মিয়ানমার সীমান্তে দুর্বৃত্তদের হামলায় ৯ পুলিশ নিহত, সতর্ক বাংলাদেশ
2016.10.10

বাংলাদেশের সীমান্ত সংলগ্ন মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সীমান্ত পুলিশের তিনটি চেক পোস্টে দুর্বৃত্তদের হামলায় নয় পুলিশ ও সাত হামলাকারী নিহত হয়েছে। তবে কারা এ হামলা চালিয়েছে তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। প্রাথমিকভাবে দেশটির বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী আরএসও–কে দায়ী করেছে ইয়াঙ্গুন।
ওই ঘটনার পর বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে নজরদারি ও টহল বাড়িয়েছে বাংলাদেশ। দেশটির সন্ত্রাসীরা যাতে বাংলাদেশে ঢুকতে না পারে সে বিষয়েও সজাগ রয়েছে সীমান্ত রক্ষী বাহিনী—বিজিবি।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো দেশটির পুলিশ প্রধান জাও উইনকে উদ্ধৃত করে জানায়, গত রোববার ভোরে বাংলাদেশ সীমান্তের কাছে মংডু এলাকায় তিনটি পুলিশ চেক পোস্টে সমন্বিত হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় নয় পুলিশ নিহত, একজন নিখোঁজ ও পাঁচজন আহত হয়েছেন। এ সময় সাতজন হামলাকারীও নিহত হয়। জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে দুজন হামলাকারীকে।
সংবাদ সংস্থা এএফপি রাখাইন রাজ্যের এক সরকারি কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করে বলেছেন, এ হামলার পেছনে বিচ্ছিন্নতাবাদী গ্রুপ রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও) রয়েছে।
রোববারের হামলার পর রাজধানী নে পি দোতে এক সংবাদ সম্মেলনে পুলিশের জেনারেল জাউ উইন বলেন, “হামলাকারীরা সীমান্ত পোস্টে হামলার সময় ‘আমরা রোহিঙ্গা’ বলে চিৎকার করেছিল।”
রাখাইন রাজ্যে প্রায় ১১ লাখ মানুষের বসবাস। যাদের বেশিরভাগই মুসলিম রোহিঙ্গা জাতিগোষ্ঠীর। তবে এদের অধিকাংশই স্বাভাবিক জীবনযাপনে কঠোর নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি হয়।
এর আগে ২০১২ সালে রাখাইন রাজ্যে বৌদ্ধ ও মুসলিম রোহিঙ্গাদের মধ্যে সহিংসতায় বহু মানুষ হতাহত হয়। এরপর বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে যায় লক্ষাধিক মুসলিম রোহিঙ্গা।
মিয়ানমারের এই রাজ্যে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা কমাতে জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনানের নেতৃত্বে একটি উপদেষ্টা কমিশন দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে।
বিবিসি জানিয়েছে, রোববার আক্রমণকারীরা পুলিশের তিনটি ছাউনি থেকে ৫০টির বেশি বন্দুক ও ১০ হাজার রাউন্ডেরও বেশি গুলি লুট করে নিয়ে গেছে।
এদিকে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে ওই হামলার বিষয়ে বাংলাদেশকে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি দেশটি। তবে ঘটনার পরপরই মৌখিকভাবে বিষয়টি বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীকে জানায় মিয়ানমার বর্ডার গার্ড। সে অনুযায়ী সীমান্তে সতর্কতা বাড়িয়েছে বাংলাদেশ।
এ বিষয়ে বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদ বেনারকে বলেন, “আরএসওসহ কয়েকটি সন্ত্রাসী গ্রুপ তাদের আউটপোস্টে হামলা চালিয়ে কয়েকজন বর্ডার গার্ড পুলিশ হত্যা করেছে বলে দেশটির স্থানীয় কর্তৃপক্ষ টেলিফোনে টেকনাফের বিজিবিকে জানিয়েছিল। এই প্রেক্ষিতে আমরা সীমান্তে টহল এবং নজরদারি বাড়ানোর কথা জানিয়েছি, যাতে ওই প্রান্তের সন্ত্রাসীরা পালিয়ে বাংলাদেশে ঢুকতে না পারে।”
এ প্রসঙ্গে টেকনাফে বিজিবির কমান্ডিং অফিসার লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবু জর আল জাহিদ বেনারকে জানান, “মিয়ানমার পুলিশ আমাদের জানানোর আগেই গভীর রাতে গোলাগুলির শব্দ শুনতে পেয়ে সীমান্তের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। পরে মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী ঘটনা জানিয়ে সন্ত্রাসীরা যাতে বাংলাদেশে ঢুকতে না পারে সে জন্য ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানায়।”
এসব সন্ত্রাসীরা বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারে প্রবেশ করেছে কী না—এমন প্রশ্নের জবাবে বিজিবি মহাপরিচালক জানান, “বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারে প্রবেশের কোনও সুযোগ নেই। আমরা স্পষ্ট করে জানিয়েছি, আরএসও কিংবা মিয়ানমারের কোনও বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী এ দেশে নেই। বরং বিভিন্ন সময় তারা ধরা পড়লে তাদের মিয়ানমারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।”
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আরাকান রাজ্যের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের দমনে মিয়ানমারকে সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। তবে রোববারের ঘটনা এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে না জানানো প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেনারকে বলেন, “বিষয়টি হয়তো এখনও তদন্ত করছে মিয়ানমার। ভবিষ্যতে ওরা বাংলাদেশের সঙ্গে যোগাযোগ করতেও পারে। তবে আমরা কনফিডেন্ট আমাদের দিক থেকে কিছু হয়নি।”
এদিকে ওই ঘটনার পরে মংডু টাউন কর্তৃপক্ষ পাঁচজনের বেশি মানুষের সমাবেশ নিষিদ্ধ করে জারি করা আদেশের সময়সীমা বাড়িয়েছে। পাশাপাশি সন্ধ্যা ৭টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত সান্ধ্য আইন জারি করেছে। হেলিকপ্টারে করে ঘটনাস্থলে সেনা পাঠানো হয়েছে বলেও জানিয়েছে দেশটির রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা।