প্রবীর সিকদারের আকুতি মত প্রকাশের স্বাধীনতা বিতর্ক উস্কে দিল

ঢাকা থেকে জেসমিন পাপড়ি
2016.04.22
Probeer-Shikdar620.jpg গত বছর তথ্যপ্রযুক্তি আইনের মামলায় জামিন পাওয়ার পর প্রবীর সিকদার। ২০ আগস্ট ২০১৫।
অনলাইন

মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে দেশ–বিদেশে নানা বিতর্ক চলছে। এর মধ্যে মফস্বলের একজন পঙ্গু সাংবাদিক প্রবীর সিকদারের ফেসবুকে দেওয়া বক্তব্য ওই বিতর্ককে উস্কে দিয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে হয়রানি থেকে মুক্তি চেয়ে আবেদন জানিয়েছেন প্রবীর। এর আগে তথ্যপ্রযুক্তি আইনে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন তিনি।

গত বছর ১৬ আগস্ট প্রবীরকে হয়রানিমুলক যে ধারায় গ্রেপ্তার করা হয়েছিল, সুশীল ও সাংবাদিক সমাজের দাবির মুখে সে আইনটিও ইতিমধ্যে সংস্কার করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু জামিনে থাকলেও সেই মামলায় এখনো নানামুখি হয়রানি মোকাবিলা করছেন ওই সাংবাদিক।

সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে বড় রকমের প্রশ্ন উঠেছে। যদিও সরকারের মতে, বাংলাদেশে মত প্রকাশের স্বাধীনতা যেকোনো সময়ের চেয়ে এখন অধিক সুরক্ষিত।

“স্মরণকালের সবচেয়ে বেশি স্বাধীনতা ভোগ করছে দেশের গণমাধ্যম। সংবাদপত্রগুলো যা ইচ্ছা তাই লিখতে পারছে,” সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। তথ্যমন্ত্রীর এই দাবির পক্ষে–বিপক্ষে যুক্তি রয়েছে।

তবে প্রবীর শিকদারের বিষয়টি সরকার সমর্থক ব্যক্তিবর্গের মধ্যে অস্বস্তি তৈরী করেছে। তিনি বর্তমানে একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

দুর্বৃত্তদের আঘাতে পা হারানো এই সাংবাদিক শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান, যার প্রতি দেশবাসীর একধরনের সহানুভূতি রয়েছে। তিনি ‘আমার বোন শেখ হাসিনা’ নামে প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে একটি বইও লিখেছেন।

প্রবীর সিকদারে যে আকুতি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ২২ এপ্রিল প্রবীর লিখেছেন, “মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা, আপনি অবিলম্বে আমাকে বাঁচান।”

“আমি আমার মামলা নিয়ে কোনও ধরণের দয়া ভিক্ষা চাইছি না। ফরিদপুরে দায়ের করা ৫৭ ধারার মামলা ও তার চার্জশিট নিয়ে আমি মোটেই বিচলিত নই। আইন ও বিচার ব্যবস্থা স্বাধীনভাবে কাজ করলে আমি নিশ্চিত, আইনি লড়াই করেই বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সোনার বাংলায় আমি টিকে থাকবো, থাকবোই। আমাকে যেন আর কেউ মিথ্যা মামলায় হয়রানি করতে না পারে, কিংবা ভুয়া গোয়েন্দা পরিচয়ে জিজ্ঞাসাবাদের নামে তুলে নিয়ে আমাকে গায়েব করে ফেলতে না পারে, সেটা আপনি নিশ্চিত করবেন প্লিজ।”

তিনি লেখেন, “আমার এই শঙ্কার কারণ, ফরিদপুরে আমার পক্ষে আইনী লড়াই করছেন মাত্র একজন আইনজীবী। গত তিন দিন ধরে আমার মামলার চার্জশিটের নকল তুলতে পারছেন না ওই আইনজীবী। এই কষ্টের কথা আমি আপনি ছাড়া আর কাকেই বা বলবো মাননীয় প্রধানমন্ত্রী!”

এর আগে ২০১৫ সালের ১৬ আগস্ট প্রবীর সিকদারের বিরুদ্ধে যে মামলা করা হয়, সেটিও ফেসবুকে দেওয়া স্ট্যাটাসকে কেন্দ্র করে। তিনি প্রাণনাশের শঙ্কা থেকে কয়েকজনকে দায়ী করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন, যার এক নম্বরে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেনের নাম উল্লেখ ছিল।

তথ্যপ্রযুক্তি আইনে মামলা দায়েরের পরপরই সে রাতে প্রবীরকে ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করে ওই রাতেই ফরিদপুর নেওয়া হয়। তাকে তিন দিনের রিমান্ডেও নেওয়া হয়। এরপর ১৯ আগস্ট জামিনে মুক্তি পান প্রবীর সিকদার।

ওই মামলায় গত মঙ্গলবার ফরিদপুরের আদালতে তার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র উপস্থাপন করা হয়। বিচারক মামলাটি ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের সাইবার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করার নির্দেশ দেন।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক রাজু আহমেদ বেনারকে বলেন, “তথ্য প্রযুক্তি আইনের কয়েকটি ধারা শুরু থেকেই বিতর্কিত। ওই আইনে করা মামলায় হয়রানি বন্ধ করা উচিত।”

মত প্রকাশের স্বাধীনতা প্রশ্নবিদ্ধ

দেশে–বিদেশে মত প্রকাশের স্বাধীনতা প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে বারবার। সর্বশেষ গত বুধবার যুক্তরাজ্য বাংলাদেশে মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।

এর আগে গত ১৪ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের প্রকাশ করা ২০১৫ সালের মানবাধিকার বিষয়ক রিপোর্টে মানবাধিকারের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সমস্যাগুলোর মধ্যে গণমাধ্যম ও মত প্রকাশের ক্ষেত্রে কিছু বিধিনিষেধ অন্যতম বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

এতে বলা হয়, সরকারের সমালোচনা করা গণমাধ্যমগুলো সরকারের নানা চাপে থাকছে। এমনকি বেসরকারি কয়েকটি টেলিভিশনকে বেশ কিছু ক্ষেত্রে বিরোধী দলের খবর প্রকাশ না করতেও চাপ দিয়েছে।

যদিও ওই প্রতিবেদনটি তথ্যনির্ভর নয় বলে সংবাদ সম্মেলন ডেকে মত দিয়েছেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।