জঙ্গি সম্পৃক্ততার অভিযোগে কিশোর রিমান্ডে,মানবাধিকার কর্মীদের আপত্তি
2016.09.19

ওই ঘটনায় পরদিন সন্ত্রাসবিরোধী আইনে করা পুলিশের মামলায় কিশোর তাহরীমকেও আসামি করা হয়। ঢাকার শিশু আদালতে এই মামলার বিচার হবে।
গত রোববার জঙ্গি বাবার বিষয়ে তথ্য জানতে তার অষ্টম শ্রেণী পড়ুয়া ছেলেকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ড চান মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সহকারী পুলিশ কমিশনার আহসানুল করিম।
অভিযান চলাকালে আজিমপুরের ওই বাড়িতে ঢুকলে কিশোর আসামি ছুরি নিয়ে পুলিশের উপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিল বলে রিমান্ড আবেদনের শুনানিতে আদালতকে জানান পুলিশের প্রসিকিউশন বিভাগের জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার মিরাশ উদ্দিন।
শুনানি চলাকালে উপস্থিত সন্ত্রাসবিরোধী মামলায় অভিজ্ঞ আইনজীবী ফারুক আহমেদের কাছে আদালত মতামত চান। এসময় ওই আইনজীবী বলেন, আইনে শিশুকে রিমান্ডে নেওয়া নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। কিন্তু রাষ্ট্রের প্রয়োজনে ও জনস্বার্থে এ বিষয়টি বিবেচনা করা যেতে পারে।
এরপর ঢাকার একমাত্র শিশু আদালতের বিচারক রুহুল আমিন কিশোর তাহরীমকে তিন দিন পুলিশ হেফাজতে রেখে জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ দেন। তবে হাই কোর্টের নির্দেশনা মেনে সতর্কতার সঙ্গে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়। শুনানিতে কিশোরটির পক্ষে কোনো আইনজীবী অংশ নেননি।
উদ্বিগ্ন মানবাধিকারকর্মীরা
একজন কিশোরকে পুলিশের হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদ করার বিষয়টি স্পর্শকাতর উল্লেখ করে এ নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মীরা।
এ প্রসঙ্গে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক নুর খান বেনারকে বলেন, “একজন শিশুকে রিমান্ডে নেওয়া বাংলাদেশের সংবিধান ও শিশু আইন পরিপন্থি। আমরা সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের কাছ থেকে শিশুদের বিষয়ে সুচিন্তিত ও অধিকার সংশ্লিষ্ট পদক্ষেপ নেওয়ার আহবান জানাচ্ছি।”
এ প্রসঙ্গে মানবাধিকার কর্মী অ্যাডভোকেট এলিনা খান বেনারকে বলেন, “শিশু আইনে নির্দিষ্ট আদালতের পরিবর্তে একটি সাধারণ কক্ষে, আইনজীবী, পুলিশ বা আদালত সংশ্লিষ্ট সকলকে সাধারণ পোশাকে বিচার কাজ করার কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া শিশুটির পাশে পরিবারের সদস্য থাকার ব্যবস্থা রাখা; শিশু বিষয়ক পুলিশ কর্মকর্তার কাছে জবানবন্দি দেওয়ার কথাও বলা আছে।”
তিনি বলেন, “এসব বিধান রাখার কারণ হচ্ছে, বিচার কাজে যাতে শিশুর উপর মানসিক চাপ না পড়ে। তাই এসব বিষয় মেনে চলতে হবে”।
আইন মেনেই জিজ্ঞাসাবাদ হবে
কিশোর তাহরীমকে জিজ্ঞাসাবাদে এসব প্রক্রিয়া মানা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (মিডিয়া) মো. মাসুদুর রহমান বেনারকে বলেন, “আইন মেনেই এই কিশোরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।”
আজিমপুরে পুলিশের অভিযানে যে মহিলা আহত অবস্থায় গ্রেপ্তার হন, তিনি তাহরীমের মা আবেদাতুল ফাতেমা। তার আরেকটি ছেলেও পুলিশ হেফাজতে রয়েছে।
তানভীর কাদেরী বেসরকারি ডাচ–বাংলা ব্যাংকের কর্মকর্তা ছিলেন। আর ফাতেমা কাজ করতেন একটি আন্তর্জাতিক সংস্থায়। পুলিশ বলছে, দুই বছর আগে সৌদি আরব থেকে দেশে ফিরে তারা জঙ্গি তৎপরতায় জড়িয়ে পড়েন।
রাজীব গান্ধীকে খুঁজছে পুলিশ
এদিকে গুলশান হামলাসহ সাম্প্রতিক জঙ্গি কর্মকান্ডে আরও একজনের সংশ্লিষ্টতা পেয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। রাজীব গান্ধী ছদ্মনামে এই জঙ্গি গুলশান ও শোলাকিয়া হামলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল বলে দাবি পুলিশের।
এসব জঙ্গি হামলার অর্থ বিদেশ থেকে এসেছে বলে জানায় পুলিশ। হামলায় ব্যবহৃত অস্ত্র সম্পর্কে পুলিশ তথ্য পেয়েছে।
সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেন, ওই ব্যক্তি রাজীব গান্ধী ওরফে সুভাষ গান্ধী ওরফে গান্ধী নামে নিষিদ্ধ জঙ্গি দল জেএমবির উত্তরাঞ্চলীয় কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের কার্যালয়ে পুলিশের জঙ্গি দমন অভিযানের অগ্রগতির তথ্য তুলে ধরতে এ সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করা হয়।
ওই ব্যক্তির প্রকৃত নাম জানা যায়নি উল্লেখ করে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেন, “গুলশান হামলার আগে দুজন এবং শোলাকিয়ার হামলার আগে একজন সন্ত্রাসীকে আগেই প্রশিক্ষণ দিয়ে উত্তরবঙ্গ থেকে পাঠিয়েছিল সে।”
তিনি বলেন, “তদন্তকারীদের ধারণা, এই নব্য জেএমবি নেতা দেশেই রয়েছেন। তাকে ধরতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।”
রিপন ও খালিদ নামে আরো দুই জঙ্গির তথ্য পাওয়া গেছে জানিয়ে মনিরুল ইসলাম জানান, “গত এপ্রিলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এএফএম রেজাউল করিম সিদ্দিকী হত্যাকাণ্ডের পর এরা ভারতে চলে গিয়েছিল। এরপর তারা দেশে ফিরেছে এমন তথ্য আমাদের কাছে নেই।”
কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের এই কর্মকর্তা বলেন, “গুলশান ও শোলাকিয়া হামলার জন্য ১৪ লাখ টাকা গ্রহণ করে জঙ্গিরা, যা হুন্ডির মাধ্যমে আসে। ওই হামলার অস্ত্রও আসে ভারত হয়ে।” তিনি বলেন," অস্ত্র ও অর্থের সঙ্গে জড়িতদেরও খুঁজে বের করা হবে"।