শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ইসলামী ছাত্রী সংস্থার কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ

ঢাকা থেকে শাহরিয়ার শরীফ
2016.09.22
20160922-Women-militants1000.jpg জঙ্গি সন্দেহে সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কয়েকজন ছাত্রী ও নারী গ্রেপ্তার হয়েছেন। আগস্ট ১৬, ২০১৬।
ফোকাস বাংলা

বিশ্ববিদ্যালয় ও ফাজিল-কামিল মাদ্রাসাগুলোতে ইসলামী ছাত্রী সংস্থার কার্যক্রম বন্ধে ব্যবস্থা নিতে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন ও ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়কে নির্দেশ দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। গত মঙ্গলবার পৃথক চিঠিতে দেওয়া ওই নির্দেশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে পাঠানো শুরু হয়েছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এই সিদ্ধান্তকে অবৈধ ও অযৌক্তিক বলে দাবি করেছে জামায়াতে ইসলামীর ছাত্রী সংগঠন ইসলামী ছাত্রী সংস্থা। এ ধরনের উদ্যোগ থেকে বিরত থাকার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওই চিঠিতে বলা হয়, “সম্প্রতি ইসলামী ছাত্রী সংস্থার নামে একটি ছাত্রী সংগঠন কিছু কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রী ও সরলমনা ধর্মভীরু নারীদের জিহাদে অংশগ্রহণসহ সংবিধানের বাইরে সমাজ প্রতিষ্ঠা করা তথা দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির হীন লক্ষ্যে জিহাদি মনোভাবাপন্ন করে তোলার অপচেষ্টা করছে।”

এসব কর্মকাণ্ডের কারণে শিক্ষাঙ্গনের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হওয়াসহ অরাজক পরিস্থিতির উদ্ভব হতে পারে উল্লেখ করে অনতিবিলম্বে এ অপচেষ্টা বন্ধ করা প্রয়োজন বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।

এতে আরও বলা হয় “বর্ণিতাবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে অনুরূপ কর্মকাণ্ড যাতে না ঘটে তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।”

১৯৭৮ সালের ১৫ জুলাই প্রতিষ্ঠিত হয় ইসলামী ছাত্রী সংস্থা। ইসলামী ছাত্রশিবিরের মতোই স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা থেকে শুরু করে সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ, থানা, জেলা ও মহানগরে ছাত্রী সংস্থার কমিটি আছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এ সিদ্ধান্তের পর গতকাল সংগঠনটি থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে ছাত্রী সংস্থার সভানেত্রী ডা. শিরিন আক্তার বলেন, “ছাত্রী সংস্থা দেশের ছাত্রীসমাজের নিকট আস্থা ও নির্ভরতার প্রতীক এবং নিয়মতান্ত্রিক বৈধ সংগঠন। ১৯৭৮ সাল থেকে শুরু করে আজ অবধি এই সংগঠনটি ইসলামের আলোকে ছাত্রীসমাজের চরিত্র গঠন, দেশপ্রেম সৃষ্টি ও নাগরিক মূল্যবোধ তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।”

এতে আরও বলা হয়, “সুদীর্ঘ এই ৩৮ বছরে ছাত্রী সংস্থা কোন অন্যায়, অনৈতিক, আইন-শৃঙ্খলা বিরোধী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত ছিল না ও এখনো নেই। তাই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রী সংস্থার কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা কোনোভাবেই বৈধ ও যৌক্তিক হতে পারে না।”

বিবৃতিতে তিনি বলেন, “আজ পর্যন্ত ছাত্রী সংস্থার কোনো ছাত্রীর নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত থাকার কথা সরকার প্রমাণ করতে পারেনি।”

ছাত্রী সংস্থার সভানেত্রী বলেন, ছাত্রী সংস্থার লক্ষ্য-উদ্দেশ্য হলো—এ দেশের ছাত্রীসমাজকে আল্লাহর কোরআন ও রাসুলের সুন্নাহ অনুযায়ী গঠন করে তাদেরকে আদর্শ মুসলিম নারী হিসেবে গড়ে তোলা এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা যাতে দুনিয়ায় শান্তি ও আখিরাতে মুক্তি হাসিল করা যায়।

এই সংগঠনের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও কর্মসূচি কোনোটাই এ দেশের সংবিধান বা রাষ্ট্রীয় কোন নীতির বিরোধী নয়। তাই এই সংস্থার কাজ নিষিদ্ধ করা সম্পূর্ণ বেআইনি ও অসাংবিধানিক একটি সিদ্ধান্ত বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।

তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামী ছাত্রশিবির ও ছাত্রী সংস্থা আগে থেকেই নিষিদ্ধ রয়েছে। সেখানকার শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে ওই দুটি সংগঠনের কার্যক্রম পরিচালনা করতে দেয় না।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বেনারকে বলেন, “এই সংগঠনগুলোর সঙ্গে কারও সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পেলে তাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থায়ী বহিষ্কার করা হয়ে থাকে।”

উপাচার্য বলেন, “যেহেতু সংগঠনটি আগে থেকেই নিষিদ্ধ তাই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এই সিদ্ধান্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে আলাদা কোনো মাত্রা যোগ করবে না। কর্তৃপক্ষ তার আগের কার্যক্রমই অব্যাহত রাখবে।”

উপাচার্য মনে করেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয় সঠিক সিদ্ধান্তই নিয়েছে। তবে শুধু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নয়, ছাত্র শিবির ছাত্রী সংস্থাসহ যেকোনো সংগঠনেরই জঙ্গিবাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা পেলে তাদের কার্যক্রম সারা দেশেই বন্ধ করা উচিত।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বাংলাদেশ ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মিছবাহুর রহমান চৌধুরী বেনারকে বলেন, “জামায়াতে ইসলামের মতাদর্শ আমাদের দৃষ্টিতে দেশবিরোধী এবং ইসলাম তাদের কর্মকাণ্ড সমর্থন করে না। বিতর্কিত মতাদর্শ প্রতিষ্ঠার জন্যই ছাত্রী সংস্থা কাজ করে।”

“ওরা ধর্মের নাম ব্যবহার করে মহিলাদের জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ করে। তাই শুধু নোটিশ জারিই নয়, এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে তদারকি করতে হবে। একই সঙ্গে তাদেরকে সামাজিকভাবে বয়কটও করতে হবে,” জানান মিছবাহুর রহমান।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।