ সেনা সদস্য গুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন এবং ১১ জন আহত হয়েছেন ভারতের উত্তরাঞ্চলের মনিপুর রাজ্যে বিদ্রোহীদের আক্রমনে।

দিল্লিতে সেনাবাহিনীর মুখপাত্র কর্নেল রোহান আনান্দ ফার্স্ট পোস্টকে জানান, “২০ সেনা নিহত ও ১১ সেনা আহত হয়েছে”।
নতুন করে সেখানে সেনা পাঠানো হয়েছে এবং মিলিত অপারেশনে আক্রমনকারীদের খোঁজা হচ্ছে।সূত্র গণমাধ্যম।

এই আক্রমন ঘটলো ত্রিপুরায় আর্মির বিশেষ ক্ষমতা আইন তুলে নেবার এক সপ্তাহের মধ্যে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের এই রাজ্যে গত ১৮ বছরে বিদ্রোহীদের সহিংস কার্যক্রম শিথিল হয়ে পড়ায় এই আইন তুলে নেয়া হয়। কিন্তু মনিপুরের আক্রমন ভারতের কর্তৃপক্ষকে ভাবাচ্ছে জম্মু ও কাশ্মিরের মতো বিদ্রোহী আক্রান্ত প্রদেশগুলি থেকে  সেনাবাহিনীর এই বিশেষ ক্ষমতা আইন তুলে না নেবার জন্য।

প্রতিরক্ষা মন্ত্রী মানোহার পরিখার এই আক্রমনের তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন এটি একটি ‘কাপুরূষোচিত কাজ’, নিহত সেনাদের পরিবারের সদস্যদের প্রতি তিনি শোক ও সমবেদনা জানান, মন্ত্রনালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়।

নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা একে নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের অভাব ও গোয়েন্দা ব্যর্থতার ফল বলে উল্লেখ করেছেন।

খবরে জানা যায়,সকাল ৯ টায় বিদ্রোহীরা ভারী অস্ত্রে সজ্জিত ছিল, রকেট-চালিত গ্রেনেড এবং স্বয়ংক্রিয় রাইফেল নিয়ে সেনাদের ৪টি গাড়িতে উন্নত বিসোরক ডিভাইস দিয়ে আক্রমন চালায়। অকুস্থল ছিল রাজধানি ইম্ফল থেকে ৮০ কিলোমিটার দূরে শারং গ্রামে তেগনাওপাল-নিউ সমতল সড়কের উপর।

এটা ছিল গত কয়েক বছরের মধ্যে বিদ্রোহী পিপল’স লিবারেশন আর্মি’র সবচেয়ে মারাত্নক আক্রমন। যারা সোশালিস্ট রাজ্য হিসেবে মনিপুরের স্বাধীনতা চেয়ে আসছে। ১৯৭৮ সাল থেকে তারা এখানে সক্রিয় রয়েছে।

এই অঞ্চলের সাবেক এক পুলিশ কর্মকর্তা উদয় সাহায় বেনারকে জানান, “রাজ্য পুলিশের মতো সেনাবাহিনী এখানে স্থানীয় গোয়েন্দাদের থেকে সম্পূর্ন বিচ্ছিন্ন, এতেই তারা আক্রমনের শিকার হয়”। তারমতে, এখানে জোরালো সমন্বয় দরকার, যদি আর্মি এখানে বিদ্রোহীদের মোকাবেলা করতে চায়। শহর থেকে দূরে বিচ্ছিন্ন এলাকার ভৌগলিক ধারনাও সেনাদের নাই, তাতেও তাদের জন্য কাল হয়েছে।
মনিপুরের স্বরাষ্ট্র সচিব সুরেশ বাবু এই আক্রমনের জন্য পিএলএ’কে দায়ী করেন।

উল্লেখ্য, মনিপুর অন্যান্য বিদ্রোহী-আক্রান্ত রাজ্য নাগাল্যান্ড ও মিজোরাম পরিবেস্টিত। নাগাল্যান্ডের মতোই মনিপুরে বিদ্রোহীদের মধ্যে পিএলএ ও সোশালিস্ট কাউন্সিল অব লাগাল্যান্ড সক্রিয় রয়েছে।

“উত্তর-পূর্বের অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় মনিপুরে বেকারত্ব অনেক বেশি, সরকারের উচিত এখানকার যুবকদের সেনাবাহিনীতে নিয়োগ দিয়ে কর্ম সংস্থান ও নিরাপত্তায় নিয়োজিত করা, যাতে তারা জঙ্গিদের দলে যোগ না দেয়”, বেনারকে জানালেন কল্যাণ বড়ুয়া, যিনি দি ট্রিবিউনের উত্তর-পূর্বাংশের প্রধান ও একজন নিরাপত্তা বিশ্লেষক।

তারমতে, এখানে উন্নয়নের দিকে নজর দিতে হবে এবং সুস্থ-সংলাপের পরিবেশ তৈরি করতে হবে, সরকার যদি কয়েক দশকের বিদ্রোহের অবাসান চায়। তা নাহলে জঙ্গিদের কর্মকান্ড বেড়ে যাবে এবং বিনিয়োগের জন্য কেউ এগিয়ে আসবে না।



মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।