বিএনপি নেতাসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে সিজার তাভেল্লা হত্যা মামলার অভিযোগপত্র

ঢাকা থেকে শাহরিয়ার শরীফ
2016.06.28
160628-BD-tavella-arrests-620.jpg এএফপি
গতবছর ২৮ সেপ্টেম্বর ঢাকার গুলশানে সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হওয়া ইটালিয় নাগরিক সিজার তাভেলা হত্যাকাণ্ডে জড়িত চার সন্দেহভাজন। ২৬ অক্টবর, ২০১৫।

ইতালির নাগরিক ও ত্রাণকর্মী সিজার তাভেল্লা হত্যা মামলায় ঢাকা মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও সাবেক ওয়ার্ড কমিশনার এম এ কাইয়ুমসহ সাতজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে। এঁদের মধ্যে কাইয়ুম পলাতক আছেন, সোহেল নিখোঁজ রয়েছেন দীর্ঘদিন ধরে। বাকি পাঁচ আসামি জেলে আছে।

বিরোধী দল বিএনপি দাবি করেছে, দলের নেতাদের জড়িয়ে দেওয়া এই অভিযোগপত্র রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত।

গত বছরের ২৮ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় গুলশান ২ নম্বরের ৯০ নম্বর সড়কের ফুটপাতে তাভেল্লাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এরপর ইসলামিক স্টেট (আইএস) দায় স্বীকার করে বিবৃতি দেয় বলে যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক এক ওয়েবসাইটে দাবি করা হয়।

বিদেশি এই নাগ্রিকের হত্যাকাণ্ড দেশে–বিদেশে ব্যাপক সমালোচনা সৃষ্টি করে। অবশ্য গোয়েন্দা পুলিশের দাবি, দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে বিএনপি নেতা কাইয়ুমের পরিকল্পনা ও অর্থায়নে সিজার তাভেল্লাকে হত্যা করা হয়।

তাঁদের মতে, খুনের এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে মূল ভূমিকায় ছিলেন কাইয়ুমের ভাই মতিন। তিনিই অন্যদের ভাড়া করেছিলেন। আব্দুল মতিন ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় বেনাপোল থেকে ৪ নভেম্বর রাতে গ্রেপ্তার হন বলে জানায় পুলিশ।

 

সিজার তাভেল্লা। ফোটোঃ ফোকাস বাংলা।

আদালতে অভিযোগপত্র

সিজার তাভেল্লা হত্যায় গত সোমবার আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়। কাইয়ুম ছাড়া অন্য আসামিরা হলেন কাইয়ুমের ভাই আবদুল মতিন, তামজিদ আহমেদ ওরফে রুবেল, রাসেল চৌধুরী, মিনহাজুল আরেফিন ওরফে ভাগনে রাসেল ও শাখাওয়াত হোসেন।

এদের মধ্যে সোহেল ছাড়া অন্য সবাই বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। সাত আসামির মধ্যে তামজিদ, রাসেল চৌধুরী, মিনহাজুল ও শাখাওয়াত ইতিমধ্যেই আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এই চারজন ও মতিন কারাগারে আছেন। কাইয়ুম পলাতক রয়েছেন।

“সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে এবং তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে এই মামলার অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করা হয়েছে,” বেনারকে জানান ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের (উত্তর) উপকমিশনার শেখ নাজমুল আলম।

আসামি সোহেল নিখোঁজ

সোহেলের পরিবার অভিযোগ করে আসছে, গোয়েন্দা পুলিশ পরিচয়ে গত অক্টোবরে সোহেলকে রাজধানীর মধ্য বাড্ডা থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর তার আর কোনো সন্ধান  পাওয়া যায়নি।

পূর্ণাঙ্গ নাম-ঠিকানা না পাওয়ায় অভিযোগপত্র থেকে সোহেল আহমেদ ওরফে ভাঙারি সোহেলের নাম বাদ দেওয়ার কথা ছিল। তবে শেষ পর্যন্ত তার নামও রয়েছে অভিযোগপত্রে।

“শেষ মুহূর্তে তার পূর্ণাঙ্গ নাম-ঠিকানা পাওয়া যায়। তাই তাকে অভিযোগপত্রে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে,” বলেন নাজমুল আলম।

রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত: বিএনপি

গতকাল মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ইতালীয় নাগরিক সিজার তাভেল্লা হত্যা মামলায় ঢাকা মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক এম এ কাইয়ুমসহ সাতজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়ার প্রতিবাদ জানান। তিনি অভিযোগপত্র প্রত্যাহারের দাবি জানান।

মির্জা ফখরুল বিএনপির নেতাদের জড়িয়ে অভিযোগপত্র দেওয়ার ঘটনাকে ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও উদোর পিন্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপানো’ বলে মন্তব্য করেন।

বিএনপির মহাসচিব বলেন, “আমরা আগেও বলেছি জঙ্গিবাদ দমন দূরের কথা, বরং তাদের আড়াল করতেই তাভেল্লা হত্যাকাণ্ডসহ পরবর্তীতে সব হত্যাকাণ্ডে বিএনপির ওপর ধারাবাহিকভাবে দোষ চাপানো হয়েছে।”

“তাভেল্লা হত্যাকাণ্ডের পরপরই কোনো আইনিপ্রক্রিয়া ছাড়াই জঙ্গিবাদের সঙ্গে বিএনপিকে যুক্ত করতে এম এ কাইয়ুমকে অভিযুক্ত করে মিথ্যা মামলা করা হয়। সে মামলায় কাইয়ুমসহ সাতজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়ার ঘটনায় সরকারের প্রকৃত স্বরূপ উন্মোচিত হলো,” বলেন মির্জা ফখরুল।

তিনি আরও বলেন, গুম, খুন, গুপ্তহত্যা, অর্থনৈতিক লুটপাটের ভয়াবহতা থেকে জনদৃষ্টিকে ঝাপসা করতেই সরকার জঙ্গিবাদের সঙ্গে বিএনপিকে যুক্ত করার অপচেষ্টা করছে।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।