পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রী হত্যার পর ‘বন্দুকযুদ্ধে’ দুইদিনে ৫ জঙ্গির মৃত্যু
2016.06.08
কিছুদিন বিরতির পর বাংলাদেশে আবারও পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হওয়ার ঘটনা বেড়েছে। গত দুই দিনে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে পাঁচজন, যাদের চারজনই নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) সদস্য। বিতর্কিত এই ‘মৃত্যু’ নিয়ে নতুন করে আবারও আলোচনা–সমালোচনা শুরু হয়েছে।
‘কথিত’ অভিযোগে বিচার ছাড়াই এমন মৃত্যুর সমালোচনা করছেন মানবাধিকার কর্মীরা। অপরাধ প্রমাণ হওয়ার আগে নিহত হওয়ায় এসব ব্যক্তি প্রকৃত অপরাধী কিনা তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
গত রোববার চট্টগ্রাম মহানগরীতে পুলিশ কর্মকর্তা বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানমকে নৃশংসভাবে হত্যার পর গত দুইদিনে ‘বন্দুকযুদ্ধের’ ঘটনা বেড়েছে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
মঙ্গলবার ঢাকা ও রাজশাহীতে তিনজন নিহত হওয়ার পর বুধবার বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলায় পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছে কাওছার (২৫) নামে এক জেএমবি সদস্য। দুই পুলিশ সদস্য এ সময় আহত হন।
পুলিশ জানায়, বুধবার ভোরে শিবগঞ্জ উপজেলার বুড়িগঞ্জ ইউনিয়নের জামতলী লোহার ব্রিজ এলাকায় ওই ‘বন্দুকযুদ্ধের’ ঘটনা ঘটে। এ সময় একটি ম্যাগাজিন, একটি বিদেশি পিস্তল, দুই রাউন্ড গুলি, দুটি গুলির খোসা, পাঁচটি হাতবোমা, একটি চাপাতি ও দুটি ছুরি উদ্ধার করা হয়।
বগুড়া জেলার সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি বি সার্কেল) গাজিউর রহমান বেনারকে জানান, “জয়পুরহাট সদর উপজেলার আমির আলীর ছেলে কাওছার জেএমবি সদস্য। ২০১৫ সালে বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার কিচক ইউনিয়নের হরিপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকার মসজিদ-ই-আল মোস্তফা নামে শিয়া মসজিদে মুসুল্লিদের ওপর সরাসরি গুলি চালানোর ঘটনায় তার সম্পৃক্ততা ছিল।”
উল্লেখ্য, গত বছরের ২৬ নভেম্বরে ওই ঘটনায় একজন নিহত ও চারজন আহত হন।
বন্দুকযুদ্ধে ডাকাত নিহত
যশোর সদর উপজেলার পাঁচবাড়িয়া এলাকায় পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছে এক ব্যক্তি। পুলিশের পক্ষ থেকে তাকে ডাকাত দাবি করা হলেও নিহত ওই ব্যক্তির নাম-পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে যশোর কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইলিয়াস হোসেন স্থানীয় সাংবাদিকদের জানান, মঙ্গলবার দিবাগত রাতে মহাসড়কে রশি টানিয়ে ডাকাতির চেষ্টা করছিল একদল দুর্বৃত্ত। টহল পুলিশ দেখে তারা গুলি ছুড়তে থাকে। পুলিশও এ সময় পাল্টা গুলি ছুড়ে। ডাকাতদের ছোড়া গুলিতেই ওই ব্যক্তি নিহত হয়েছে বলে পুলিশের দাবি।
পুলিশ জানায়, অন্যরা পালিয়ে গেছেন। নিহতের পরিচয় নিশ্চিত না হওয়ায় ময়না তদন্ত শেষে বেওয়ারিশ লাশ দাফনকারী প্রতিষ্ঠান আঞ্জুমান মফিদুলের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে।
পুলিশের যুদ্ধ ঘোষণা!
পুলিশ কর্মকর্তা বাবুল আক্তারের স্ত্রীর নির্মম হত্যাকান্ডের পর জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের (সিটিটিসি) বোম্ব ডিস্পোজাল টিমের প্রধান ও অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) মো. ছানোয়ার হোসেন। সহকর্মীর স্ত্রী খুনের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমন দৃঢ় প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন এই পুলিশ কর্মকর্তা।
তিনি লিখেছেন, “…জঙ্গিদের বিরুদ্ধে আগে করতাম কাজ, এখন যুদ্ধ করবো। কাজের পরিবেশ তো আর নেই, যুদ্ধের পরিবেশ সৃষ্টি হয়ে গেছে। পরিবারের নিষ্পাপ সদস্যের উপর আঘাত, যুদ্ধ নয় তো কি? তাই এখন জঙ্গি নিয়ে কাজ মানেই যুদ্ধ।”
মানবাধিকার কর্মীদের সমালোচনা
জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে পুলিশ শক্ত অবস্থান নিলেও ‘বন্দুকযুদ্ধ’ সমাধান নয় বলে মনে করছেন মানবাধিকার কর্মীরা।
এ প্রসঙ্গে মানবাধিকার কর্মী ও আইন ও শালিস কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক মো. নূর খান বেনারকে বলেন, “বাংলাদেশে দীর্ঘদিন ধরেই বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটছে। বিভিন্ন ঘটনার প্রেক্ষিতে তা বাড়ে বা কমে। তবে আমরা সবসময় বলে আসছি, বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড কোন সমাধান নয়। এর মাধ্যমে একজন সন্দেহভাজন ব্যক্তি বিচারহীনতার শিকার হন।”
“জঙ্গিবাদ বা অন্য যে কোন ধরনের অপরাধ দমনে করতে হলে আইনের নির্দিষ্ট কাঠামোতে করতে হবে। বিচার বহির্ভূত বা ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত করার মাধ্যমে কোন ধরনের অপরাধ দমন সম্ভব নয়,” মনে করেন ওই মানবাধিকারকর্মী।
নূর খান আরও বলেন, “এসব সন্দেহভাজনরা যদি সত্যি সংশ্লিষ্ট অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকে, তাহলে তাদের দিয়ে জড়িত অন্যদের আটকের ব্যবস্থা না করে ‘বন্দুকযুদ্ধের’ পরিস্থিতি তৈরি করা হয় কেন? এক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ।”