ঢাকার রামকৃষ্ণ মিশনের ধর্মগুরুকে হত্যার হুমকিতে ভারত উদ্বিগ্ন
2016.06.20

গতবুধবার ঢাকার রামকৃষ্ণ মিশনের এক ধর্মগুরুকে হত্যার হুমকি সম্বলিত আইএস’এর নামে একটি চিঠি প্রেরণ করা হয়। বিষয়টি ভারতের বর্তমান মোদি সরকার ও তাঁর নেতৃত্বাধীন হিন্দু জাতীয়তাবাদী দল 'বিজেপি' অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে নিয়েছেন।
ঢাকাস্থ কলকাতা ভিত্তিক রামকৃষ্ণমিশনের এক হিন্দু পুরোহিতকে চিঠির মাধ্যমে হত্যার হুমকি প্রেরণের পর ভারত কূটনৈতিক পদক্ষেপ নিয়েছে। প্রধানমন্ত্রি নরেন্দ্রমোদির সাথে রামকৃষ্ণমিশনের ব্যক্তিগত যোগাযোগ থাকায় বিষয়টি নিয়ে মোদি সরকার অত্যন্ত উদ্বিগ্ন ।
মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাদেশে গত ২০১৩-র ফেব্রুয়ারি থেকে ধর্মনিরপেক্ষ ব্লগার,লেখক,ভিন্ন মতাদর্শের মানুষ এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ ইসলামিক উগ্রপন্থিদের হাতে খুন হয়ে আসছেন এবং প্রতিনিয়ত হত্যার হুমকি নিয়ে আতঙ্কিত জীবনযাপন করছেন। সম্প্রতি সংখ্যালঘু হিন্দুসম্প্রদায়ের একাধিক মানুষ ইসলামিক জঙ্গিদের হাতে নিহত হয়েছেন এবং হত্যা কাণ্ডের পর কথিত জঙ্গিগোষ্ঠী আইএস’এর পক্ষ থেকে কতিপয় হত্যার দায়ও স্বীকার করা হয়েছে।
যদিও বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে বরাবরই বলা হয়েছে বাংলাদেশে আইএসের কোন অস্তিত্ব নেই। দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃস্টির লক্ষ্যে দেশীয় জঙ্গিরাই আইএসের নামে এসব হত্যাকাণ্ড ঘটাচ্ছে।
বিশেষজ্ঞ মতামত
জয়ীতা ভট্টাচার্জী, নয়া দিল্লি ভিত্তিক ‘অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের বাংলাদেশ বিষয়ক বিশেষজ্ঞ বেনার নিউজকে বলেন, “বিষয়টি নিয়ে মোদি সরকারকে অত্যন্ত সতর্কতার সাথে ডীল করতে হবে, যাতে করে ভারতের হস্তক্ষেপ বাংলাদেশের হিন্দুস্প্রদায়কে সুরক্ষা দিতে ভারতের কাছে সাহায্য চাইতে মৌলবাদীদের আরেক দফা ইন্ধন না যোগায়”।
ভট্টাচার্জী আরও বলেন,"যদিও মোদি নিজেই রামকৃষ্ণমিশনের একজন ভক্ত, তথাপি এ ব্যাপারে ভারত সরকারের হস্থক্ষেপ করার কারন এটি ভারত কর্তৃক একটি প্রতিষ্ঠান"।
সঞ্জয় হাজারিকা, উত্তর-পূর্ব ভারতের একজন বিশিষ্ট বিশেষজ্ঞ জয়ীতা ভট্টাচার্জীর সাথে একমত পোষণ করে বলেন, “বিষয়টির কিভাবে মীমাংসা করা যায় তা নিয়ে ভারত সরকারকে অত্যন্ত সতর্কতার সাথে পদক্ষেপ অবলম্বন করতে হবে। এটা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় মেনে নিয়েই এব্যাপেরে এগুতে হবে”।
উল্লেক্ষ্য, গতবুধ বার সন্ধ্যায় ঢাকার রামকৃষ্ণমিশনের প্রধান ধর্মগুরুকে চিঠি মারফত প্রাণনাশের হুমকি প্রদান করা হয়। চিঠিতে বলা হয়, “বাংলাদেশ একটি ইসলামি রাষ্ট্র,এখানে তোদের ধর্ম প্রচার করতে পারবি না। ধর্মপ্রচার করলে ২০ থেকে ৩০ তারিখের মধ্যে তোকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হবে”। ওই চিঠিতে 'এবি সিদ্দিক' নামে এক ব্যক্তির স্বাক্ষর রয়েছে এবং চিঠির উপরের অংশে ‘ইসলামিক স্টেট অব বাংলাদেশ’ উল্লেখ রয়েছে।
এ বিষয়ে ভারত সরকারের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকরতা জানান, “মোদি নিজে রামকৃষ্ণ মিশনের একজন ভক্ত হওয়ায়, ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে নিয়ে মিশনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে”।
বিষয়টি ভারত ও বাংলাদেশের গোয়েন্দা কর্মকর্তারাও খতিয়ে দেখছেন।
এদিকে ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, আইএস’ কর্তৃক প্রেরিত চিঠিতে রামকৃষ্ণমিশনের এক ধর্মগুরুকে হত্যার হুমকির ঘটনায় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রি মমতা ব্যানার্জিও উদ্বিগ্ন।
ভারতীয় হাইকমিশনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বিকাশ স্বরূপ জানান, “বিষয়টি নিয়ে তাঁরা ‘বাংলাদেশ পুলিশ ও বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাথে যোগাযোগ করেছেন এবং বাংলাদেশ সরকার এ ব্যাপারে ‘পূর্ণসহযোগিতা ও সুরক্ষার’ প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন”। তিনি আরও জানান, এ ব্যাপারে তাঁরা ঢাকার রামকৃষ্ণ মিশনের সাথেও সরাসরি যোগাযোগ রাখছেন।
মিশনের নিরাপত্তা জোরদার
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের একজন মুখপাত্র মাসুদুর রহমান বেনার নিউজকে বলেছেন, “পুলিশ এবং অন্যান্য নিরাপত্তা সংস্থা রামকৃষ্ণ মিশনের নিরাপত্তা বিষয়ে প্রয়োজনীয় সব রকম ব্যাবস্থা নিয়েছে”। তিনি আরও বলেন,"আমরা হুমকির বিষয়টিকে গুরুত্ব সহকারে দেখছি এবং ইতিমধ্যে রামকৃষ্ণ মিশনের চতুরপার্শের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে”।
প্রতিবেদনটি তৈরিতে ঢাকা থেকে কামরান রেজা চৌধুরি বিশেষ অবদান রেখেছেন।