কয়েকজন ব্লগারকে আশ্রয় দেবে যুক্তরাষ্ট্র, হত্যার দায় শিকার আল কায়েদার

ঢাকা থেকে শাহরিয়ার শরীফ
2016.04.08
160408-BD-dhaka-1000 সহপাঠী নাজিমউদ্দিন সামাদকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে হত্যার প্রতিবাদে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সংহতি সমাবেশ করে। ৮ এপ্রিল ২০১৬।
ফোকাস বাংলা

ঢাকায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ছাত্র নাজিমউদ্দিন সামাদকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে হত্যার দায় শিকার করেছে আল কায়েদার ভারতীয় উপমহাদেশ শাখা (একিউআইএস)। অনলাইনে জিহাদি কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণকারী প্রতিষ্ঠান সাইট ইন্টেলিজেন্স গ্রুপ শুক্রবার তাদের ওয়েবসাইটে এ কথা জানিয়েছে।   

এদিকে ঝুঁকিতে থাকা বাংলাদেশের কয়েকজন ব্লগারকে আশ্রয় দেওয়ার কথা বিবেচনা করছে যুক্তরাষ্ট্র । শুক্রবার ফক্স নিউজ অনলাইনের প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।

প্রতিবেদন অনুসারে, ইসলামের বিরুদ্ধে কথা বলায় বাংলাদেশের যেসব ব্লগার আসন্ন বিপদের মুখে, তাঁদের আশ্রয় দেওয়ার কথা বিবেচনা করছে যুক্তরাষ্ট্র।

ফেসবুকের বিভিন্ন স্ট্যাটাসে নাজিম জঙ্গিবাদ, ধর্মান্ধতা ও সরকারের সমালোচনা করায় তাঁকে খুন করা হতে পারে বলে পরিবার ও বন্ধুদের ধারণা। পুলিশ এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় অন্ধকারে রয়েছে। গতকাল পর্যন্ত কেউ গ্রেপ্তার হয়নি।

“এখন পর্যন্ত হত্যাকাণ্ডের ক্লু পাওয়া যায়নি। পুলিশ চেষ্টা করছে হত্যাকারীদের চিহ্নিত ও গ্রেপ্তার করতে,” বেনারকে জানান সূত্রাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা পর কুমার সাহা।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, উগ্রবাদী কোনও গোষ্ঠী জড়িত কিনা, তা নিশ্চিত হওয়া হয়নি।

বাংলাদেশে ২০১৩ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ছয়জন অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট, ব্লগার, লেখক ও প্রকাশককে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু এসব ঘটনায় বিচারের অগ্রগতি সন্তোষজনক নয় বলে মনে করছে নিহতদের পরিবার ও স্বজনেরা।

তবে ঝুঁকিপূর্ণ কয়েকজনকে যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় দেওয়ার এই ঘোষণার পর প্রশ্ন উঠেছে—বিদেশে আশ্রয় নেওয়াই কি এর সমাধান?

“এতে কারও কারও জীবন হয়তো বাঁচবে। কিন্তু এটা সমাধান নয়। মৌলবাদী বা ধর্মান্ধদের খপ্পর থেকে দেশকে বাঁচাতে আন্দোলন–সংগ্রামের বিকল্প নেই,” বেনারকে জানান গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার।

মৌলবাদীদের খপ্পর থেকে দেশকে রক্ষায় সরকার ও আইন–শৃঙ্খলা বাহিনী আন্তরিক নয় বলে অভিযোগ করেন তিনি।  

এদিকে বৃহস্পতিবার ওয়াশিংটনে পররাষ্ট্র দপ্তরের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে উপ মুখপাত্র মার্ক টোনার এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, “চরম ঝুঁকির মধ্যে থাকা নির্দিষ্ট সংখ্যক ব্লগারের জন্য এটি একটি বিকল্প হতে পারে, এ বিষয়টি বিবেচনায় আছে ।” দেশি–বিদেশি বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে এই ব্রিফিংয়ের খবর প্রকাশিত হয়।  

একের পর এক জঙ্গি হামলা ও হুমকির প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের মুক্তমনা ব্লগার, লেখকদের যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় দিতে সম্প্রতি পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরির কাছে সুপারিশ করে ইউএস কমিশন অন ইন্টারন্যাশনাল রিলিজিয়াস ফ্রিডম—ইউএসসিআইআরএফ।

ওই চিঠির প্রসঙ্গ তুলেই এক সাংবাদিক টোনারের কাছে জানতে চেয়েছিলেন—ব্লগারদের আশ্রয় দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে কোনো অগ্রগতি হয়েছে কি না।

টোনার বলেন, বিষয়টি হোমল্যান্ড সিকিউরিটি দপ্তরের আওতাধীন। এ বিষয়ে তার হাতে খুব বেশি তথ্য নেই।

নাজিমুদ্দিন সামাদ হত্যাকাণ্ডকে একটি ‘গুরুতর ঘটনা’ হিসেবে চিহ্নিত করে টোনার বলেন, সহিংস উগ্রপন্থার বিরুদ্ধে কথা বলায় তাকে হত্যা করা হয়েছে বলে যুক্তরাষ্ট্র মনে করছে।

সন্ত্রাসবাদ, সহিংস উগ্রপন্থার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এবং এ ধরনের নৃশংসতার সঙ্গে জড়িতদের বিচারের মুখোমুখি করতে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে সমর্থন দিয়ে যাবে বলে পররাষ্ট্র দপ্তরের এই কর্মকর্তা জানান।

রাজনীতিবিদেরা চুপচাপ

নাজিম হত্যার পরও যথারীতি সরকার ও বিরোধী দলগুলো এক ধরনের নীরবতা পালন করছে। বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন সোচ্চার হলেও রাজনীতিবিদদের মধ্যে এ নিয়ে প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যায়নি।

তবে জাতীয় সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির  চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ যারা ব্লগে ইসলাম ধর্ম নিয়ে কটাক্ষ করে, সেসব ব্লগারের শাস্তি দাবি করেছেন। তিনি বলেন, “আমি কোনো হত্যার পক্ষে নই। ব্লগারদের হত্যারও বিচার চাই। একই সঙ্গে যারা ব্লগে ধর্ম নিয়ে বিদ্রূপ করে তাদেরও শাস্তির দাবি করি।”

গতকাল রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় এরশাদ এসব কথা বলেন।  তিনি আরও বলেন, “প্রধানমন্ত্রী স্পষ্ট করে বলেছেন, কারও ধর্ম নিয়ে কটাক্ষ করা যাবে না। কিন্তু যেসব ব্লগার হত্যার শিকার হয়েছে, তারা কি ইসলামের বিরুদ্ধে কটাক্ষ করেনি?”

সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদ আরও বলেন, “ব্লগার হত্যা আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় ব্যাপকভাবে আলোড়ন সৃষ্টি করছে। অথচ আমাদের মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন, মাদ্রাসার ছাত্র প্রতিনিয়ত খুন-গুম হলেও এ নিয়ে কারও মাথাব্যথা নেই। কারণ তাঁরা মুসলমান।”

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।