বাস চাপায় হাত হারানো ছাত্র কেন কোটি টাকা পাবে না: হাই কোর্ট

জেসমিন পাপড়ি
2018.04.04
ঢাকা
ঢাকার কাওরানবাজারে দুর্ঘটনাকবলিত একটি যাত্রীবাহী বাস। ঢাকার কাওরানবাজারে দুর্ঘটনাকবলিত একটি যাত্রীবাহী বাস। ৩ জুন ২০১৫।
মনিরুল আলম/বেনারনিউজ

রাজধানী ঢাকায় দুই বাসের চাপে হাত হারানো কলেজছাত্র রাজীব হোসেনকে এক কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না—তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছে বাংলাদেশের উচ্চ আদালত।

একই সঙ্গে রাজীবের চিকিৎসা ব্যয় ওই দুই বাসের মালিক বিআরটিসি এবং স্বজন পরিবহন কর্তৃপক্ষকে বহন করারও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

বুধবার এক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি শেষে রুলসহ এ আদেশ দেন বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী ও বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হকের হাই কোর্ট বেঞ্চ।

গত মঙ্গলবার ঢাকার কারওয়ানবাজারে কলেজছাত্র রাজীবের একটি হাত দুই বাসের চাপে পিষ্ট হেয় বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। গতকাল বুধবার সংবাদমাধ্যমে দুই বাসের চাপে ঝুলতে থাকা রাজীবের হাতের ছবি প্রকাশ হলে তা মানবিক আবেদন তৈরি করে।

দুর্ঘটনায় হাত হারানো রাজীব হোসেন।
দুর্ঘটনায় হাত হারানো রাজীব হোসেন।
বেনারনিউজ

বুধবার সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত দুই বাসের চাপে ঝুলতে থাকা রাজীবের হাতের ছবি ও প্রকাশিত প্রতিবেদন যুক্ত করে এদিন উচ্চ আদালতে রিট আবেদন করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী রুহুল কুদ্দুস কাজল। তিনি নিজে আদালতে শুনানিও করেন। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে অংশ নেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অরবিন্দ কুমার রায়।

আদালতের দেওয়া রুলে যাত্রীদের চলাচলে বিদ্যমান আইন কঠোরভাবে কার্যকরের নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না, ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে প্রয়োজনে আইন সংশোধন ও নতুন করে বিধিমালা প্রণয়নের নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না—তা জানতে চাওয়া হয়েছে।

স্বরাষ্ট্রসচিব, সড়ক পরিবহন সচিব, ডিএমপি কমিশনার, পুলিশের মহাপরিদর্শকসহ আট বিবাদীকে চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

হাত হারানো রাজীব রাজধানীর মহাখালীর সরকারি তিতুমীর কলেজের স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। যাত্রাবাড়ীর একটি মেসে বসবাস করা রাজীব বিআরটিসির একটি দোতলা বাসের পেছনের ফটকে দাঁড়িয়ে মহাখালীর কলেজে যাচ্ছিলেন। সার্ক ফোয়ারার কাছে সিগনালে থেমে থাকা বাসটিতে দাঁড়ানো অবস্থায় তার হাতটি সামান্য বাইরে বেরিয়েছিল।

এমন সময় হঠাৎই পেছন থেকে স্বজন পরিবহনের একটি বাস দ্রুতগতিতে এসে বিআরটিসির বাসটিকে ওভারটেক করার জন্য বাঁ দিক গা ঘেঁষে পড়ে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই দুই বাসের চাপে রাজীবের ডান হাত শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। হাতের বিচ্ছিন্ন অংশটি বাসের সঙ্গে লেগে ঝুলে ছিল।

তাৎক্ষণিকভাবে কয়েকজন পথচারী দ্রুত রাজীবকে পান্থপথের শমরিতা হাসপাতালে নিয়ে গেলেও বিচ্ছিন্ন সে হাতটি রাজীবের শরীরে আর জুড়ে দিতে পারেননি চিকিৎসকেরা।

রুহুল কুদ্দুস কাজল বেনারকে বলেন, “রাজীবের সার্বিক চিকিৎসাসহ তার হাত রিপ্লেস করার সুযোগ থাকলে সেসব ব্যয়ভারও দুই বাস কর্তৃপক্ষকে বহন করার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।”

দুই বাসের বেপরোয়া নিষ্ঠুরতার এই ঘটনার প্রকাশিত খবর ও ছবি প্রকাশ জনস্বার্থে আদালতের নজরে আনেন বলে জানান তিনি।

অর্থাভাবে ঢাকা মেডিকেলে রাজীব

হাত হারানো রাজীবকে শমরিতা হাসপাতাল থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।

বুধবার বিকেলে শমরিতা হাসপাতালের একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে রাজীবকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান তার স্বজনেররা।

“ঘটনার পরপরই রাজীবকে শমরিতা হাসপাতালে নেওয়া হয়। কিন্তু ব্যয়বহুল ওই হাসপাতালে বুধবার দুপুর পর্যন্ত ওষুধপত্র ছাড়াই হাসপাতালের বিল এসেছে ১ লাখ ২৬ হাজার টাকা। আমরা মাত্র ৩৭ হাজার টাকা দিতে পেরেছি,” বেনারকে বলেন রাজীবের মামা মোহাম্মদ জাহিদ।

“বাকি টাকা পরে দেবো—হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে এমন লিখিত আবেদনের প্রেক্ষিতে ছাড়পত্র নিয়ে রাজীবকে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে এসেছি। কারণ এখানে খরচ কম,” বলেন তিনি।

জাহিদ জানান, রাজীবের বাবা-মা কেউ নেই। তিন ভাইয়ের মধ্যে সবার বড় রাজীব পড়ালেখার পাশাপাশি একটি প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার টাইপ করে নিজের এবং ছোট দুই ভাইয়ের খরচ চালাতেন।

চিকিৎসকদের বরাতে রাজীবের খালা জাহানারা বেগম বেনারকে জানান, রাজীবের শরীর থেকে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে। তার অবস্থা খানিকটা স্থিতিশীল হলেও সে ঝুঁকিমুক্ত নয়। এ ছাড়া সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করাও অনেক বড় চ্যালেঞ্জ।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের দায়িত্বরত চিকিৎসক বেনারকে জানান রাজীবের হাত তো আর ফেরত পাওয়া যাবে না। কিন্তু এখন যেন অন্য কোনো জটিলতা সৃষ্টি না হয় সেলক্ষ্য নিয়ে আমরা কাজ করব। তবে এজন্য নিউরোসার্জারি, মেডিসিন এবং অর্থোপেডিকস বিভাগ মিলে একসাথে কাজ করতে হবে।

দুই বাসের চালক গ্রেপ্তার

এদিকে রাজীব হোসেনের হাত হারানোর ঘটনায় দুই বাসচালককে গ্রেপ্তার করেছে শাহবাগ থানা-পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন বিআরটিসি বাসের চালক ওয়াহিদ ও স্বজন বাসের চালক খোরশেদ।

তাদের আটকের কথা বেনারকে নিশ্চিত করেন শাহবাগ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) জাফর আলী।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।