স্থানীয় জনতার সহযোগিতায় স্কুলছাত্রী রিশার খুনি ওবায়দুল গ্রেপ্তার

ঢাকা থেকে শাহরিয়ার শরীফ
2016.08.31
20160831-Killer-Obaidul-Risa1000.jpg উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলের ছাত্রী সুরাইয়া আক্তার রিসা হত্যায় সন্দেহভাজন যুবক ওবায়দুল খানকে আটক করেছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। আগস্ট ৩১, ২০১৬।
ফোকাস বাংলা

ঢাকার উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলের ছাত্রী সুরাইয়া আক্তার রিশা হত্যার সন্দেহভাজন যুবক ওবায়দুল খানকে আটক করেছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। গতকাল বুধবার সকালে নীলফামারীর ডোমার উপজেলার স্থানীয় লোকজন ওবায়দুলকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেন।

উইলস লিটল ফ্লাওয়ারের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে মঙ্গলবার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ওবায়দুলকে গ্রেপ্তারের আশ্বাস দেয় পুলিশ। সেই সময়সীমা পার হওয়ার আগেই জনতা তাকে ধরে পুলিশের হাতে তুলে দেয়।

“প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই ওবায়দুলকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়েছে। ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে তার শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে,” বেনারকে জানান ডিএমপির রমনা বিভাগের উপকমিশনার মারুফ হোসেন সরদার।

ওবায়দুল এলিফ্যান্ট রোডের ইস্টার্ন মল্লিকা শপিং কমপ্লেক্সের তৃতীয় তলার বৈশাখী দরজির দোকানের কর্মী। তার গ্রামের বাড়ি দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার মোহনপুর ইউনিয়নের মিরাটঙ্গী গ্রামে।

সুরাইয়া উইলস লিটল ফ্লাওয়ারের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী ছিল। সে মা-বাবার সঙ্গে পুরান ঢাকার ১০৪ সিদ্দিকবাজারের বাসায় থাকত। তার বাবা রমজান হোসেন কেবল ব্যবসায়ী। দুই বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে সুরাইয়া আক্তার রিশা ছিল সবার বড়।

নিহত স্কুল ছাত্রী সুরাইয়া আক্তার রিশা। ছবি: নিউজরুম ফটো।

 

পরিবার, স্বজন ও সহপাঠীদের কাঁদিয়ে দুদিন আগেই না ফেরার দেশে চলে গেছেন সুরাইয়া।

গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে ওই ছাত্রী পুলিশ ও স্বজনদের জানিয়ে গিয়েছেন তাঁর হন্তারকের নাম।

ওবায়দুলের শাস্তির বিষয়ে সোচ্চার তাঁর সহপাঠী, সামাজিক সংগঠন ও পরিবার। গত রোববার থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত রিশার খুনির গ্রেপ্তারের দাবিতে বিক্ষোভ–সমাবেশ ও রাস্তা অবরোধ হয়েছে।

সুরাইয়া গত বুধবার পরীক্ষা শেষে স্কুলের সামনের পদচারী-সেতু দিয়ে তাঁর খালাতো ভাইয়ের সঙ্গে সড়কের ওপারে যাচ্ছিলেন।এ সময় ওবায়দুল তাঁকে ছুরিকাঘাত করে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রোববার সুরাইয়া মারা যান।এ ঘটনায় তাঁর মা তানিয়া হোসেন রমনা থানায় ওবায়দুলকে আসামি করে মামলা করেন।

সুরাইয়ার স্বজনরা বলছেন, মাস ছয়েক আগে সুরাইয়াকে সঙ্গে নিয়ে তাঁর মা বৈশাখী টেইলার্সে স্কুলের পোশাক বানাতে যান। যোগাযোগের জন্য বাসার ঠিকানা ও মুঠোফোন নম্বর দিয়ে আসা হয় দোকানে। এরপর থেকে ওই দোকানের কাটিং মাস্টার ওবায়দুল খান মুঠোফোনে সুরাইয়াকে উত্ত্যক্ত করতে থাকে।

বিষয়টি জানতে পেরে মুঠোফোনটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। মুঠোফোন বন্ধ করে দেওয়ার পর পরিবার ভেবেছিল আর কোনো সমস্যা হবে না। তাই পুলিশকেও কিছু জানানো হয়নি।

“একটি মেয়ে পোশাক বানাতে গেছে মায়ের সঙ্গে, তাঁকে দর্জির ভালো লেগেছে। কিন্তু মেয়েটি প্রেম প্রত্যাখান করায় এই হিংস্রতা মেনে নেওয়া যায় না,” বেনারকে জানান সাংবাদিক ও কলামিষ্ট পারভীন সুলতানা।

তিনি বলেন, এ দেশে অনেক আইন আছে। কিন্তু এমন নিকৃষ্ট অপরাধও ঘটছে। এমন অন্যায়ের বিরুদ্ধে জনতাকে জাগতে হবে, জাগতে হবে পুরো বাংলাদেশকে।

পুলিশ জানায়, ওবায়দুল গত সোমবার দুপুর পর্যন্ত তার গ্রামে ছিল। ওইদিন সন্ধ্যায় পুলিশ তার বাড়িতে অভিযান চালানোর আগেই সে সটকে পড়ে। ওবায়দুলকে না পেয়ে পাশের বাড়ি থেকে তার বোন খাদিজা বেগম (৩৬) ও ভগ্নিপতি খাদেমুল ইসলামকে (৪৬) বীরগঞ্জ থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। সেখানে রমনা থানার পুলিশ তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে।

পুলিশ আরও জানায়, মঙ্গলবার রাতে ওবায়দুল তার দুলাভাইয়ের ছোট ভাই ব্র্যাক কর্মকর্তা খুশবুর খোঁজে ডোমারে যায়। ডোমার অফিসে খুশবুকে না পেয়ে ওবায়দুল তার সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বলে। এরপর খুশবু ডোমার ব্র্যাক অফিসের সহকারীকে ফোন দিয়ে ওবায়দুলকে দেখে রাখতে বলেন। অন্যদিকে খুশবু নিজেই তাকে ধরিয়ে দেওয়ার জন্য বীরগঞ্জ থানায় খবর দেন।

খবর পেয়ে ডোমার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আহমেদ রাজিউর রহমানের নেতৃত্বে ঢাকার রমনা থানার উপপরিদর্শক মোশারফ হোসেনসহ একদল পুলিশ ডোমার ব্র্যাক অফিসে হানা দেয়। পুলিশের অবস্থান বুঝতে পেরে ওবায়দুল পালিয়ে যায়।

ওবায়দুলকে গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশ নীলফামারীর বিভিন্ন এলাকায় তার ছবি ছড়িয়ে দেয়।

স্থানীয় সাংবাদিকেরা জানান, ওবায়েদুলকে স্থানীয় সোনারায় বাজারে ঘোরাঘুরি করতে দেখে মাংস বিক্রেতা দুলাল হোসেন পুলিশকে খবর দেয়।

এক সংবাদ সম্মেলনে জেলা পুলিশ সুপার মো. জাকির হোসেন খান বলেন,স্থানীয় জনতার মাধ্যমে খবর পেয়ে  ডিএমপি, স্থানীয় পুলিশ ও র‍্যাব যৌথ অভিযান চালিয়ে গতকাল সকালে ওবায়দুলকে উপজেলার সোনারায় বাজার থেকে  গ্রেপ্তার করা হয়।

গতকাল দুপুর ১২টার দিকে নীলফামারীর ডোমার থানা থেকে ওবায়দুলকে সঙ্গে নিয়ে মাইক্রোবাসে করে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছে পুলিশের একটি দল। পুলিশের এই দলের নেতৃত্বে আছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) রমনা জোনের অতিরিক্ত কমিশনার (এডিসি) এইচ এম আজিমুল হক।

“ওবায়দুলকে ঢাকায় নেওয়ার পর সুরাইয়া হত্যা মামলায় আদালতে তোলা হবে,” টেলিফোনে বেনারকে জানান আজিমুল।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।