‘দক্ষিণ এশিয়ার যোদ্ধাদের আইএস কামানের গোলা হিসেবে ব্যবহার করছে’
2015.11.27
একটি গোয়েন্দা রিপোর্টে বলা হয়েছে, আইএসের নিয়োগকারীরা ভারতের ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার তরুনদের জিহাদী নারীসঙ্গের প্রলোভন দেখিয়ে নিয়ে গিয়ে কামানের গোলা হিসেবে সিরিয়ায় ব্যবহার করছে। ভারতের মুসলিম সম্প্রদায় মনে করছে, এই কারণে তরুনদের সন্ত্রাসী দলে যোগ দিতে নিরুৎসাহিত হওয়া উচিত।
১৩ নভেম্বর প্যারিস আক্রমনের পর মুসলিম সংগঠনগুলো যারা আইএসের কাজে প্রতিবাদ জানাচ্ছে, তারা বলছে দক্ষিণ এশিয় তরুনদের জঙ্গি দলে না ভেড়ার জন্য এই রিপোর্টই যথেষ্ঠ মনে করা উচিত।
দিল্লির শাহ ওয়ালিউল্লাহ ইনস্টিটিউটের মুফতি আতাউর রহমান কাসমী বেনার নিউজকে জানান, “আইএস-এ ইসলাম বলতে কিছু নেই, কারণ, ইসলাম আত্নঘাতী আক্রমন এবং নিরিহ মানুষ মারাকে অনুমোদন করে না’।
কাসমী বলেন, “রিপোর্টে পরিস্কার বলা হচ্ছে, আইএস জিহাদে অংশ নেয়া তরুনদের বোকা বানাচ্ছে। আশা করি, এতে তাদের বোধোদয় হবে যে এই সন্ত্রাসীরা এগিয়ে যাবার জন্য নিজেদের পথ পরিস্কারে তাদেরকে ব্যবহার করছে”।
৩-পাতার এই অতি গোপনীয় রিপোর্টে বলা হয়ে, ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ এবং নাইজেরিয়া ও সুদানের যোদ্ধাদের আরব যোদ্ধাদের তুলনায় অধম মনে করা হয়। আরবের যোদ্ধাদের অফিসার র্যাঙ্কে মোটা বেতন ও উন্নত অস্ত্র দেয়া হয়।
আত্নঘাতী মিশনে বোকা বানানো
ভারতীয় ইন্টেলিজেন্স ব্যূরো বেনার নিউজকে জানিয়েছে, রিপোর্টে তথ্যের উৎসের দেশগুলির নাম উল্লেখ করা হয় নাই। ইরাক ও সিরিয়ার প্রতিবেশি দেশের গোয়েন্দাদের সাথে যৌথভাবে এইসব তথ্য সংগৃহীত হয়ে বলে জানায়।
আরো জানায়, ‘তথাকথিত নিম্ন মানের যোদ্ধা’দের আত্নঘাতী মিশনে বোকা বানানো হয়।
“ সাধারনত, গোলাবারুদ সহ গাড়িতে চড়িয়ে একটি ঠিকানা দিয়ে বলা হয় কাছাকাছি গিয়ে একজনের নাম্বারে ফোন করতে, সে এসে তোমাদেরকে মিশন সম্পর্কে ব্যাখ্যা করবে। কিন্তু, ঐ নাম্বারে ফোন কল করার পর গাড়িটি বিস্ফোরিত হতো, মেকানিজম এমনভাবে সেট করা হতো যেন গাড়িটি টার্গেটের কাছে গিয়ে বিস্ফোরিত হয়”।
বলা হয় ‘এতে নির্বিচারে দক্ষিণ এশিয় ও আফ্রিকানরা বেশি মারা পড়ে’। আর আরব যোদ্ধাদের তাদের পেছনে নিরাপদ দুরত্ত্বে রাখা হয়, তাতে তাদের হতাহতের সংখ্যাও কম হয়।
আইএসে যোগ দেয়া ২৩জন ভারতীয় তরুনদের মধ্যে অন্তত ৬ জন সে কারণেই মারা গিয়েছে।
দলিল অনুযায়ী নিহতরা হলেন, ভারতীয় তেলাঙ্গানা রাজ্যের আতিফ ভাসিম মোহাম্মদ, ২৫, কর্নাটক থেকে মুহাম্মদ উমর সুবহান,২৬, মওলানা আব্দুল কাদির সুলতান আরমর,২৯, ফয়েজ মাসুদ,২৮, মহারাষ্ট্র থেকে সাহিম ফারুক টানকি,২৬ এবং উত্তর প্রদেশ থেকে মোহাম্মদ সাজিদ,২৯।
জিহাদী নারীসঙ্গের প্রলোভন
আইএস বিভিন্ন দেশ থেকে আসা তরুনদের বিভিন্ন প্রলোভন দিয়ে থাকে। লিঙ্গ অনুপাতের বিরাট পার্থক্যের কারণে শুধু সিনিয়র কমান্ডার ও আরব যোদ্ধাদের মধ্যে নারীদের বন্টন করা হয়। রিপোর্টে বলা হয়।
আইএস অধিকৃত অঞ্চলে ভারত-বাংলাদেশ-পাকিস্তান থেকে যোগ দেয়া যোদ্ধারা সামান্যই নারী সান্নিধ্য পায়, যেহেতু তাদেরকে নিম্নমানের যোদ্ধা হিসেবে গণ্য করা হয়।
দক্ষিণ এশিয়ার ছেলেদের ব্রেনওয়াশ করে জ্বিনের ভয় দেখানো হয়, তারা যদি দেশে ফিরে যায় তাহলে বাকি জীবনে জ্বিন তাদেরকে তাড়া করে বেড়াবে। ইরাক ও সিরিয়ায় প্রবেশের পর পরই তাদের পাসপোর্ট পুড়িয়ে ফেলা হয়, যাতে পালিয়ে দেশে যেতে না পারে।
ভারতের বৃহত্তম ইসলামি সংগঠন জমিয়ত উলামা-ই-হিন্দের আব্দুল হামিদ নোমানী বলেন, রিপোর্টে বর্নিত আইএসের কৌশলের ফাঁদে সম্ভাব্য যোদ্ধারা আর পা দেবে না। আমাদেরকে আইএসের বিরুদ্ধে আরো বেশি বেশি প্রতিবাদ করতে হবে, এতে সন্ত্রাসীদের দলে ভেড়ার ব্যপারে সতর্ক হবে তরুনরা। পরিবারকেও বলতে হবে ইসলামের আসল অর্থ কি। বেনারকে জানান তিনি।
ভারতীয় মুসলমানদের গ্রুপগুলো ‘বৃহত্তর ফতোয়া’ উল্লেখ করে ভারতের ১০০০ ইসলামি স্কলারদের সাক্ষরিত আইএস বিরোধী বক্তব্যটি সম্প্রতি জাতি সংঘে প্রেরন করেছে।
তার কিছুদিন পর কর্নাটকের ৬০০০ মসজিদের প্রধান মওলানা মাসুদ রাশেদী সন্ত্রাস বিরোধী নির্দেশনা দিয়ে বলেনঃ বর্তমান সময়ে অনেকেই উদ্দেশ্যমূলকভাবে ধর্মকে ব্যবহার করছে। সবচেয়ে বড় কৌশল হচ্ছে ইসলামের নামে নিজেদের আদর্শ প্রচার করা। এই আদর্শ এবং তার তৎপরতাকে ইসলাম এবং মুসলিমরা ব্যপক নিন্দা জানায়। রাজ্যের মসজিদগুলোতে প্রতিদিন নামাজের আগে ও পরে এই নির্দেশনা সবাইকে পড়ে শোনানো হয়।