ফের আলোচনায় ‘শহীদ হামজা ব্রিগেড,’ অর্থদাতা গ্রেপ্তার

ঢাকা থেকে শাহরিয়ার শরীফ
2016.10.12
161012-Hamja-Brigade1000.jpg শহীদ হামজা ব্রিগেডকে অর্থ সহায়তা দেওয়ার অভিযোগে ব্যবসায়ী মনজুর এলাহীকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব-৭। অক্টোবর ১২, ২০১৬।
নিউজরুম ফটো

দেড় বছরেরও বেশি সময় পর ফের আলোচনায় এসেছে ‘শহীদ হামজা ব্রিগেড’ নামের জঙ্গি সংগঠনটি, যেটির জন্ম বন্দরনগরী চট্টগ্রামে। ওই সংগঠনটিকে অর্থায়নের অভিযোগে ঢাকার উত্তরা থেকে তৈরি পোশাক ব্যবসায়ী আ স ম মনজুর এলাহী ওরফে মঞ্জুরকে (৩৭) গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব-৭।

গতকাল বুধবার তাকে কারাগারে পাঠিয়েছে চট্টগ্রামের একটি আদালত। বাঁশখালী ও হাটহাজারী থানার দুটি মামলায় অভিযোগপত্রভুক্ত আসামি সে।

র‍্যাবের সংবাদ ব্রিফিংয়ে গতকাল জানানো হয়, মঞ্জুর শহীদ হামজা ব্রিগেডের ইসলামী ব্যাংকের ও আর নিজাম রোড শাখার একটি হিসাবে চার লাখ ২০ হাজার টাকা এবং নগদ ৮০ হাজার টাকাসহ মোট পাঁচ লাখ টাকা দেয়। নব্য জেএমবি নেতা মনিরুজ্জামান মাসুদকে এই ব্যবসায়ী অর্থ সহযোগিতা দিয়েছিল।

র‍্যাবের দাবি, ২০১৩ সালের শেষের দিকে চট্টগ্রামের নগরের ফয়’স লেক এলাকার একটি রেস্তোরাঁয় নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘শহীদ হামজা ব্রিগেড’ গঠন করে জঙ্গিরা। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মুসলমানদের উপর নির্যাতনের ভিডিও দেখিয়ে কলেজ ও মাদ্রাসাপড়ুয়া ছাত্রদের এই সংগঠনে যোগ দিতে উদ্বুদ্ধ করা হয়।

পরে তাদের পাহাড়ে অস্ত্র প্রশিক্ষণ দেওয়া হতো। ২০১৫ সালে এই সংগঠনের নানা তৎপরতার কথা জানা গেলেও গত প্রায় দেড় বছর এই জঙ্গি সংগঠনটি আলোচনায় ছিল না।

গত মঙ্গলবার রাতে ঢাকার উত্তরার ১৪ নম্বর সেক্টরের ১৩ নম্বর সড়কের একটি বাড়ির সামনে থেকে মঞ্জুরকে গ্রেপ্তারের কথা জানায় র‍্যাব। সে চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ উপজেলার কালাপানিয়া গ্রামের অধ্যাপক সুলতান আহাম্মদের ছেলে।

“বাঁশখালী ও হাটহাজারী থানার দুটি মামলায় অভিযোগপত্রভুক্ত আসামি মঞ্জুর। ওই দুটি মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে হাজির করা হয়েছিল,” বেনারকে জানান র‍্যাব-৭ এর সহকারী পরিচালক (গণমাধ্যম) চন্দন দেবনাথ।

চট্টগ্রাম জেলা আদালতের পুলিশ পরিদর্শক এএইচএম মশিউর রহমান বেনারকে জানান, ওই আসামীকে আদালতে হাজির করা হলে জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম মাহমুদুল হাসান তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

গত বছর ২১ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার লটমনি পাহাড়ে একটি জঙ্গি আস্তানায় বিপুল পরিমাণ অস্ত্রের সন্ধান পায় র‍্যাব। ওই ঘটনায় গ্রেপ্তার করা হয় পাঁচজনকে। ওই মাসেই চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলা এবং হালিশহরে আরও দুটি জঙ্গি আস্তানার খোঁজ পায় র‍্যাব।

লটমনি পাহাড়ে জঙ্গি আস্তানা থেকে অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় চলতি বছর মার্চে ২৮ জন এবং হাটহাজারীর মাদ্রাসা থেকে জঙ্গি প্রশিক্ষণের সরঞ্জাম উদ্ধারের ঘটনায় এপ্রিলে ৩৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় র‍্যাব। দুই মামলার অভিযোগপত্রেই মঞ্জুর এলাহীর নাম আছে।

গত বছরের এপ্রিলে বন্দরনগরী থেকে অস্ত্রসহ চারজনকে গ্রেপ্তারের পর নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘হামজা ব্রিগেড’ সম্পর্কে তথ্য প্রকাশ করে র‍্যাব। অস্ত্র কিনতে তাদের এক কোটি ৮ লাখ টাকা দেওয়ার অভিযোগে গত বছরের ১৮ আগস্ট রাতে ধানমন্ডি থেকে তিন আইনজীবী হাসানুজ্জামান লিটন, মাহফুজ চৌধুরী বাপন ও ব্যারিস্টার শাকিলা ফারাজানাকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব।

লিটন ও বাপন গত বছরের ডিসেম্বরে জামিনে মুক্তি পান। উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়ে ব্যারিস্টার শাকিলা কারাগার থেকে মুক্তি পান ৭ জুন।

র‍্যাব-৭ চট্টগ্রামের অধিনায়ক লে. কর্নেল মিফতাহ উদ্দিন আহমেদ বেনারকে জানান, গত বছরের ১৯ ফেব্রুয়ারি হাটহাজারী সদরের মাদরাসাতুল আবু বকরে অভিযান চালিয়ে জঙ্গি সন্দেহে ১২ জনকে আটক করা হয়।

রিমান্ডে তাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ২১ ফেব্রুয়ারি বাঁশখালীর লটমনি পাহাড়ে অভিযান চালিয়ে পাঁচ জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ২৮ ফেব্রুয়ারি হালিশহর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় একটি বাসায় অভিযান চালিয়ে বোমা তৈরির বিপুল সরঞ্জাম, ৭৬টি হাতবোমাসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

তিনি জানান, এসব জঙ্গিদের জিজ্ঞাসাবাদ করে র‍্যাব জানতে পারে, শহীদ হামজা ব্রিগেড নামে জঙ্গিরা নতুন একটি সংগঠন করেছে। ওই সংগঠনটিকে দমন করতে র‍্যাব চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানান ওই কর্মকর্তা।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।