তুরস্কে ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশ ও তুরস্কের স্নায়ুযুদ্ধ শিথিল
2016.08.16

যুদ্ধাপরাধের বিচার ইস্যুকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ ও তুরস্কের মধ্যে স্নায়ুযুদ্ধ কিছুটা শিথিল হওয়ার আভাস পাওয়া গেছে। শীর্ষ এক যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসিকে কেন্দ্র করে নিজ দেশের রাষ্ট্রদূতকে ঢাকা থেকে ফেরত নেওয়ার তিন মাস পরে দেশটি জানিয়েছে, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলানোর ইচ্ছে তাদের নেই।
মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকায় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে এসব কথা জানান দেশটির রাষ্ট্রদূত দেভরিম ওজতুর্ক।
তাঁর এই বক্তব্যের পর তুরস্কে ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থান পরবর্তী পরিস্থিতিতে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে মৃত্যুদণ্ডের রায় কার্যকর করা নিয়ে প্রতিবাদী তুরস্কের সুর পাল্টেছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
গত ১৫ জুলাই তুরস্কে ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থান-পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে ঢাকায় তুরস্ক দূতাবাস এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। নিজ দেশে আবারও মৃত্যুদণ্ড ফেরত আনতে চায় তুরস্ক। তবে বাংলাদেশকে মৃত্যুদণ্ড পরিহার করার পরামর্শ অব্যাহত রেখেছে দেশটি।
ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থানের সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তুরস্ক সরকারকে যেভাবে সমর্থন জানিয়েছেন, তাতে দুই দেশের সম্পর্ক আরও জোরদার হয়েছে বলেও অভিমত দেন রাষ্ট্রদূত।
অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলানোর ইচ্ছে নেই
চলতি বছরের মে মাসে যুদ্ধাপরাধের দায়ে জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামীর ফাঁসির পর এর প্রতিক্রিয়ায় সে সময় আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান। পরে বাংলাদেশের মানবতাবিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এবং এর রায় নিয়ে আলোচনার জন্য রাষ্ট্রদূত দেভরিমকে তুরস্কে ডেকে পাঠানো হয়। প্রায় তিন মাস পর সম্প্রতি রাষ্ট্রদূত ঢাকায় ফিরেছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে যুদ্ধাপরাধ ইস্যুটি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় উল্লেখ করে তুরস্কের রাষ্ট্রদূত বলেন, “বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলানোর কোনো ইচ্ছে তুরস্কের নেই। তবে তুরস্কে মৃত্যুদণ্ড বিলোপ করা হয়েছে। এই অবস্থান থেকেই বন্ধু ও ভ্রাতৃপ্রতিম দেশ হিসেবে আমরা আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি বাংলাদেশের কাছে তুলে ধরেছি।”
অন্য এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “জামায়াতে ইসলামীর প্রতি তুরস্কের কোনো রকম সহানুভূতি নেই। বাংলাদেশের সব কটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পর্ক রাখে তুরস্ক। এ ক্ষেত্রে কোনো বৈষম্য করা হয় না।”
তুরস্কের রাষ্ট্রদূতকে ডেকে পাঠানোর পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে আঙ্কারা থেকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আল্লামা সিদ্দিকীকেও আলোচনার জন্য ঢাকায় ফিরিয়ে আনে বাংলাদেশ। তাঁকেও সম্প্রতি তুরস্কে পাঠানো হয়েছে।
জামায়াতের দোসর এরদোয়ান সরকার!
তবে তুরস্কের এ ভ্রাতৃত্বসুলভ আচরণের দাবিকে প্রত্যাখ্যান করে বিশ্লেষকেরা বলছেন, যুদ্ধাপরাধ ইস্যুতে তুরস্কের প্রতিক্রিয়া জামায়াত ইসলামীর জ্ঞাতি ভাই হিসেবে।
এ প্রসঙ্গে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির বেনারকে বলেন, “তুরস্কের ক্ষমতাসীন একে পার্টি বাংলাদেশের মানবতাবিরোধী অপরাধীদের ‘মুজাহিদ’ ভাবে। জামায়াতে ইসলামী তাদের জ্ঞাতি ভাই। তাদের কাছে যুদ্ধাপরাধী জামায়াত নেতারা গণহত্যাকারী নয়, মুজাহিদিন। আর সে কারণেই তারা মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার চায় না।”
দেশটির সমালোচনা করে তিনি বলেন, “পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে মৃত্যুদণ্ড বহাল রয়েছে। তুরস্ক কি সেসব দেশকেও একইভাবে মৃত্যুদণ্ড প্রত্যাহারের আহ্বান জানায়? এমনকি পাকিস্তান কিংবা সৌদি আরবেও মৃত্যুদণ্ড বহাল রয়েছে। তাদের বিষয়ে তুরস্ক কখনো মুখ খোলেনি।”
নিখোঁজ ঢাকায় নিযুক্ত তিন তুর্কি কূটনীতিক
এদিকে তুরস্কের ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থানে জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠার পর বাংলাদেশ থেকে ঢাকায় নিযুক্ত তুরস্কের তিন কূটনীতিক পালিয়েছেন বলে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো জানায়।
এক প্রশ্নের উত্তরে তুরস্কের রাষ্ট্রদূত বলেন, “ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানের সঙ্গে বিশ্বজুড়ে তুরস্কের প্রায় তিন’শ কূটনীতিকের জড়িত থাকার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ঢাকায় তুর্কি দূতাবাসে কর্মরত তিনজনকে সন্দেহভাজন হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। এদের একজন আঙ্কারায় ফিরেছেন। তবে কূটনীতিক দম্পতি তুরস্ক গিয়ে পরে অন্য দেশে চলে গেছেন।”
দেভরিম ওজতুর্ক আরও জানান, বিশ্বের ১৬০টি দেশে তুরস্কে ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানের মদদদাতা ফেতুল্লাহ গুলেনের সমর্থক রয়েছে। বাংলাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ কিছু প্রতিষ্ঠানে তাদের উপস্থিতি আছে। বিষয়টি বাংলাদেশ সরকারকে অবহিত করা হয়েছে।”