দিদি–আম্মার জয়, তবে কংগ্রেসের ভরাডুবি

বেনার নিউজ স্টাফ
2016.05.19
Kolkata-Election620.jpg পশ্চিমবঙ্গে মমতার তৃণমুল কংগ্রেস বিপুল ভোটে বিজয়ী হওয়ার পর নেতা–কর্মীরা রঙ মেখে আনন্দ–উল্লাস করেন। মে ১৯, ২০১৬।
ফোকাস বাংলা

ভারতের পাঁ​চটি রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন বিজেপির পালে হাওয়া লাগলেও ভরাডুবি হয়েছে বিরোধী দল কংগ্রেস ও তার মিত্রদের।

বৃহস্পতিবার ভারতের নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত ফলে দেখা গেছে, পশ্চিমবঙ্গ ও তামিলনাড়ুতে দ্বিতীয়বারের মতো সরকার গঠন করতে যাচ্ছে সেখানে ক্ষমতাসীন মমতার কংগ্রেস ও জয়ললিতার এআইডিএমকে।

গত ৪ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া ৬ দফার নির্বাচন শেষ হয় ৫ মে। নির্বাচনে সহিংসতা, কারচুপি, অনিয়ম—সবকিছুই ছিল। তারপর ছিল দুই সপ্তাহের অপেক্ষা।

নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে বিজেপি সরকার গঠনের ঠিক দুই বছরের মাথায় বিধানসভা নির্বাচনেও দলীয় প্রতীক পদ্মফুলের জনপ্রিয়তা বেড়েছে; অন্যদিকে কংগ্রেসের পাঞ্জা আসাম ও কেরালার মতো দুটি রাজ্য হারিয়েছে।

কেরালায় সিপিএমের নেতৃত্বাধীন এলডিএফ, পদুচেরিতে কংগ্রেস এবং আসামে প্রথমবারের মতো সরকার গড়তে চলেছে কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন বিজেপি।

ভোটে বিজেপির সমর্থন বৃদ্ধিকে নরেন্দ্র মোদীর গত দুই বছরের কর্মকাণ্ডের প্রতি জনগণের ‘সায়’ বলে ভারতের গণমাধ্যমের কাছে মন্তব্য করেছেন দলটির প্রধান অমিত শাহ।

অন্যদিকে পাঁচ রাজ্যের এমন ফল মেনে নিয়েছেন কংগ্রেস। এক টুইটে বিনয়ের সঙ্গে জনগণের রায় মেনে নেওয়ার কথা জানিয়েছেন দলটির ভাইস প্রেসিডেন্ট রাহুল গান্ধী।

নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, পশ্চিমবঙ্গে মমতার তৃণমুল কংগ্রেস ২৯৪ টির মধ্যে ২১১টি আসন পেয়েছে। এই রাজ্যে কংগ্রেস ৪৪টি এবং বাম-কংগ্রেস জোট মিলে ৭৭টি আসন পেয়েছে।

আসামে ১২৬টির মধ্যে বিজেপি পেয়েছে ৮৬টি, কেরালায় ১৪০টির মধ্যে এলডিএফ ৯১টি, পদুচেরিতে ৩০টির মধ্যে কংগ্রেস ১৭টি আসন পেয়েছে। ২৩৪ আসনের মধ্যে তামিলনাড়ুতে জয়ললিতার নেতৃত্বাধীন এআইডিএমকে পেয়েছে ১৩৪টি।

দিদিআম্মার জয়, কংগ্রেসের ভরাডুবি

পশ্চিমবঙ্গে মমতাকে সবাই ‘দিদি’ নামেই ডাকে। তামিলনাড়ুতে জয়ললিতাকে ডাকা হয় ‘আম্মা’ নামে। বিশ্লেষকেরা তাই বলছেন ভোটাররা ‘দিদি’ আর ‘আম্মা’র ওপরই আস্থা রেখেছেন। তাঁদের দল আগের চেয়ে বেশি সমর্থন নিয়ে বিজয়ী হয়েছে।

পশ্চিমবঙ্গে নানা কেলেঙ্কারিতে তৃণমূল নেতাদের নাম আসে। নির্বাচনের আগে আওয়াজ উঠেছিল পরিবর্তনের’, ছিল সারদা কেলেঙ্কারির মতো ঘটনা। কলকাতায় ফ্লাইওভার ভেঙে পড়ার পর রব উঠেছিল, ঘুরে যাচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতির হাওয়া।

শেষ পর্যন্ত এই রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে তার কিছুই হয়নি। সব শঙ্কা কাটিয়ে আবারও পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতায় বসছে তৃণমূল কংগ্রেস। ফিরছে ‍বিপুল ভোটে, আগের চেয়েও নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে। দ্বিতীয় দফায় মুখ্যমন্ত্রী হতে চলেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকায় গতকাল শীর্ষ খবরের শুরুটাই ছিল এরকম—“সব হিসাব গুলিয়ে দিলেন মমতা। ভোট ঘোষণা হওয়ার পর থেকেই বহু সমীকরণ, বহু পাটিগণিত, বহু যোগ-বিয়োগ শুরু হয়েছিল রাজ্যজুড়ে। সব অঙ্ককেই ভুল প্রমাণ করে ইভিএমে নিজের পক্ষে ঝড় তুলে দিলেন তৃণমূলনেত্রী।”

আসন সংখ্যা ডবল সেঞ্চুরি হওয়ায় তৃণমূলের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ফোন করে অভিনন্দন জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। মমতাকে অভিনন্দন জানানোর খবরটি নরেন্দ্র মোদি নিজেই টুইট করে জানান।

নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার পর মমতা এনডিটিভিকে বলেন, “আমি সব সময় আত্মবিশ্বাসী ছিলাম। তারা মাঠে ছিল না, আমিই ছিলাম।”

মমতার মতো ক্ষমতা ধরে রেখেছেন আরেক ‘শক্তিশালী’ নারী জয়ললিতা। তামিল নাড়ুর ২৩৪ আসনের মধ্যে দুটি বাদে বাকিগুলোর ফল ঘোষণা হয়েছে, যেখানে জয়ললিতার দল এডিএমকে ১৩২টিতে জয়ী হয়েছে। তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী ডিএমকে পেয়েছে ৯৯টি আসন।

তামিল নাড়ুকে ‘এক নম্বর রাজ্য’ করার প্রত্যয় জানিয়ে জয়ললিতা বলেছেন, এই নির্বাচন ডিএমকে পরিবারের রাজনীতির ইতি টেনেছে।

আসাম বিজেপির

আসামে বিজেপি যে প্রথমবারের মতো ক্ষমতায় আসতে চলেছে, সে ইঙ্গিত শুরু থেকেই বুথ ফেরত জরিপে পাওয়া গিয়েছিল।

গত ১৫ বছর ধরে কংগ্রেসের শাসন করে আসা আসাম এবার গেছে বিজেপির ঘরে। ১২৬ আসনের বিধান সভায় ৮৬টিতে জিতেছে পদ্মফুলের প্রার্থীরা।

আর কংগ্রেসের প্রার্থীরা আসামে জয়ী হয়েছেন ২৪টিতে, খুইয়েছেন ৫৪টি আসন। তরুণ গগৈ-এর জায়গায় এবার কেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্রী সর্বানন্দ সনোয়ালকে আসামের মুখ্যমন্ত্রী করার ঘোষণা দিয়েছে বিজেপি।

২৯৪ আসনের বিধান সভায় এবার তৃণমূল প্রার্থীরা জয় পেয়েছেন ২১৪টিতে, যা গতবারের চেয়ে ৩০টি বেশি। বিরোধী কংগ্রেস-বামফ্রন্ট জোটের ঘরে উঠেছে ৭৪ আসন।

কেরালায় বামপন্থীরা

পশ্চিমবঙ্গ পুনরুদ্ধারে ব্যর্থ হলেও কেরালায় বিপুল ভোটে জয়ী হয়ে ক্ষমতায় ফিরছে বামপন্থিরা। ১৪০ আসনের বিধানসভায় ৯১টিতে জিতেছে বাম-গণতান্ত্রিক জোট এলডিএফ। কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউনাইটেড ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউডিএফ) পেয়েছে ৪৭টি আসন। এলডিএফের ঘরে নতুর করে ২৪টি এলেও ইউডিএফ জোট খুইয়েছে ২৩টি আসন।

এই রাজ্যের বিধানসভায় এর আগে কখনও বিজেপির উপস্থিতি না থাকলেও এবার একটি আসন পেয়েছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দল।

কংগ্রেস নেতৃত্বের জন্য কিছুটা স্বস্তি এনেছে কেন্দ্রশাসিত পুদুচেরি। এখানকার ৩০টি আসনের মধ্যে ১৭টিতে এগিয়ে রয়েছে তারা।

ফলাফলে ​দেখা যাচ্ছে, কংগ্রেসের অবস্থা আরও শোচনীয় হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে সিপিএমের সঙ্গে জোট বেঁধে ভরাডুবি ছাড়াও কেরালায় ক্ষমতাচ্যুত হতে চলেছে কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ইউডিএফ।

তামিলনাড়ুতে জোটসঙ্গী ডিএমকের সঙ্গে ভরাডুবি হয়েছে কংগ্রেসেরও। পদুচেরিতে শুধু কংগ্রেস-ডিএমকে জোট এআইএনআরসির চেয়ে এগিয়ে থেকে সরকার গঠনের সংখ্যা গরিষ্ঠতা পেয়েছে।

গতকালের ফলাফলের পর আনন্দবাজারের এক বি​শ্লেষণে বলা হয়েছে, পশ্চিমবঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিপুল জয় হলেও কংগ্রেস ও বাম জোটের হার, তামিলনাড়ুতে আম্মার জয়ের ফলে ডিএমকে-কংগ্রেসের হার, আর কেরল-অসম কংগ্রেসের হাতছাড়া হওয়ার ফলে সার্বিক ভাবে নিজেদেরই জয় দেখছেন নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহ।

ক্ষমতায় আসার আগে থেকেই নরেন্দ্র মোদী গোটা দেশকে ‘কংগ্রেস-মুক্ত’ করার যে স্লোগান দিয়েছিলেন, সেই লক্ষ্যেই আরও এক ধাপ এগোনো গেল বলে আজ দাবি করলেন মোদীর সেনাপতি অমিত শাহ।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।