নিজামীর গায়েবানা জানাজা,রাজশাহী ও চট্টগ্রামে সহিংস জামায়াত-শিবির

ঢাকা থেকে শাহরিয়ার শরীফ
2016.05.11
Nizami-Funeral-Buried620.jpg চট্টগ্রাম কলেজ–সংলগ্ন প্যারেড মাঠে মতিউর রহমান নিজামীর স্মরণে গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। মে ১১, ২০১৬।
ফোকাস বাংলা

ঢাকায় শান্তিপূর্ণভাবে মিতউর রহমান নিজামীর গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হলেও রাজশাহী ও চট্টগ্রামে এই কর্মসূচীকে কেন্দ্র করে জামায়াত–শিবি​র সহিংস হয়ে ওঠে। সাম্প্রতিক সময়ে চাপের মুখে থাকা জামায়াত বেশকিছুদিন বিরতির পর প্রকাশ্যে মাঠে নামল।

বুধবার রাজশাহীতে পুলিশের ওপর হামলা করে জামায়াত–শিবির। চট্টগ্রামে জামায়াতের নেতা–কর্মীদের সঙ্গে ছাত্রলীগ ও পুলিশের মারামারি হয়েছে।

গত মঙ্গলবার মধ্যরাতে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াতের আমির নিজামীর ফাঁসি কার্যকর হয়। এরপর দলটি বুধবার গায়েবানা জানাজা ও বৃহস্পতিবার হরতাল কর্মসূচি ঘোষণা করে।

নিজামীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ায় পাকিস্তানের মনঃক্ষুণ্ন হয়েছে। দেশটি মনে করে, নিজামীর একমাত্র অপরাধ ছিল পাকিস্তানের সংবিধান ও আইন সমুন্নত রাখা। বুধবার দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা বলা হয়।

গায়েবানা জানাজা

বুধবার জোহরের নামাজের পর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।জামায়াতের এই কর্মসূচি উপলক্ষে বায়তুল মোকাররম মসজিদের আশপাশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্য মোতায়েন করা হয়।

আপত্তির মুখে পাবনায় দাফন

ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে মধ্যরাতে ফাঁসি কার্যকরের পর আনুষ্ঠানিকতা শেষে রাত দেড়টার দিকে লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্স নিজামীর গ্রামের বাড়ি সাঁথিয়ার মনমথপুরের উদ্দেশে রওনা হয়। সেখানে লাশ দাফন করতে সরকারি দলের কর্মীরা আপত্তি তোলেন।

অবরোধ তুলে নিতে তাঁদের অনুরোধ করে সাঁথিয়া থানা পুলিশ। এরপর মনমথপুর গ্রামের মাদ্রাসা মাঠে জানাজা শেষে নিজামীকে দাফন করা হয়।

“কুখ্যাত এই যুদ্ধাপরাধীর লাশ এখানে (পাবনা) দাফন করা হলে মাটি অপবিত্র হবে। এ জন্য আমরা তাঁকে অন্যত্র দাফনের দাবি জানিয়ে​ছিলাম,” টেলিফোনে বেনারকে জানান পাবনা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রুহুল আমিন।”

জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে পুলিশ ও ছাত্রলীগের সংঘর্ষ

গায়েবানা জানাজাকে কেন্দ্র করে বুধবার চট্টগ্রাম কলেজ–সংলগ্ন প্যারেড মাঠে জামায়াতের নেতা–কর্মীদের সঙ্গে ছাত্রলীগ ও পুলিশের ধাওয়া–পাল্টা ধাওয়া হয়েছে। এসময় ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা ও গাড়ি ভাংচুরের ঘটনা ঘটে। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বেশ কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়ে।

বেলা দেড়টায় প্যারেড মাঠে নিজামীর গায়েবানা জানাজার কর্মসূচি দেয় জামায়াত। ওই কর্মসূচি ঠেকানোর ঘোষণা দিয়ে চট্টগ্রাম কলেজ শাখা ছাত্রলীগ কলেজের ফটকে অবস্থান নেয়।

উত্তেজনার মধ্যে প্যারেড মাঠের পূর্বদিকে সিরাজউদ্দৌলা সড়কে বেলা দেড়টার দিকে গায়েবানা জানাজা শুরু করে জামায়াত। আর চট্টগ্রাম কলেজের মূল ফটকে অবস্থান নিয়ে ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীরা জামায়াতবিরোধী বক্তব্য দেন।

প্রথম দফা জানাজা শেষ হয়ে যাওয়ায় জামায়াতের আরও কয়েকশ কর্মী সিরাজউদ্দৌলা সড়ক সংযুক্ত কেয়ারি ইলসিয়াম ভবন সড়কে জানাজা পড়ার জন্য দাঁড়ায়। হঠাৎ তারা জানাজা ​ফেলে প্যারেড মাঠের উত্তর দিকের ফটক খুলে ককটেল ফাটিয়ে ও ইটপাটকেল ছুড়তে ছুড়তে চট্টগ্রাম কলেজ ক্যাম্পাসে ঢুকে পড়ে।

পুলিশ চট্টগ্রাম কলেজ-চকবাজার সড়কে গাড়ি চলাচল বন্ধ করে পাল্টা ফাঁকা গুলি ছুড়তে থাকে। এসময় জামায়াত-শিবির কর্মীরা পিছু হটে। তারা আবার জানাজার জন্য প্যারেড মাঠে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়য়। দ্বিতীয় দফা গায়েবানা জানাজাশেষে তারা প্যারেড মাঠের উত্তর ফটক দিয়ে চলে যায়।

“নিজামীর গায়েবানা জানাজা নিয়ে উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল। তবে পুলিশ সতর্ক থাকায় সবকিছু নিয়ন্ত্রণে ছিল। গায়েবানা জানাজার পর জামায়াতের কর্মীরা এলাকা ছাড়লে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়,” বেনারকে জানান চকবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজিজ আহমেদ।

রাজশাহীতে পুলিশের ওপর হামলা

রাজশাহীতে গায়েবানা জানাজা পড়ে ফেরার সময় জামায়াত-শিবিরের নেতা কর্মীরা বুধবার দুপুরে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। এ সময় পুলিশ পাল্টা গুলি ছুড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ অন্তত ১৫ জনকে আটক করে।

“বিনা উসকানিতে পুলিশের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করায় পুলিশ ফাঁকা গুলি করেছে। হামলাকারীদের ১৫ জনকে আটক করা হয়েছে,” সাংবাদিকদের জানান নগর পুলিশের সহকারী কমিশনার ইফতে খায়ের আলম।

নিজামীর জন্য পাকিস্তানের বিবৃতি

পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরের আগের ‘কথিত অপরাধে’ মতিউর রহমান নিজামীকে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে।

১৯৭৪ সালের ত্রিপক্ষীয় চুক্তির অংশ হিসেবে ক্ষমাশীলতার পদক্ষেপ হিসেবে বাংলাদেশ বিচারপ্রক্রিয়া এগিয়ে না নিতে রাজি হয়েছিল। চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশকে সেই অঙ্গীকার সমুন্নত রাখা উচিত বলে দেশটি মনে করে।পাকিস্তান আরও মনে করে, বাংলাদেশের যেসব জনগণ তাকে সংসদ প্রতিনিধি নির্বাচিত করেছিলেন, তাদের জন্যও এই ফাঁসি কার্যকর করাটা দুর্ভাগ্যজনক। পাকিস্তান নিজামীর পরিবার ও তার সমর্থকদের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছে।

হরতালসহ তিন দিনের কর্মসূচি

নিজামীর ফাঁসির দণ্ড কার্যকর হওয়ার প্রতিবাদে হরতালসহ তিন দিনের কর্মসূচি দিয়েছে দলটি। গত মঙ্গলবার গভীর রাতে এক বিবৃতিতে দলের ভারপ্রাপ্ত আমির মকবুল আহমাদ এ কর্মসূচির ঘোষণা দেয়।কর্মসূচি অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার ভোর পাঁচটা থেকে পরদিন ভোর পাঁচটা পর্যন্ত হরতাল ডাকা হয়েছে। এছাড়া শুক্রবার সারা দেশে ‘দোয়া দিবস’ পালন করবে দলটি।

জামায়াত নিষিদ্ধ করা ‘সময়ের ব্যাপার’

জামায়াতে ইসলামীকে রাজনীতিতে  নিষিদ্ধ করা ‘সময়ের ব্যাপার’ বলে মন্তব্য করেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ।  বুধবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এমন মন্তব্য করেন।

নিজামীসহ এ পর্যন্ত চারজনের ফাঁসি হলেও দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর কী হবে জানতে চাইলে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, যুদ্ধাপরাধের দায়ে জামায়াত নেতাদের বিচার  হচ্ছে। ওই রায়েই যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী সংগঠন হিসেবে জামায়াতের বিচারের কথা বলা হয়েছে। এটা এখন সময়ের ব্যাপার।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।