নিহত ১২ জঙ্গির মধ্যে দুজনের পরিচয় মিলল,বাকিদের তথ্য চায় পুলিশ

ঢাকা থেকে শাহরিয়ার শরীফ
2016.10.10
161010-Militants-Dan1000.jpg টাঙ্গাইলের এই বাড়িতে র‍্যাবের অভিযানে নিহত হয় সন্দেহভাজন দুই জঙ্গি, যাদের পরিচয় এখনও অজ্ঞাত। অক্টোবর ৮, ২০১৬।
স্টার মেইল

গাজীপুরের নোয়াপাড়ার পাতারটেকে অভিযানের ৩৬ ঘণ্টা পর ঢাকা মহানগর পুলিশের অনলাইন নিউজ পোর্টালে নিহত সাত সন্দেহভাজন জঙ্গির ছবি প্রকাশ করে তাদের সম্পর্কে তথ্য চাওয়া হয়েছে। তবে গতকাল পর্যন্ত ১২ জনের মধ্যে মাত্র দুজনের পরিচয় সম্পর্কে তথ্য পাওয়া গেছে।

গত ৮ অক্টোবর আশুলিয়া, সাভার, টাঙ্গাইল ও গাজীপুরে পৃথক চারটি অভিযানে মোট ১২ জঙ্গি নিহত হয়। এসব ঘটনায় নিহতদের মধ্যে পরিচয় পাং ফরিদুল ইসলাম ওরফে আকাশসহ অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে সন্ত্রাস দমন ও অস্ত্র আইনে মোট আটটি মামলা হয়েছে।

নিহতদের একজন ফরিদুল ইসলাম ওরফে আকাশ এবং অন্যজন মো. ইব্রাহীম। ছাদ থেকে লাফ দিয়ে মারা যাওয়া ব্যক্তিরও প্রকৃত নাম–পরিচয় পাওয়া যায়নি, যদিও তার নাম আবদুর রহমান বলে প্রচার পেয়েছে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া ও গণমাধ্যম শাখার উপকমিশনার মাসুদুর রহমান বেনারকে বলেন, “ইব্রাহীমের বাবা মো. আজিমউদ্দিন গতকাল ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগে এসে ছেলের ছবি দেখে তাকে শনাক্ত করেন।”

পারিবারিক সূত্র জানায়, মো.ইব্রাহীম রাজধানীর মোগলটুলির বাসিন্দা। দুই মাস আগে গত ৮ আগস্ট ভোরবেলা কাউকে কিছু না বলে সে বাড়ি ছাড়ে।

তার বাবা মো. আজিমউদ্দিন বেনারকে জানান, ছেলের মধ্যে তিনি তেমন কোনো পরিবর্তন দেখেননি। নিখোঁজ হওয়ার কিছুদিন আগে থেকে সে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছিল। খুব একটা বাইরে যেত না। ঘরে বসে সারাক্ষণ মুঠোফোনে কথা বলত।

মো. আজিমউদ্দীন বলেন, “এই মুঠোফোনই আমার ছেলের সর্বনাশ করেছে। সে একটা  সিম ফেলে গিয়েছিল। আমি তার সব তথ্য ও সিমটি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দিয়েছিলাম। তারা কোনো খোঁজ দিতে পারেনি।”

ডিএমপির পোর্টালে ক্রমিক নম্বর দিয়ে সাতটি ছবি প্রকাশ করা হয়। তার মধ্যে সাত নম্বর লাশটি ফরিদুল ইসলাম ওরফে আকাশের। গায়ে ‘স্ট্যান্ড অ্যাগেইনস্ট টেররিজম’ স্লোগান লেখা গেঞ্জি। পুলিশের হ্যালো সিটি অ্যাপের মাধ্যমে, ডিএমপি বা নারায়ণগঞ্জ পুলিশকে নিহত জঙ্গিদের সম্পর্কে তথ্য দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে।

জঙ্গিদের দমন চাইলেও প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন কেউ কেউ। তারা বলছেন, জঙ্গিদের বাঁচিয়ে রেখে আরও তথ্য সংগ্রহের পাশাপাশি বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।

আইন ও সালিশ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক নূর খান লিটন বেনারকে বলেন, “জঙ্গিদের মূলোৎপাটন করতে তাদের জীবিত ধরার চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। অভিযানে নিহত হলেও প্রতিটি মৃত্যুর ঘটনা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে খতিয়ে দেখতে হবে।”

বয়স ১৮ থেকে ২২ বছর

অভিযানে অংশগ্রহণকারী পুলিশ কর্মকর্তারা বলেন, অভিযানে নিহতদের বয়স ১৮ থেকে ২২ বছর। পুলিশ মনে করছে, সামনের সারির নেতাদের মৃত্যুর পর এই তরুণেরা নতুন করে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে।

গাজীপুরে পুলিশ ও র‍্যাবের অভিযানে নিহত ৯ জঙ্গি ও আশুলিয়ায় নিহত এক জঙ্গির মৃতদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজে পাঠানো হয়েছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সোহেল মাহমুদ বেনারকে জানান, “জঙ্গিদের দেহ থেকে ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হবে। এ ছাড়া ভিসেরা সংগ্রহ করে মহাখালীর রাসায়নিক পরীক্ষাগারে পাঠানো হবে।”

তবে টাঙ্গাইলে নিহত দুই তরুণের লাশ ঢাকায় পাঠানো হয়নি। র‌্যাবের কোম্পানি কমান্ডার মহিউদ্দিন ফারুকী বেনারকে জানিয়েছেন, “নিহতদের স্বজনরা এসে মরদেহ শনাক্ত করতে পারেন। সে জন্য আরও কিছুদিন লাশ সংরক্ষণ করা হবে।”

জঙ্গিবাদ থেকে ফেরা তরুণ তথ্য দেয়

গাজীপুরের নোয়াপাড়ার পাতারটেকের আস্তানা সম্পর্কে পুলিশ তথ্য পায় জঙ্গিবাদ থেকে বেরিয়ে আসা এক তরুণের কাছ থেকে।

কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইম বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার মো.ছানোয়ার হোসেন বেনারকে বলেন, “আমাদের ধারণা ছিল ঢাকার আশেপাশে জঙ্গিদের আর কোনো আস্তানা নেই। তবে এখন মনে হচ্ছে ঢাকার আশপাশে আরও কিছু আস্তানা থাকতে পারে।”

তিনি বলেন, গাজীপুরের ওই আস্তানাটি জঙ্গিদের প্রশিক্ষণকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার হত। ওই কেন্দ্রে জঙ্গিদের উগ্রবাদে জড়ানোর তালিম এবং অস্ত্রচালনার প্রাথমিক প্রশিক্ষণ দেয়া হত।

বাড়ির মালিক আটক

গতকাল সোমবার দুপুরে গাজীপুরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ তাঁর কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, গাজীপুরের নোয়াগাঁও পাতারটেকের বাড়ির মালিক সৌদি আরবে থাকেন। তাঁর অবর্তমানে বাড়িটি তার ছোট ভাই আজমতপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজের ইসলামি শিক্ষার প্রভাষক মো.ওসমান গনি সরকার এবং ওই প্রবাসীর স্ত্রী সালমা ভাড়া দিতেন। উভয়কে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

পুলিশ সুপার জেলায় নতুন ভাড়াটেদের পরিচয়পত্র ও তথ্য পুলিশকে জানানোর অনুরোধ করেন।

গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়ার দাবি

র‍্যাবের গোয়েন্দা শাখার পরিচালক আবুল কালাম আজাদ বেনারকে বলেন, “ছাদ থেকে পড়ে যাওয়ার পর কিছুক্ষণ আবদুর রহমান (প্রকৃত নাম নয়) বেঁচে ছিল। এ সময় কিছু তথ্য পাওয়া যায় তার কাছ থেকে।  সে মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশ এবং দেশের ভেতর থেকে টাকা তুলত।”

র‍্যাবের ওই কর্মকর্তা আরো জানান, তিনটি অভিযানেই বেশ কিছু ল্যাপটপ, গুরুত্বপূর্ণ আলামত ও অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে। এসব ল্যাপটপে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।