আইএসের সমর্থনে কাজ করার অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত নিলাশ গ্রেপ্তার

ঢাকা থেকে শাহরিয়ার শরীফ
2016.10.04
161004-BD-funeral-1000.jpg গত বছর ২ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার সান বার্নারদিনোয় মুসলিম জঙ্গিদের হামলায় নিহত ইভ্যেট ভালেস্কোর শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে এফবিআই সদস্যরা। ডিসেম্বর ১০, ২০১৫।
এএফপি

বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিকের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রে এক সেনা সদস্যকে হত্যা পরিকল্পনার অভিযোগ আনা হয়েছে। জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেটের (আইএস) পক্ষে তিনি ওই পরিকল্পনা করছিলেন বলে অভিযোগে বলা হয়েছে।

অভিযুক্ত বাংলাদেশির নাম নিলাশ মোহাম্মদ দাস (২৪)। ১৯৯৫ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রে তিনি বৈধভাবে বসবাস করছিলেন। গত শুক্রবার ভার্জিনিয়া এলাকায় এক বাক্স অস্ত্র কেনার সময় তাকে গ্রেপ্তার করে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা—এফবিআই।

যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিসের প্রকাশিত এক হলফনামা অনুযায়ী, নিলাশ গত বছর এক টুইটবার্তার মাধ্যমে আইএস জঙ্গিদের প্যারিস হামলা ও  যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার সান বার্নারদিনো হামলায় সমর্থন জানিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে নিলাশকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে মঙ্গলবার পর্যন্ত বাংলাদেশকে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি। তবে বিদেশি বার্তা সংস্থার বরাত দিয়ে দেশি সংবাদমাধ্যমগুলো এই খবর প্রচার ও প্রকাশ করেছে।

গতকাল সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ড অঙ্গরাজ্যের পুলিশ তার বিরুদ্ধে এ অভিযোগ আনে। যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ এক সংবাদ বিবৃতিতে এমন তথ্য জানিয়েছে। নিলাশের উপস্থিতিতে আদালতে প্রাথমিক শুনানির পর তাকে গোয়েন্দা হেফাজতে রাখা হয়েছে। বিচারক তিমথি জে. সুলিভান পরর্বতী শুনানরি জন্য আগামী ৬ অক্টোবর নতুন দিন ধার্য করেছেন।

নিলাশের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগ প্রমাণিত হলে ২০ বছরের কারাদন্ডে দন্ডিত হতে পারেন।

বিবৃতিতে সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল জন পি কারলিন বলেছেন, নিলাশ মোহাম্মদ দাস আইএসের হয়ে এক মার্কিন সেনাকে হত্যার পরিকল্পনা করছিলেন।

মেরিল্যান্ডের অ্যাটর্নি জেনারেল রড জে রসেনস্টেইন বলেছেন, “হামলার আগেই সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের ধরা আমাদের লক্ষ্য। বিচার মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে মার্কিনিরা এটাই প্রত্যাশা করে এবং আমরাও নাগরিকদের সেই প্রত্যাশা পূরণের চেষ্টা করি।”

মার্কিন কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরোর (এফবিআই) বল্টিমোর ডিভিশনের কর্মকর্তা গর্ডন বি জনসন বলেন, “তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে নিলাশ মোহাম্মদ দাস আইএসের হয়ে একজন মার্কিন সেনাকে হত্যার জন্য বদ্ধপরিকর ছিলেন।”

নিলাশের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, গত বছরের সেপ্টেম্বরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আইএসের প্রতি সমর্থন জানিয়ে এফবিআইএর নজরদারিতে আসেন নিলাশ। পুলিশের একজন তথ্য প্রদানকারীর সহযোগিতায় তাকে অনুসরণ করা হচ্ছিল।

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, গত বছরের অক্টোবরে নিলাশ সামাজিক মাধ্যমে এমন একজনের নাম বলেন যিনি মার্কিন সেনাবাহিনীতে রয়েছেন এবং মুসলমানদের হত্যা করতে উৎসাহ দিচ্ছেন। ওই ব্যক্তিকে যেন আগ্রহীরা আক্রমণ করতে পারে সেজন্য তার ব্যক্তিগত তথ্যও সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করেন নিলাশ।

এরপর গত জানুয়ারিতে একটি একে-৪৭ রাইফেলের ছবি নিজের টুইটার অ্যাকাউন্টে দিয়ে সাথে কুরআনের প্রসঙ্গ টেনে নিলাশ লিখেন, “এটা একটি বন্দুকের চেয়েও বেশি কিছু। এটা জান্নাতের টিকেট।”

এর তিন মাস পর এপ্রিলে প্রিন্স জর্জ কাউন্টিতে অস্ত্রের লাইসেন্স চান নিলাশ। তিনি সতীর্থদের বলতেন, তিনি একটি একে-৪৭ ও নাইন এমএম কিনতে চান। এজন্য তিনি নিয়মিত গুলি করার অনুশীলন করতেন এবং লাইসেন্স পাওয়ার জন্য আঙ্গুলের ছাপ দিয়েছিলেন। এসব ঘটনার পর তার ব্যাপারে তৎপর হয় এফবিআই।

এই ঘটনার এক মাস পর এফবিআইয়ের এক গুপ্তচরের সঙ্গে দেখা হয় নিলাশের। ওই গুপ্তচরকে তিনি বলেন, আইএসের সঙ্গে তার সম্পর্ক আছে এবং মার্কিন সেনাবাহিনীর এমন একজনকে হত্যা করতে চান যার ব্যক্তিগত তথ্য হ্যাক করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়েছে।

এফবিআইয়ের ওই গুপ্তচর বলেন, সেও আইএসের সাথে সম্পর্কিত এবং নিলাশ চাইলে দুটি আগ্নেয়াস্ত্র পেতে পারেন। এরপর ওই গুপ্তচর নিলাশকে এফবিআইর দুটি নিষ্ক্রিয় অস্ত্র দেয়। কিন্তু নিলাশ বিষয়টি জানতো না।

গত মাসে নিলাশ ও সেই গুপ্তচর ভার্জিনিয়ায় একটি অস্ত্রের দোকানে যায় অস্ত্র কিনতে। সেখান থেকে গোলাবারুদ কেনে। আর গুপ্তচর তাকে সেই সেনা সদস্যের তথ্য দেয় যাকে নিলাশ হত্যা করতে চায়। কিন্তু গুপ্তচরের দেওয়া ঠিকানা সঠিক ছিল না। নিলাশকে ধরতে এবং সেনা সদস্যকে বাঁচাতে ভুল তথ্য দিয়েছিলেন এফবিআইয়ের গুপ্তচর।

ইরাকের আইসিসের কাছ থেকে ৮০ হাজার ডলার পাবেন গুপ্তচরের এমন আশ্বাসের ভিত্তিতে তারা দুজনই প্রিন্স জর্জ কাউন্টির একজন মার্কিন সেনার ওপর হামলা করতে গত শুক্রবার রওনা দেন। গুলি ও বন্দুক নিয়ে ওই মার্কিন সেনার ভুল ঠিকানায় পৌঁছান তারা। এরপর সেখানে আগে থেকে ওঁৎ পেতে থাকা এফবিআই সদস্যরা নিলাশকে গ্রেপ্তার করে।

আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশ কিছুই জানে না

বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বেনারকে বলেন, “এই সংবাদ শুনে আমি অত্যন্ত দু:খিত। জঙ্গিবাদের সঙ্গে এই বাংলাদেশীর সম্পৃক্ততা যুক্তরাষ্ট্রসহ পৃথিবীর অন্যান্য দেশে বসবাস করা বাংলাদেশী নাগরিকদের ক্ষতি করবে”।

তিনি বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র সরকার তার বিষয়ে কোন তথ্য চাইলে বাংলাদেশ সব ধরনের সহায়তা করবে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র সরকারের পক্ষ থেকে এখনো কোনো ধরনের যোগাযোগ করা হয়নি”।

জানতে চাইলে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মিডিয়া ও গণাধ্যম শাখার পরিচালক মো. মাসুদুর রহমান বেনারকে বলেন, নিলাশের গ্রেপ্তার ও তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনার বিষয়ে পুলিকে এখনো কিছু জানানো হয়নি।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।