নারীদের আত্মরক্ষার প্রশিক্ষণ দিচ্ছে প্রীতিলতা ব্রিগেড
2016.05.06
''পড়াশোনা, ব্যক্তিগত বা পারিবারিক কাজে প্রতিদিনই বাইরে বের হতে হয় নারীদের। এটা এখন একটা মেয়ে বা নারীর জন্য কোনো জবাবদিহির বিষয় নয়। আত্মরক্ষার কিছু কৌশল জানা থাকলে আত্মবিশ্বাস বাড়ে। তা ছাড়া একবার এই কৌশল রপ্ত করতে পারলে প্রয়োজনের সময় কাজেও লাগতে পারে।” কথাগুলো রাজধানী ঢাকার সিদ্ধেশ্বরী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের সম্মান দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী লাভলী হকের। তিনি ‘প্রীতিলতা ব্রিগেডের একজন কর্মী হিসেবে আত্মরক্ষার কৌশল মার্শাল আর্ট প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন।
শুধু একজন লাভলীই নন, তাঁর মতো দেশের অনেক নারী এখন নিজেকে রক্ষার জন্য এসব প্রশিক্ষণ রপ্ত করছেন। দিন দিন বেড়ে চলা যৌন নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়তে এটাই সর্বোত্তম উপায় বলে মনে করেন তাঁরা।
সম্প্রতি কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের ছাত্রী ও নাট্যকর্মী সোহাগী জাহান তনু হত্যার বিচারের দাবিতে গড়ে ওঠা আন্দোলনের এক পর্যায়ে আত্মরক্ষার কৌশল রপ্ত করার পরিকল্পনা নেয় দেশের প্রগতিশীল বাম ছাত্র সংগঠন ছাত্র ইউনিয়ন। সেই পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই গত ৮ এপ্রিল শুক্রবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাসবিরোধী রাজু স্মারক ভাস্কর্য চত্বরে ‘তনুদের আত্মরক্ষা প্রশিক্ষণ’ নামে এ প্রশিক্ষণের শুরু।
বাংলাদেশ তায়কোয়ান্দো ফেডারেশনের সহযোগিতায় প্রীতিলতা ব্রিগেডের উদ্যোগে এই আত্মরক্ষা প্রশিক্ষণ শুরুর পর থেকে প্রতি শুক্রবার রাজধানীর রমনা পার্কে চলছে এই কার্যক্রম। লাভলী হক, কাজী রিতা, লাবণি মণ্ডলসহ রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও নারী সংগঠনের ২০-২৫ জন নারী প্রশিক্ষণে নিয়মিত অংশ নিচ্ছেন।
গত বছর পয়লা বৈশাখে বর্ষবরণের দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় সংঘটিত নারী লাঞ্ছনার প্রতিবাদে ‘পাল্টা আঘাত’ ব্যানারের কর্মসূচি থেকে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের শহীদ বিপ্লবী নারী প্রীতিলতার নামে গড়ে তোলা হয় ‘প্রীতিলতা ব্রিগেড’। যার নেতৃত্বে রয়েছেন বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি লাকী আক্তার।
আত্মরক্ষার কৌশল শেখার বিষয়ে জানতে চাইলে বেনারকে তিনি বলেন, “নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার বা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভরসায় বসে থাকার সুযোগ নেই। তাই আমরা নিজেরাই আত্মরক্ষার উদ্যোগ নিয়েছি।”
তিনি বলেন, “দেশে খুন, ধর্ষণ, যৌন নিপীড়নসহ নারীর প্রতি সহিংসতা দিন দিন বেড়ে চলেছে। তেমনি এসব ঘটনার বিচার না হওয়ার প্রবণতা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। অনেক সময় অপরাধীদের আড়াল করা হচ্ছে। ফলে সমাজের প্রতিটি স্তরেই নারীর নিরাপত্তাহীনতা তৈরি হয়েছে।”
“শুধু রাস্তাঘাটে নয়, শিক্ষাঙ্গন এমনকি রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বাহিনীর সংরক্ষিত এলাকায়ও নারীরা আজ অনিরাপদ। দেশের একজন নাগরিক হিসেবে আত্মমর্যাদা, সামাজিক মর্যাদা নিয়ে বাঁচার সম্পূর্ণ অধিকার যেকোনো নারীর আছে। কিন্তু রাষ্ট্র বা সমাজ তা নিশ্চিত করছে না। তাই নিজের আত্মরক্ষার জন্য সামান্য হলেও এ কৌশল কাজে লাগবে,” জানান লাকী।
লাকী আক্তার আরও জানান, তাদের এই আত্মরক্ষার প্রশিক্ষণে যুক্ত হতে সংগঠনের বাইরে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রী ও অভিভাবকেরা যোগাযোগ করছেন। বেশ কয়েকটি নারী সংগঠনের কর্মীরা এরই মধ্যে যুক্ত হয়েছেন এ প্রশিক্ষণে। ছোট পরিসরে হলেও তনুদের আত্মরক্ষা প্রশিক্ষণের ধারাবাহিকতা রক্ষায় আপাতত বেশি জোর দেওয়া হচ্ছে বলেও তিনি জানান।
প্রীতিলতা ব্রিগেডের ‘তনুদের আত্মরক্ষা প্রশিক্ষণ’-এ প্রথম দিন প্রশিক্ষক হিসেবে ছিলেন তায়কোয়ান্দো ব্ল্যাক বেল্ট জেসমিন আক্তার রুমা। বেনারকে তিনি জানালেন, তনু হত্যার বিচারের দাবিতে গড়ে ওঠা আন্দোলনের এক পর্যায়ে প্রীতিলতা ব্রিগেডের এ উদ্যোগ খুবই ইতিবাচক। প্রথম দিনের প্রশিক্ষণের খবর বিভিন্ন গণ মাধ্যমে প্রকাশ বা প্রচারের পর বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। এমনকি অনেক অভিভাবক ও নারীরা এ প্রশিক্ষণ নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
প্রশিক্ষণের নিয়মিত প্রশিক্ষক ও কারাতে ব্ল্যাক বেল্ট আতিক মোর্শেদ বেনারকে বলেন, “একটি ইস্যুকে কেন্দ্র করে আত্মরক্ষার এ প্রশিক্ষণ শুরু হলেও মূলত এ সবই হলো শারীরিক ব্যায়াম। নিয়মিত চর্চার মধ্যে থাকলে এ দিয়ে আত্মরক্ষাও সম্ভব।”
তিনি বলেন, “প্রীতিলতা ব্রিগেড ছাড়াও রাজধানী উত্তরার ‘দিয়াবাড়ি মডেল হাইস্কুল’, খিলগাঁওয়ের ‘শহীদ বাবুল একাডেমিসহ বিভিন্ন নারী সংগঠন, ক্লাব এ ধরনের প্রশিক্ষণ নিতে শুরু করেছে। স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা ছাড়াও বিভিন্ন বয়সের নারীরাও এসব প্রশিক্ষণে অংশ নিচ্ছে।”