আবারও সংগঠিত আনসার উল্লাহ বাংলা টিম, এবার মিয়ানমার যাওয়ার প্রস্তুতি
2017.02.02
নতুনভাবে সংগঠিত হয়ে টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে মিয়ানমার যাওয়ার চেষ্টা করছে আনসার উল্লাহ বাংলা টিম (এবিটি)।
ঢাকার বংশালে পুলিশের ওপর এসিড নিক্ষেপের ঘটনায় গ্রেফতার এবিটি সদস্য যুবায়েরকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এই তথ্য জানতে পেরেছেন পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইম বিভাগের কর্মকর্তারা।
এর আগে হামলাকারী যুবকেরা আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের (এবিটি) সদস্য বলে নিশ্চিত হয়েছে পুলিশ। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ হামলাকারীদের একজন যুবায়েরকে পায়ে গুলি করে গ্রেপ্তার করে।
বংশাল থানার উপপরিদর্শক আলী রেজা বেনারকে বলেন, “প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার হওয়া যুবায়ের নিজেকে আনসার উল্লাহ বাংলা টিমের সদস্য বলে পরিচয় দেয়।”
গত মঙ্গলবার দিবাগত রাত সাড়ে ৩টার দিকে ওই হামলায় পুলিশের দুই সদস্য আহত হন। আহত দুই পুলিশ সদস্যের একজন কনস্টেবল আবদুস সালাম ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের হাই ডিপেন্ডেন্সি ইউনিটে চিকিৎসাধীন। অপর আহত পুলিশ সদস্য নুরুজ্জামান এখন মিটফোর্ড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।
“তিনজন হামলাকারীর ভেতর একজনকে আমরা গ্রেপ্তার করতে পেরেছি। তার নাম যুবায়ের। তার কাছ থেকে অ্যাসিড ও গান পাউডার উদ্ধার করা হয়েছে।” বেনারকে জানান বংশাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নূরে আলম সিদ্দিকী।
ঘটনার প্রাথমিক তদন্তে বংশাল থানার কর্মকর্তারা যুক্ত থাকলেও এখন তদন্তে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইম যুক্ত হয়েছে।
মিয়ানমার যাওয়ার জন্য সংগঠিত হচ্ছে এবিটি
পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইম বিভাগের কর্মকর্তারা যুবায়েরকে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশের জঙ্গিগোষ্ঠীগুলো বরাবরই মিয়ানমারের রাখাইনে মুসলিমদের ওপর নির্যাতনের বিপক্ষে। তাদের কেউ কেউ টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে মিয়ানমার যাওয়ার চেষ্টা করেছে। এবার আনসারুল্লাহ বাংলা টিমও এই প্রক্রিয়ায় যুক্ত হয়েছে।
“যুবায়ের জানিয়েছে, গান পাউডার ও অ্যাসিড দলের অন্য সদস্যদের কাছে পৌঁছে দিতে রাতের বেলা সে ও তার বন্ধুরা বেরিয়েছিল। তারা টেকনাফে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল বলেও জানিয়েছে,” জানান নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা।
কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইমের সহকারী উপকমিশনার সাইফুল ইসলাম বেনারকে বলেন, রাখাইন রাজ্যে মুসলিমদের ওপর অত্যাচারের কাহিনি ব্যাপকভাবে বাংলাদেশে প্রচার হয়েছে। অনেকেই তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল।
“তথ্য সংগ্রহের কাজ চলছে। আমরা নিখোঁজ দুজনসহ পুরো দলটিকে ধরার চেষ্টা করছি,” জানান সাইফুল।
যেভাবে ধরা পড়ল
বংশাল থানার উপপরিদর্শক মনোয়ার হোসেন বেনারকে বলেন, গত মঙ্গলবার দিবাগত রাত সাড়ে তিনটার তাঁদের দুজন কর্মকর্তা পুরান ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে টহল দিচ্ছিলেন। হঠাৎ একটি মোটরসাইকেলের গতিবিধি সন্দেহজনক মনে হওয়ায় পুলিশ চ্যালেঞ্জ করে।
তিনি জানান, তখন মোটরসাইকেল চালক তার হাতে থাকা অ্যাসিড পুলিশের গায়ে ছুড়ে দেয়। এতে কনস্টেবল আবদুস সালামের শরীরের নিচের অংশ পুড়ে যায়। সঙ্গে থাকা অপর পুলিশ উপপরিদর্শক নুরুজ্জামান মোটরসাইকেলে করে দ্রুত ছুটতে থাকা মোটরসাইকেলটি তাড়া করেন। ধ্বস্তাধ্বস্তিতে নুরুজ্জামানের মাথা ফেটে যায়। তবে তিনি একজনকে ধরতে সমর্থ হন। অপর দুজন পালিয়ে যায়।
কে এই যুবায়ের?
যুবায়েরের মা জাকিয়া বেগম বেনারকে বলেন, যুবায়ের হাটহাজারি মাদ্রাসা থেকে লেখাপড়া শেষ করে সম্প্রতি চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় ফিরেছেন। তবে তিনি মুফতি হতে চান বলে আরও লেখাপড়া করার ইচ্ছা পরিবারকে জানিয়েছিলেন। কোথায় লেখাপড়া করছিলেন সে সম্পর্কে জাকিয়া বেগম কিছু জানাতে পারেননি।
“বুধবার ছেলেকে হাসপাতালে দেখতে গিয়েছিলাম। পায়ে গুলি লেগেছে। সেখানে গিয়ে শুনি সে জঙ্গি হয়ে গেছে। টেকনাফ যাওয়ার জন্য দল গোছাচ্ছিল,” জানান জাকিয়া।
এবিটি একাধিক সেল থেকে পরিচালিত
গত ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজানে হামলার পর থেকে আপাত নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে নিষিদ্ধ জঙ্গিগোষ্ঠী এবিটি। এই ঘটনার মাধ্যমে নতুন করে সংগঠনটির আত্মপ্রকাশের তথ্য পেল পুলিশ। পাশাপাশি, সীমান্ত পাড়ি দিয়ে তাদের মিয়ানমার যাবার পরিকল্পনাও জানা গেলো।
এ প্রসঙ্গে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক নূর খান লিটন বেনারকে বলেন, জঙ্গিবাদ বিরোধী অভিযানগুলো সাময়িক স্বস্তি দিলেও, দলগুলো যে একেবারে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়নি—এই ঘটনা তাই প্রমাণ করে।
“আনসারুল্লাহ বাংলা টিম কোনো একটি কেন্দ্র থেকে পরিচালিত হয় না। এর একাধিক সেল রয়েছে। কোনো একটি সেল সক্রিয় থাকলেই তারা কর্মী সংগ্রহ করতে শুরু করে,” জানান নূর খান।