বাংলাদেশকে ১৩ হাজার কোটি টাকা ঋণ দেবে জাপান
2016.06.29
ছয়টি প্রকল্পে বাংলাদেশকে সহজ শর্তে প্রায় ১৩ হাজার কোটি টাকা ঋণ দিচ্ছে জাপান। বিদ্যুৎ, যোগাযোগ ও দুর্যোগ প্রশমনসহ বিভিন্ন খাতে বাংলাদেশকে এটাই জাপানের দেওয়া সর্ববৃহৎ ঋণ।
জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগী সংস্থা জাইকা ও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) মধ্যে বুধবার এ বিষয়ে চুক্তি স্বাক্ষর হয়।
জাইকা ৩৭তম প্যাকেজের আওতায় সাড়ে ১৭ হাজার কোটি ইয়েন ঋণ দিতে রাজি হয়েছে; যা বাংলাদেশি ১২ হাজার ৮১৯ কোটি টাকার সমান।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব কাজী শফিকুল ইসলাম ও ঢাকায় নিযুক্ত জাপানি রাষ্ট্রদূত মাসাতো ওয়াতানাবে এ চুক্তি স্বাক্ষর করেন। অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান ও জাইকার প্রধান প্রতিনিধি মিকিও হাতাইদা এসময় উপস্থিত ছিলেন।
জাপানের বড় অঙ্কের এ ঋণ সহায়তাকে খুবই ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকেরা। তাঁরা বলছেন, এটা দুদেশের মধ্যকার শক্তিশালী অর্থনৈতিক সম্পর্কের সুফল। তবে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী প্রকল্প বাস্তবায়নের ওপর জোর দিয়েছেন তাঁরা।
সবচেয়ে বড় ঋণ
অনুষ্ঠানে জাপানের রাষ্ট্রদূত মাসাতো ওয়াতানাবে বলেন, “টাকার অংকে বাংলাদেশের জন্য এটিই সবচেয়ে বড় জাপানি ঋণ।”
এর আগে ৩৬তম ঋণ প্যাকেজের আওতায় ছয়টি প্রকল্পে ৮ হাজার ৬৬০ কোটি টাকা দেওয়ার চুক্তি করে জাপান। সেটাই ছিল বাংলাদেশকে দেওয়া এ যাবৎকালের সবচেয়ে বড় জাপানি ঋণ।
দুদেশের মধ্যকার চুক্তি অনুযায়ী, এই প্যাকেজের আওতায় বার্ষিক ০.০১ শতাংশ সুদে ঋণ পাচ্ছে বাংলাদেশ। ৪০ বছরে তা শোধ করতে পারবে বাংলাদেশ। চুক্তির প্রথম দশ বছর পর থেকে ঋণের কিস্তি পরিশোধ শুরু হবে।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, প্রয়োজনে এ মেয়াদকাল আরও ১০ বছর বাড়ানো যেতে পারে। আর সে হিসাবে ৫০ বছর ধরে এ ঋণ পরিশোধের সুযোগ থাকছে।
এই অর্থ ব্যয় হবে যমুনা রেলব্রিজ নির্মাণ প্রকল্প, ঢাকা মাস র্যাপিড ট্রানজিট প্রকল্প, আন্তঃসীমান্ত সড়ক যোগাযোগ উন্নয়ন প্রকল্প, এনার্জি ইফিসিয়েন্সি অ্যান্ড কনজারভেশন প্রোমোশন ফাইন্যান্সিং প্রজেক্ট, মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও ডিজাস্টার রিস্ক ম্যানেজমেন্ট এনহ্যান্সমেন্ট প্রজেক্টের জন্য।
জাপানের সহায়তা পাওয়া এসব প্রকল্পের প্রতিটিই মেগা প্রকল্প বলে জানান অতিরিক্ত সচিব কাজী শফিকুল আজম।
অনুষ্ঠানে অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, “বর্তমান সরকার পশ্চিমা নীতি থেকে সরে প্রাচ্য নীতি গ্রহণ করে। এর ফলে আজ জাপানি সহায়তা চুক্তিতে রেকর্ড হয়েছে।”
জাপানের রাষ্ট্রদূত মাসাতো ওয়াতানাবে বলেন, “স্বাধীনতাযুদ্ধ নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে জাপানের আবেগের সম্পর্ক রয়েছে। উন্নয়নে সহযোগিতার পাশাপাশি বহু জাপানি ব্যবসায়ী ও প্রতিষ্ঠানকে এদেশে বিনিয়োগে উৎসাহিত করা হচ্ছে।”
এদেশে জাপানি বিনিয়োগকারীদের জন্য বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্মাণের কাজও এগিয়ে চলছে জানিয়ে তিনি বলেন, “শিগগিরি এ বিষয়ে ঢাকা ও টোকিও’র মধ্যে চুক্তি সই হবে।”
দুই বছর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাপান সফরের সময় দেশটির প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের কাছ থেকে ঋণ সহায়তার যে প্রতিশ্রুতি এসেছিল এই চুক্তি তারই ফসল বলে জানান তিনি।
অনুষ্ঠানে জাইকার আবাসিক প্রতিনিধি মিকিও হাতায়েদা জানান, জাপান সরকার এ পর্যন্ত বাংলাদেশকে ঋণ হিসেবে ১ লাখ কোটি জাপানি ইয়েন, অনুদান হিসেবে ৬০ হাজার কোটি ইয়েন এবং কারিগরি সহায়তা হিসেবে ৬ হাজার ৫০০ কোটি ইয়েন দিয়েছে।
শক্তিশালী অর্থনৈতিক সম্পর্কের অংশ
জাপানের এ ঋণ সহায়তাকে খুবই ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জা আজিজুল ইসলাম। তিনি বলেন, জাপান দ্বিপাক্ষিক ক্ষেত্রে অনেক আগে থেকেই বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় উন্নয়ন সহযোগী।
তবে প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রতি জোর দিয়ে তিনি বলেন, প্রতিশ্রুতি আসে, চুক্তি হয় কিন্তু প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীর গতির কারণে অর্থ ছাড়ে বিলম্ব হয়। অর্থবছরের শেষ দিকে এসে এডিপি (বার্ষিক উন্নয়ন পরিকল্পনা) বাস্তবায়নে তাড়াহুড়া দেখা যায়। এতে কাজের মান ভালো হয় না।
এই অর্থনীতিবিদ বলেন, “যে উদ্দেশ্য টাকা ছাড় করা হয়েছে, তার সদ্ব্যবহারের ওপর জোর দিতে হবে যাতে কাঙ্খিত উদ্দেশ্য সফল হয়।”
অন্যদিকে, জাপানের এই বড় অর্থ সহায়তাকে দুদেশের মধ্যে শক্তিশালী অর্থনৈতিক সম্পর্কের অংশ হিসেবে দেখছেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ-সিপিডি’র অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক গোলাম মোয়াজ্জেম।
তিনি বেনারকে বলেন, “দুদেশের মধ্য ছয় বিলিয়ন ডলারের অর্থ সহায়তার অংশ হিসেবে এ অর্থ ছাড় করা হচ্ছে। বাংলাদেশের আধুনিক যোগাযোগ নির্ভর যে প্রকল্পগুলো আছে, তাতে জাপানের অর্থ সহায়তা অত্যন্ত ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। এর ফলে যোগাযোগ ব্যবস্থা তৈরির মাধ্যমে আন্তঃ আঞ্চলিক বাণিজ্যিক কাঠামো গড়ে উঠবে।”
এ ঋণের সুদ ও পরিশোধের শর্ত নমনীয় উল্লেখ করে ওই গবেষক বলেন, “অন্য দেশ ও উন্নয়ন সহযোগীদের ঋণের তুলনায় এমন ঋণ বাংলাদেশের ওপর চাপ কমাবে। এই ঋণ ও প্রকল্প সহায়তার সুষ্ঠু ব্যবহার করা গেলে তা জাতীয় উন্নয়নে বড় ভূমিকা রাখবে।”