একাধিক হত্যায় একই আসামির সম্পৃক্ততা

ঢাকা থেকে শাহরিয়ার শরীফ
2016.07.11
Same-Killers1000.jpg জাপানি নাগরিক কুনিও হোশিকে রংপুর শহরের মুন্সিপাড়া কবরস্থানে দাফন করা হয়, সেখানে তার কবরের সামনে উৎসুক মানুষ। ১১ অক্টোবর, ২০১৫।
বেনার নিউজ

দেশের উত্তরাঞ্চলীয় জেলা রংপুর ও পঞ্চগড়ে চাঞ্চল্যকর তিনটি হত্যার অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে। গত কয়েকদিনের ব্যবধানে জাপানি নাগরিক কুনিও হোশি, মাজারের খাদেম রহমত আলী এবং মঠের অধ্যক্ষ যজ্ঞেশ্বর রায় হত্যার অভিযোগপত্র দেওয়া হয়।

অভিযোগপত্রগুলো তদন্ত করে দেখা যায়, আসামিদের কয়েকজন প্রত্যেকটি খুনের সঙ্গে জড়িত ছিল।

রংপুরের কাউনিয়ায় মাজারের খাদেম হত্যা মামলায় অভিযোগপত্রভুক্ত আসামি ১৪ জনের মধ্যে সাতজনই জাপানি নাগরিক কুনিও হোশি হত্যা মামলার আসামি।

এরা হচ্ছে; রংপুরের পীরগাছার মাসুদ রানা (৩৩), ইসাহাক আলী (৩৪), লিটন মিয়া (৩২), আবু সাঈদ (২৮), কুড়িগ্রামের রাজারহাটের সাদ্দাম হোসেন ওরফে রাহুল (২১), পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জের নজরুল ইসলাম ওরফে বাইক নজরুল ওরফে হাসান (২৬) ও গাইবান্ধার সাঘাটার সাখাওয়াত হোসেন (৩০)।

এই সাতজনের মধ্যে দুই আসামি কুড়িগ্রামের রাজারহাটের সাদ্দাম হোসেন ওরফে রাহুল (২১) ও পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জের নজরুল ইসলাম ওরফে বাইক নজরুল ওরফে হাসান (২৬) পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্চে মঠের অধ্যক্ষ যজ্ঞেশ্বর রায় হত্যার অভিযোগপত্রভুক্ত আসামি। এই দুই আসামি আবার তিন মামলার সঙ্গেই জড়িত।

খাদেম হত্যা মামলার অভিযোগপত্রভুক্ত ১৪ আসামির মধ্যে চারজন—সাদ্দাম হোসেন, নজরুল ইসলাম, রাজিবুল ইসলাম ও জাহাঙ্গীর হোসেন মঠের অধ্যক্ষ যজ্ঞেশ্বর রায় হত্যা মামলারও আসামি।

“একই আসামীরা এসব হত্যকাণ্ড ঘটিয়েছে। এদের প্রায় সবাই একই জঙ্গি সংগঠনের সদস্য,” বেনারকে জানান রংপুর আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) আব্দুল মালেক।

কুনিও হোশি হত্যায় ৮ আসামি

জাপানি নাগরিক কুনিও হোশি হত্যার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের ( জেএমবি) আট সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দিয়েছে পুলিশ। অভিযোগপত্রে চারজন পলাতক ও চারজনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

গত রোববার রংপুরের দবীগঞ্জ বিচারিক হাকিম আদালত অভিযোগপত্রটি গ্রহণ করে বিচারের জন্য জেলা ও দায়রা জজ আদালতে পাঠান। ২০১৫ সালের ৩ অক্টোবর রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার আলুটারি গ্রামে দুর্বৃত্তরা জাপানি নাগরিক কুনিওকে গুলি করে হত্যা করে।

“মূল পরিকল্পনাকারী ও হত্যায় জড়িত আটজনের মধ্যে চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে তিনজন আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন,” বেনারকে জানান মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও কাউনিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল কাদের জিলানী।

জেএমবির সদস্য ইছাহাক আলী ইতিমধ্যে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। জবানবন্দিতে তিনি বলেন, মাসুদ ও লিটনকে নিয়ে তিনি একটি মোটরসাইকেল করে ঘটনাস্থল আলুটারি গ্রামে যান। কুনিওকে গুলি করে মাসুদ।

আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়ে জাপানি নাগরিক হত্যার কথা অন্য দুজন—মাসুদ ও লিটন স্বীকার করেছে।

আট আসামির মধ্যে গ্রেপ্তার চারজন হলেন জামায়াতুল মুজাহেদীন অব বাংলাদেশের (জেএমবি) সদস্য রংপুরের পীরগাছা উপজেলার টাঙ্গাইলপাড়া গ্রামের বাসিন্দা ও পীরগাছা-কাউনিয়া দুই উপজেলার জেএমবির আঞ্চলিক কমান্ডার মাসুদ রানা (৩৩), রংপুরের পীরগাছা এলাকার জঙ্গি সদস্য ইছাহাক আলী (৩৪) ও লিটন মিয়া (৩২), বগুড়ার গাবতলী এলাকার আবু সাঈদ (২৮)।

পলাতক চার আসামি হল, কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার সাদ্দাম হোসেন (৩২), একই এলাকার আহসানউল্লাহ আনসারি (৩১), পঞ্চগড় দেবীগঞ্জের নজরুল ইসলাম (৩২) ও গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার সাখাওয়াত হোসেন (৩০)।

কুনিওর ব্যবসায়িক সহযোগী হুমায়ুন কবির ওরফে হীরা, রংপুর মহানগর বিএনপির সদস্য রাশেদ-উন-নবী খান ওরফে বিপ্লব, রংপুর মহানগর যুবদলের সদস্য রাজীব হাসান ওরফে মেরিল সুমন, রংপুর শহরের জুম্মাপাড়ার নওশাদ হোসেন ওরফে ব্লাক রুবেল ও শালবন মিস্ত্রিপাড়ার কাজল চন্দ্র বর্মণ ওরফে ভরসা কাজল সন্দেহভাজন গ্রেপ্তার হলেও তাদের বিরুদ্ধে প্রাথমিকভাবে জড়িত থাকার কোনো তথ্য-প্রমাণ মেলেনি। তবে তারা এখন কারাগারেই আছে।

মাজারের খাদেম হত্যা

কুনিকে হত্যাকারিদের কয়েকজন মাজারের খাদেম রহমত আলীকেও হত্যা করে। এই দুটি হত্যাকাণ্ড রংপুরের কাউনিয়া উপজেলায় সংঘটিত হয়েছে।

“রংপুরে খাদেম রহমত আলীকে হত্যার ঘটনায় ১৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে সাতজন রংপুরে জাপানি নাগরিক কুনিও হোশি হত্যা মামলার অভিযোগপত্রভুক্ত আসামি,” বেনারকে জানান রহমত আলী হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও কাউনিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মামুন অর রশিদ।

এ মাসের ৩ তারিখ জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিমের আদালতে খাদেম হত্যা মামলায় অভিযোগপত্র দেওয়া হয়।

অভিযোগপত্রভুক্ত আসামিরা হলেন রংপুরের পীরগাছার মাসুদ রানা (৩৩), ইসাহাক আলী (৩৪), লিটন মিয়া (৩২) ও আবু সাঈদ (২৮), কুড়িগ্রামের রাজারহাটের সাদ্দাম হাসেন ওরফে রাহুল (২১), পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জের নজরুল ইসলাম ওরফে বাইক নজরুল ওরফে হাসান (২৬), গাইবান্ধার সাঘাটার সাখাওয়াত হোসেন (৩০), দিনাজপুরের বিরামপুরের সারওয়ার হোসেন ওরফে সাবু ওরফে মিজান (৩৩), গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের সাদাত হোসেন ওরফে রতন মিয়া (২৩), এই একই এলাকার তৌফিকুল ইসলাম ওরফে সবুজ (৩৫), রংপুরের পীরগাছার চান্দু মিয়া (২০), বগুড়ার শাহজাহানপুরের রাজিবুল ইসলাম ওরফে বাদল ওরফে বাঁধান (২৫), দিনাজপুরের বিরামপুরের বাবুল আক্তার ওরফে বাবুল মাস্টার (৩৫), গাইবান্ধার সাঘাটার জাহাঙ্গীর হোসেন ওরফে রাজীব ওরফে আন্ধি (২৬)। এদের মধ্যে প্রথম সাতজন রংপুরে কুনিও হোশি হত্যা মামলার অভিযোগপত্রভুক্ত আসামি।

মঠের অধ্যক্ষকে হত্যা

পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে মঠের অধ্যক্ষ যজ্ঞেশ্বর রায় হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও দেবীগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আইয়ুব আলী জানান, তদন্তে ১০ জনের জড়িত থাকার ঘটনাটি বেরিয়ে আসে। সে অনুযায়ী অভিযোগপত্র দেওয়া হয়।

গত ফেব্রুয়ারি মাসে রংপুর পুলিশ রেঞ্জের সাবেক ডিআইজি হুমায়ুন কবীরের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এ তিন হত্যাকাণ্ড প্রসঙ্গে জানানো হয়, পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে মঠপ্রধানকে হত্যার পর যে পিস্তল উদ্ধার হয়েছে সেই একই পিস্তল দিয়ে কুনিওকে হত্যা করা হয়েছে। কুনিওকে যারা হত্যা করেছেন তারাই মাজারের খাদেমক হত্যায় জড়িত।




মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।