স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসায় দুই জঙ্গি সদস্য পুরস্কার পেলেন

ঢাকা থেকে জেসমিন পাপড়ি
2016.10.05
20161005-Militants-Surrender1000.jpg আত্মসমর্পণ করা নব্য জেএমবির এক সদস্যের হাতে ৫ লাখ টাকার চেক তুলে দিচ্ছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। অক্টোবর ০৬, ২০১৬।
স্টার মেইল

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আহ্বানে সাড়া দিয়ে জঙ্গি সংগঠন ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে আত্মসমর্পণ করেছেন দুই তরুণ, যারা নিজেদের পড়ালেখা চালিয়ে যেতে চান। এই সিদ্ধান্তের জন্য পুরস্কৃত করার পাশাপাশি তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে সরকার।

আত্মসমর্পণ করা দুই তরুণ হলেন; আবদুল হাকিম (২২) ও বগুড়া পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ছাত্র মাহমুদুল হাসান ওরফে বিজয় (১৭। এরা দুজনই নব্য জেএমবির সদস্য ছিলেন।

বগুড়ার র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব-১২) আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বুধবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করে তারা। এ সময় তাদের প্রত্যেকের হাতে র‌্যাবের প্রতিশ্রুত ৫ লাখ টাকার চেক তুলে দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় জঙ্গি হামলার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কমান্ডো অভিযানে নিহত হয় বগুড়ার শাহজাহানপুর উপজেলার খায়রুল ইসলাম ওরফে পায়েল নামে এক জঙ্গি। তারই সহযোগী আবদুল হাকিম (২২) পলাতক ছিলেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে বুধবার আত্মসমর্পণ করেন তিনি।

এ ঘটনাকে সন্ত্রাস দমনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটি সফলতা বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। তবে তাঁরা বলছেন, জঙ্গি হিসেবে কেউ অপরাধমূলক কাজে জড়িয়ে পড়লে তার শাস্তি হওয়া উচিত।

জিহাদের কথা বলে অন্ধকার পথে

আত্মসমর্পণ করা জঙ্গিরা জানিয়েছেন, জিহাদের কথা বলে তাদের জঙ্গিবাদের অন্ধকার পথে নেওয়া হয়েছিল। এখন ভুল বুঝতে পেরে তারা স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চান।

আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে আবদুল হাকিম বলেন, “আমরা যে পথে গিয়েছিলাম, সেটা ছিল অন্ধকারের পথ। আমি ভুল বুঝতে পেরে ফিরে এসেছি।”

অপর তরুণ মাহমুদুল হাসান একই অনুষ্ঠানে বলেন, “আমি জেএমবির কয়েকটি সভায় যাই। সেখানে আমাদের হিন্দু পুরোহিত, খ্রিস্টান এবং শিয়া সম্প্রদায়কে টার্গেট করে কীভাবে হত্যা করা যায়, সে বিষয়ে ধারণা দেওয়া হয়। আমি ওই পথ থেকে ফিরে এসেছি। আপনারা আমাকে ক্ষমা করবেন।”

স্বাভাবিক জীবনে ফেরার দরজা খোলা

জঙ্গিদের এভাবে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার আগ্রহকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছে সরকার। তাদের আত্মসমর্পণের দরজা খোলা বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তবে যারা আত্মসমর্পণ করবে না, তাদের পরিণতি সম্পর্কে হুঁশিয়ার করেন তিনি।

জঙ্গিদের উদ্দেশ্য করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “ইসলামকে কলঙ্কিত করার বিপথ থেকে তোমরা যদি স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসো, তাহলে তোমাদের জন্য সব ব্যবস্থা করা হবে। তোমাদের জন্য আত্মসমর্পণের দরজা সব সময় খোলা থাকবে। অন্যথায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তোমাদের খুঁজে বের করে নিয়ে আসবে।”

হাকিম ও মাহমুদুলকে নাশকতার জন্য জামায়াত-শিবির প্রশিক্ষণ দিয়েছিল—এ কথা উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “আত্মসমর্পণকারীদের মদদদাতা, অর্থ ও উস্কানিদাতারা চিহ্নিত হয়েছে। তাদেরও ছাড় দেওয়া হবে না।”

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সরকারের আহ্বানে সাড়া দিয়ে জঙ্গিরা দল বেঁধে আত্মসমর্পণের জন্য যোগাযোগ করছে।

এদিকে জঙ্গিবাদ দমনে কঠোরতার পাশাপাশি মানুষের মনোজগতের পরিবর্তন আনতে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বুধবার জাতীয় সংসদে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “শুধু অস্ত্র দিয়ে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমন করা যাবে না। এ জন্য সামাজিক শক্তির মাধ্যমে মানুষের মনোজগতে পরিবর্তন আনতে হবে।”

সহিংসতায় জড়িতদের বিচার হওয়া উচিত

নিরাপত্তা বিশ্লেষকেরা জঙ্গিদের আত্মসমর্পণের বিষয়টিকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। তবে আত্মসমর্পণকারীদের কেউ কেউ সহিংসতায় জড়িত থাকলে, তাদের বিচার করার পক্ষে মত দিয়েছেন তাঁরা।

এ প্রসঙ্গে নিরাপত্তা বিশ্লেষক ইশহাক ইলাহী চৌধুরী বেনারকে বলেন, “জঙ্গিদের আত্মসমপর্ণ অত্যন্ত সুখবর, এটাকে ‘ডির‌্যাডিকালাইজেশন’ বলে। অর্থ্যাৎ একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জঙ্গিদের মানসিকভাবে প্রস্তুত করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা।”

তাঁর মতে, অনেকেই স্বাভাবিক জীবনে ফিরে অন্যদের এর ক্ষতিকারক দিক নিয়ে সতর্ক করতে পারে।

মানবাধিকারকর্মী নুর খান বেনারকে বলেন, “আইন শৃঙ্খলা বাহিনী এমন উদ্যোগে যদি আরও জঙ্গি ফিরতে চায় তবে তা প্রসংশনীয়। তবে এরা কারা, কোন ধরনের জঙ্গি, কোন সংগঠনের সঙ্গে জড়িত ছিল, তা খতিয়ে দেখা দরকার।

তিনি বলেন, “কেউ সশস্ত্র কর্মকান্ডে জড়িত থাকলে তার বিচার করতে হবে। তবে সংগঠনের সদস্য হয়ে সহিংসতায় না জড়ালে তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পূর্ন সহযোগিতার পাশাপাশি পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে।”

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।