ভারতে ম্যাগি নুডলস নিষিদ্ধ, চলছে বিতর্ক
2015.06.11
ভারতে গত ৫ জুন জনপ্রিয় ম্যাগি নুডলস নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়। ছবিতে শিলিগুরির একটি দোকানে এক ক্রেতা ম্যাগি নুডলস কিনছেন।
নিষিদ্ধ ঘোষিত হওয়ায় সুইস খাবার ও পানীয়’র বিশাল কোম্পানির উপর নামলো বিরাট আঘাত, গত বছর তারা আয় করেছিলো অর্ধ শত কোটি ডলার।
তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে ভারতীয়রা উৎসাহ ভরে ইন্সট্যান্ট নুডলস খেয়ে এসেছে, যা খেতে সুস্বাদু, সহজে রান্না করা যায় ও পুষ্টি যুক্ত।
ভাত ডাল বা লেনটিনের পরই তৃতীয় খাদ্য হিসেবে ম্যাগি নুডলসের কদর ভারতে। ভারতের ৬৩ ভাগ মালিকানার শেয়ার এই নুডলসের ৯০০ মিলিয়ন ডলার ২০১৪ সালে। কিন্তু, গত ৫ জুন নিষিদ্ধ ঘোষিত হওয়ায় সুইস মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানি লেসলের ভবিষ্যত অন্ধকার হয়ে পড়ে।গতবছর তারা ৫২০ মিলিয়ন ডলার আয় করেছে। সেই সঙ্গে ভারতে এই কোম্পানির জন্য কর্মরত ৫,০০০ কর্মচারীও বেকার হবার হুমকির মধ্যে পড়লো।
গতমাসে উত্তর প্রদেশের ফুড সেফটি রেগুলেটরস ম্যাগি নুডলসে খুঁজে পায় ক্ষতিকর মোনোসোডিয়াম গ্লুটামেট (এমএসজি) নিরাপদ মাত্রার চেয়ে ১৭ গুণ বেশি।যা সারা ভারতে সাড়া ফেলে।
কিছুদিনের মধ্যে অন্যান্য রাজ্যগুলোও পৃথকভাবে পরীক্ষা করে পায় এর ক্ষতিকর দিক।
এদিকে, সুইস কোম্পানি জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের ফুড এন্ড ড্রাগ এডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ) ভারতে নিষিদ্ধ হবার পর ম্যাগি নুডলস-এর নমুনা পরীক্ষা করছে। খবর রয়টারের।
ভারতের বড় বড় রিটেইল গ্রুপ যেমন ফিউচার গ্রুপ, বিগ বাজার,ইজিডে, নীলগিরি তাদের সেলফ থেকে ম্যাগি বিক্রি বন্ধ করে দেয়। অন্যদিকে ভারতের ফুড সেফটি অথরিটি নেসলেকে তাদের ৯ ধরনের নুডলস বাজার থেকে প্রত্যাহার করতে বলে। এছাড়াও পরবর্তি উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ,আমদানি, বিতড়ন ও বিক্রি বন্ধ রাখতে বলে।
কলকাতার চিকিতসা বিজ্ঞানী ডাঃ পার্থ রায় ম্যাগির ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে বেনারকে বলেন, “যদি এটা প্রাকৃতিক উৎস থেকে তৈয়ার হয়ে থাকে এমএসজি ক্ষতিকর নয়। কিন্তু যদি কেমিক্যাল থেকে প্রস্তুত করা হয়ে থাকে তাহলে ক্ষতিকর”। তারমতে, শিশুদের জন্য বেশি ক্ষতি বয়ে আনে। হৃদরোগ ও কিডনির সমস্যা দেখা দেয়।
একজন সিনিয়র মার্কেটিং ম্যানেজার এ চক্রবর্তীও একমত হলেন ক্ষতির দিক নিয়ে। বেনারকে জানান, ভারতে এফডিএ’র মতো রেগুলেটরি বডি দরকার এইসব ক্ষতিকর খাদ্য সনাক্ত করার জন্য।
১৯৮৩ সাল থেকে নেসলে ভারতে ইন্সট্যান্ট নুডলস চালু করে, তাতক্ষনিক রান্নার জন্য এর আবেদনে সাড়া ফেলে।পুষ্টি গুণ ও সুস্বাদু এবং কম খরচের জন্য এর জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে।
ম্যাগির মার্কেটিংএর জন্য প্রচুর খরচ করা হয়ে থাকে। ভারতের স্বনাম ধন্য অভিনেতা অমিতাভ বচ্চন, মাধুরী দিক্ষিত ও প্রীতি জিনতা এর বিজ্ঞাপনে অংশ নিয়ে থাকেন। এ মাসের গোড়ার দিকে নেসলে মার্কেটিং এর জন্য ৭০ মিলিয়ন ডলার খরচ করলেও মান নিয়ন্ত্রনের জন্য তার ৫ ভাগ খরচ করে মাত্র।
ম্যাগির বিজ্ঞাপনে যুক্ত হবার জন্য আদালত থেকে ইতিমধ্যে লিগাল নোটিশ দেয়া হয়েছে এই অভিনেতা-অভিনেত্রীর বিরুদ্ধে। ভোক্তা বিষয়ক মন্ত্রনালয় থেকে বলা হয় ক্রেতাদের বিভ্রান্ত করার জন্য তারাও দায়ী থাকবেন।
তবে, বাজার বিশেষজ্ঞরা আশা করছেন ম্যাগি আবার নিশ্চিতভাবেই ফিরে আসবে। গুরু রহমান বেনারকে জানান, “কোম্পানি তাদের ব্যাখ্যা দিবেন এবং মানুষ দ্রুত তাদের ক্ষমা করবে ও ভুলে যাবে। কিন্তু বাজারে অনেক পণ্য আছে যেমন কেমিকেলযুক্ত লবন, চিনি কিংবা নানা রকমের ড্রিংস সেগুলোও ক্রেতাদের বাদ দেয়া উচিত এবং বদলে দুগ্ধজাত স্বাস্থ্যকর খাবার নেয়া উচিত”।
এদিকে, নেসলে কোম্পানির তরফ থেকে জানানো হয়েছে, ম্যাগিতে তারা কৃত্রিম এমএসজি যুক্ত করেনি। তাদের গ্লোবাল চীফ এক্সিকিউটিভ পল বালকে ভারতে এসে জানায়, “এটা খাবার জন্য নিরাপদ”।
বৃহস্প্রতিবার নেসলে বোম্বে হাইকোর্টে ম্যাগি নিষিদ্ধের বিষয়টি রিভিউ করার আবেদন জানায়।