জঙ্গিবাদে অর্থায়ন করায় সিঙ্গাপুরে ৬ বাংলাদেশির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন

ঢাকা থেকে জেসমিন পাপড়ি
2016.05.27
160503-SG-Bangladeshis-1000.jpg সিঙ্গাপুরে আটক আট সন্দেহভাজন বাংলাদেশি মুসলিম জঙ্গির মধ্যে ছয় জনের বিরুদ্ধে জঙ্গি অর্থায়নের অভিযোগ গঠন করেছে সিঙ্গাপুর পুলিশ।ছবিতে উপরে বা দিক থেকে প্রথম শরিফুল ইসলাম (২৭)এবং ছবিতে নিচে বা দিক থেকে দ্বিতীয় সোহাগ ইব্রাহীম (২৭) ছাড়া অভিযুক্ত বাকি ছয়জন হলেন; মিজানুর রহমান (৩১), রুবেল মিয়া (২৬), হাজি নুরুল ইসলাম সওদাগর ওরফে মো. জাবেদ কায়সার (৩০), ইসমাইল হাওলাদার ওরফে সোহেল হাওলাদার (২৯), দৌলত জামান (৩৪) ও লিয়াকত আলী মামুন (২৯)।
সিঙ্গাপুর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

সিঙ্গাপুরে জঙ্গি সন্দেহে আটক হওয়া আট বাংলাদেশির মধ্যে ছয়জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেছে দেশটির আদালত। তাদের বিরুদ্ধে জঙ্গিবাদে অর্থায়নের অভিযোগ আনা হয়েছে।এর ফলে এই প্রথমবারের মতো কোনো বাংলাদেশি সিঙ্গাপুরের সন্ত্রাসবিরোধী আইনে বিচারের মুখোমুখি হতে যাচ্ছেন। শুক্রবার তাদের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ গঠন করা হয় বলে জানিয়েছে সিঙ্গাপুর পুলিশ।

এদিকে সিঙ্গাপুর ফেরত পাঁচ বাংলাদেশির বিরুদ্ধে জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের (এবিটি) সঙ্গে সম্পৃক্ততার প্রমাণ পেয়েছে পুলিশের গোয়েন্দা ও অপরাধ তথ্য বিভাগ (ডিবি)।সিঙ্গাপুরে কর্মরত অবস্থায় সংগঠন পরিচালনার জন্য তারা গোপনে অর্থ সংগ্রহ, জঙ্গি সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কার্যক্রম ও কর্মী সংগ্রহের কাজ করছিল বলে জানিয়েছে পুলিশ।

সিঙ্গাপুরে অভিযুক্ত যাঁরা

সিঙ্গাপুরের আদালতে অভিযুক্ত ছয় বাংলাদেশি; মিজানুর রহমান (৩১); যাকে দলটির নেতা বলে মনে করছে স্থানীয় পুলিশ। এ ছাড়া অভিযুক্তরা হলেন; লিয়াকত আলী মামুন (২৯), রুবেল মিয়া (২৬), দৌলতুজ্জামান (৩৪), মো. জাবেদ কায়সার হাজি নুরুল ইসলাম সওদাগর (৩০) ও ইসমাইল হাওলাদার সোহেল (২৯)।তবে রুবেল ও জাবেদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস বিরোধী আইনের অন্য একটি ধারায় অভিযোগ আনা হবে বলে সিঙ্গাপুর পুলিশের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।

সিঙ্গাপুর পুলিশের বিবৃতিতে আরও বলা হয়, “সন্ত্রাসবাদে অর্থায়নসহ সন্ত্রাসবাদ সংক্রান্ত যেকোনো কার্যক্রম দেশটিতে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হয়।”

গত মাসে জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে সিঙ্গাপুরে কর্মরত ১৩ জন বাংলাদেশি শ্রমিককে আটক করে সিঙ্গাপুর পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাদের মধ্যে পাঁচজনকে দেশে ফেরত পাঠানো হয়, ফেরার পর তারাও দেশের পুলিশের কাছে আটক হয়েছে।আর সিঙ্গাপুরে আটক থাকা আটজনের মধ্যে ছয়জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হলেও বাকিদের দুইজনের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তা জানা যায়নি।

এই শ্রমিকেরা দেশে ফিরে গুপ্তহত্যাসহ সন্ত্রাসী হামলার পরিকল্পনা করছিল বলে গত ৩ মে এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায় সিঙ্গাপুরের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। দেশটির অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা আইনে তাদের আটক করা হয় বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়।

সিঙ্গাপুরের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দলটির নেতা ও  নির্মাণশ্রমিক মিজানুর রহমান সিঙ্গাপুরে ইসলামিক স্টেট ইন বাংলাদেশ (আইএসবি) নামে একটি গোপন সংগঠন গঠন করে বাকি সাতজনকে দলে অন্তর্ভুক্ত করে। যাদের সবাই নির্মাণশিল্পের ওয়ার্ক পারমিটধারী শ্রমিক।

আটকৃতদের কাছ থেকে বাংলাদেশের কিছু সরকারি ও সামরিক কর্মকর্তার নামের তালিকা পাওয়া যায়, যাদেরকে আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু হিসেবে ঠিক করে তারা। এ সময় অস্ত্র ব্যবহার ও বোমা তৈরির পদ্ধতিসংক্রান্ত দলিলপত্র এবং উগ্রপন্থী কিছু বইপত্রও পাওয়া যায়।

সিঙ্গাপুর পুলিশ জানায়, আটককৃতরা সিরিয়া ও ইরাকে সক্রিয় আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আইএসে যোগ দিতে আগ্রহী। কিন্তু সেখানে যাওয়া কঠিন বলে বাংলাদেশে ফিরে গিয়ে সহিংস উপায়ে সরকারের পতন ঘটিয়ে একটি ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বাংলাদেশকে আইএসের স্বঘোষিত খিলাফতের অধীনে নেওয়ার চেষ্টা করছিল।

আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সঙ্গে সম্পৃক্ততা

সিঙ্গাপুর থেকে জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে ফেরত পাঠানো পাঁচ বাংলাদেশিকে গ্রেপ্তারের পর তাঁদের রিমান্ডে নেয় ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ও ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটি) ইউনিট। জিজ্ঞাসাবাদে তারা এবিটি’র সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেছে বলে পুলিশ জানায়।আটককৃত ওই পাঁচজন হলেন; মো. মিজানুর রহমান ওরফে গালিব হাসান (৩৮), মো. রাহা মিয়া পাইলট (২৯), মো. আলমগীর হোসেন (৩১), মো. তানজিমুল ইসলাম (২৪) ও মো. মাসুদ রানা ওরফে সন্টু খান (৩১)।

এ বিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা ও অপরাধ তথ্য বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি, দক্ষিণ) মাশরুকুর রহমান খালেদ বেনারকে বলেন, “জিজ্ঞাসাবাদে আটকৃতদের সঙ্গে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সঙ্গে সম্পৃক্ততার প্রমাণ মিলেছে। সিঙ্গাপুর যাওয়ার আগে তাদের জঙ্গি সম্পৃক্ততার প্রমাণ মেলেনি। আমরা ধারণা করছি, সিঙ্গাপুরে যাওয়ার পর তারা এ ধরনের কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে।”

সন্ত্রাস দমনে কঠোর বাংলাদেশ-সিঙ্গাপুর

বাংলাদেশ বলছে, সন্ত্রাস দমনে সিঙ্গাপুরের মতোই কঠোর অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। তাই দুই দেশই এ বিষয়ে একসঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে।

সিঙ্গাপুরে অভিযুক্ত জঙ্গিদের বিষয়ে দেশটিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মাহবুব উজ জামান বেনারকে বলেন, “বিষয়টি সিঙ্গাপুরের আদালতে বিচারাধীন। তাই নজর রাখা ছাড়া আর কিছুই করার নেই আমাদের। তবে দুই দেশই জঙ্গিবাদ দমনে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি অনুসরণ করে।”

প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বেনারের কুয়ালালামপুর প্রতিনিধি হাতা ওয়াহারি

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।